সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি: বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার রূপকার বঙ্গবন্ধুর আদর্শের যোগ্য সহচর অনন্যসাধারন ব্যক্তিত্ব, তুখোড় রাজনীতিবিদ , বাংলার মাটি ও মানুষের নেতা কাজীপুর-সিরাজগঞ্জ-পাবনার জনগনের কাছে ক্যাপটেন সাব নামে যিনি এক বাক্যে পরিচিত তিনি এম মনসুর আলী। মনে-প্রানে সমাজদরদী বাঙালি জাতীয় চেতনার ধারক ও স্বপ্নদ্রষ্টাদের পুরোভাগের এই নেতা জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত মানুষের কল্যানে কাজ করে গেছেন।
স্বাধীকার থেকে স্বাধীনতার লাল সূর্যকে ছিনিয়ে আনতে এই প্রবাদ পুরুষ নিজের জীবনকে বিলিয়ে দিয়ে যোগ্য নেতৃত্বের এক অনুপম উদাহরন আমাদের মাঝে রেখে গেছেন। সমাজের উঁচু স্তরের মানুষ যেমন তার সান্নিধ্য একান্ত আপনজন হিসেবে পেয়েছেন তেমনি সাধারন মানুষও ছিল তার চোখের মনি।’
তৎকালিন পাবনা জেলার সিরাজগঞ্জ মহকুমার কুড়িপাড়ার পাশেই বরইতলা গ্রামের মাতুলালয়ে ১৯১৯ সালের ১৬ জানুয়ারী এম মনসুর আলীর জন্ম। তার কৈশোর ও শৈশব কেটেছে প্রমত্তা যমুনার ভাঙ্গা-গড়ার ছবি দেখে। কাশবনের সাদা আর উর্বর পলির সবুজ-সোনালি ফসলের হাসি তাকে মোহবিষ্ট করে রেখেছে। এখানকার মাটি ও মানুষের সহজ-সরল জীবন-যাপন ,গ্রমীণ পরিবেশের আবহ তাকে সাধারন মানুষের প্রতি শ্রদ্ধাশীল করে তুলেছে। তেমনি পড়ালেখার জন্য শহরে গিয়ে আপন করে নিয়েছেন তাদেরও। এই দুই সত্তা তাকে গণমানুষের নেতা হতে সহায়ক হয়েছে। তিনি সিরাজগঞ্জ বিএল স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাশ করে পাবনা এডওয়ার্ড কলেজে আইএ ভর্তি হন। সেখানে পড়া অবস্থায় পদ্মার অপরূপ সৌন্দর্য তাকে মুগ্ধ করে । আর এই মুগ্ধতার পরিমাণ এতই বেশি ছিল যে, শেষ পর্যন্ত কোলকাতা ইসলামিয়া কলেজ থেকে বিএ এবং আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে এম এ ডিগ্রি লাভের পরেও তিনি ব্যক্তিগত জীবন শুরু করেন পাবনাতেই।
যমুনা-পদ্মার শীতল জলহাওয়ায় গড়ে ওঠা বুদ্ধিদীপ্ত ক্যাপটেন মনসুর পাবনা কোর্টে আইনজীবি হিসেবে ব্যক্তিগত জীবন শুরু করেন। এরপর তিনবার বারের সভাপতি নির্বাচিত হয়ে বুঝিয়েছেন মানুষ তাকে কত ভালোবাসে। আর মানুষের ভালোবাসা কিভাবে শত কণায় ফিরিয়ে দেয়া যায় সে বিষয়েও মনসুর ছিলেন সচেতন। তারই ফলশ্রুতিতে ১৯৪৬ থেকে ৫০ সাল পর্যন্ত তিনি পাবনা জেলা মুসলিম লীগের সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। এই সময়ে তিনি লীগের নিজস্ব গার্ড বাহিনীর ক্যাপটেন ছিলেন। সেই ক্যাপটেন পদবীই শেষ পর্যন্ত তার নামের সঙ্গে নিবিড়ভাবে জড়িয়ে গেছে।’ ১৯৫১ সালে ক্যাপটেন মনসুর আলী আওয়ামী লীগে যোগ দেন। ছুটে বেড়ান সিরাজগঞ্জ-পাবনার মাটি ও মানুষের কাছে। লাভ করেন সবার শ্রদ্ধা-ভালোবাসা। ১৯৫৩ থেকে ১৯৬৬ সাল এবং ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ছিলেন। বঙ্গবন্ধুর যোগ্য সহচর হিসেবে পালন করেছেন অর্থমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব। স্বাধীনতার পতাকাকে ছিনিয়ে আনতে রাখেন বলিষ্ঠ ভূমিকা। ১৯৫২ সালের ফেব্রুয়ারি মাস। ঢাকার রাজপথে রাষ্ট্রভাষার দাবি তখন জমে উঠছে। ক্যাপটেন মনসুরের নেতৃত্বে পাবনা জেলায় সে আন্দোলন দানা বেধে ওঠে। পাকিস্তান সরকার তখন তাকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠায়। ১৯৫৪ সালে জনগণের কথা বলার সুযোগের আশায় যুক্তফ্রন্টের টিকিটে পূর্ববঙ্গ সভার সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৫৬ সালে কোয়ালিশন সরকারের পর্যায়ক্রমে সংসদ বিষয়ক মন্ত্রি ,খাদ্য-কৃষি ,বানিজ্য-শ্রম ও শিল্পমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৫৮ সালে সামরিক আইন জারি হলে তিনি গ্রেফতার হন। গণমানুষের ক্যাপটেনকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে ফুঁসে ওঠে পাবনার আপামর জনগণ। মিছিল-মিটিংয়ে রাজপথ প্রকম্পিত হতে থাকলে ১৯৫৯ সালের শেষ দিকে তিনি ছাড়া পান। এরপর ৬ দফা আন্দোলনে তার ছিল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। ১৯৬৮ সালের তিনি আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন। এরপর উনসত্তরের গণঅভ্যূথানে তিনি বিশেষ ভূমিকা পালন করেন। সত্তরের নির্বাচনে তিনি পাবনা-০১ আসন থেকে প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। অসহযোগ আন্দোলনে তিনি বঙ্গবন্ধুর দক্ষিনহস্ত হিসেবে কাজ করেছেন। তারই নেতৃত্বে পাবনার ছাত্র-জনতা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে মুক্তিযুদ্ধ করে। ১৯৭১ সালে ১৭ এপ্রিল মুজিব নগরে সরকার গঠিত হলে তিনি সেখানে অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। দেশ স্বাধীন হবার পর বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রীসভায় তিনি প্রথমে যোগাযোগ মন্ত্রী ও পরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হন। ১৯৭৩ সালের নির্বাচনেও তিনি জয়ী হন। এরপর রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার চালু হলে তিনি প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৫ সালে তিনি বাকশালের সেক্রেটারি জেনারেল পদ পান। শুরু হয় চক্রান্ত। মোস্তাক গংদের অপতৎপরতা আর বিশ্বাসঘাতকতায় বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলায় নেমে আসে ঘোর অমানিশা। ৭৫ এর ১৫ আগষ্ট সপরিবারে নিহত হন বঙ্গবন্ধু। গ্রেফতার হন জাতীয় চার নেতার অন্যতম নেতা ক্যাপটেন এম মনসুর আলী। খন্দকার মোস্তাক প্রেসিডেন্ট হয়ে নজর দেন মনসুর আলীর দিকে। কিন্তু তিনি ছিলেন অটল। এরপর ৩ নভেম্বর জেলখানায় ঢুকে খুনিরা অন্য নেতাদের সাথে মনসুর আলীকে গুলি করে ও বেয়নেট চার্জ করে হত্যা করে। এর পরের ইতিহাস বড়ই করুণ। মোস্তাকের মসনদ ভেঙ্গে যায়। ৭ নভেম্বর ঘটে আরেকটি দুঃজনক ঘটনা। এরপর এদেশের স্বাধীনতা পাগল জনগণ ২০০৮ সাল থেকে একটানা বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রেখেছে।
ক্যাপটেনের যোগ্য উত্তরসূরি সাবেক সফল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম আমৃত্যু কাজিপুরকে উন্নয়নের মহাসড়কে রেখে গেছেন। এরপর থেকে নাসিম তনয় প্রকৌশলী তানভীর শাকিল জয় এখন কাজিপুরের উন্নয়ন রাজনীতির নেতৃত্বে আছেন। তাঁর গতিশীল নেতৃত্বে কাজিপুরবাসি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে এখন জননেত্রী মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার পথে এগিয়ে চলছে।
মনসুর আলী একসময় কাজিপুরের নাম শুনেই যেমন করে চাকরি দিয়েছেন তেমনি অনেক স্কুল-কলেজ- মাদ্রাসা করে চাকুরির সংস্থান করেছেন মোহাম্মদ নাসিম। আর এখন এই ধারা আগামীর পথে চলমান রেখে কাজিপুরবাসীর মনের মণিকোঠায় স্থান করে নিয়েছেন প্রকৌশলী তানভীর শাকিল জয়।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেশের মধ্যে সেরাদের অন্যতম তিনি। এটাই প্রমাণ করে কাজিপুরবাসীর স্নেহ ভালোবাসায় কতটা ঋদ্ধ একটি নাম তানভীর শাকিল জয়। এ যেন জয় ই জয় করে নিয়েছেন কাজিপুরবাসীর যমুনার মতো বিশাল হৃদয়। সেখানে একটি নাম প্রিয় জয় সাহেব।