October 7, 2024 - 8:21 pm
তথ‌্য অ‌ধিদপ্ত‌রের নিবন্ধন নম্বরঃ ৭৭
Homeসম্পাদকীয়শুরু হলো পবিত্র মাহে রমজান

শুরু হলো পবিত্র মাহে রমজান

spot_img

আজ পবিত্র মাহে রমজান। এই মাস অফুরন্ত রহমত, বরকত, কল্যাণ ও মঙ্গলপূর্ণ মাস। জাগতিক লোভ-লালসা, হিংসা-বিদ্বেষ, প্রবৃত্তির অনুসরণ ইত্যাদি মানবিক দুর্বলতা থেকে দূরে থেকে আত্মসংশোধনের মাধ্যমে খোদায়ী গুণাবলি অর্জনের অবারিত সুযোগ এনে দেয় পবিত্র এই মাহে রমজান। ইসলামের মৌলিক পাঁচটি ভিত্তির অন্যতম একটি হলো রোজা। ধনী-গরিব নির্বিশেষে সব বুদ্ধিমান সাবালক মুসলিম নর-নারীর ওপর রোজা ফরজ।

রোজার ইতিহাস বহু প্রাচীন। মুসলমানদের পূর্বেও অন্যান্য ধর্মে রোজার বিধান চালু ছিল। যেমন আল্লাহ তাআলা কোরআনুল কারিমে ইরশাদ করেন হে ইমানদারগণ! তোমাদের উপর রোজা ফরজ করা হয়েছে। যেমন তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর ফরজ করা হয়ে ছিল। নিঃসন্দেহে তোমরা (এ রোজার মাধ্যমে) মুত্তাকি (খোদাভিরু) হতে পারবে। (সুরা বাকারা- ১৮৩)।

আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের উদ্দেশে ইবাদতের নিয়তে সুবহে সাদিক (সেহরির শেষ সময় ও ফজরের ওয়াক্ত শুরু হওয়ার সময়) থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার, সহবাস ও রোজা ভঙ্গকারী যাবতীয় কাজ থেকে বিরত থাকা। সাধাররণভাবে যেকোনো রোজাই অত্যন্ত পুণ্য ও সওয়াবের কাজ। এ প্রসঙ্গে অনেক হাদিস বর্ণিত হয়েছে। এক হাদিসে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন যে আল্লাহর রাস্তায় একদিন রোজা রাখবে আল্লাহ তা’আলা সেই দিনের পরিবর্তে তার চেহারাকে জাহান্নাম থেকে সত্তর বছরের দূরত্বে সরিয়ে দেবেন। (বুখারি ও মুসলিম)।

রমজান হলো কোরআনের মাস। এ মাসে হজরত জিব্রাঈল (আ.) রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে পূর্ণ কোরআন উপস্থাপন করতেন। সাহাবায়ে কেরাম রমজান মাসে কোরআন নিয়ে ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়তেন। অনেক সাহাবী রমজানের প্র্রতিদিন কোরআন খতম করতেন। বহু পূর্বসুরি রমজান মাসে প্রতিতিন দিনে কোরআন খতম করতেন। তাই কোরআন তেলাওয়াতে বিশেষভাবে যত নেওয়া উচিত।

হজরত সালমান (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন যে রমজান মাসে কোনো রোজাদারের ইফতারের ব্যবস্থা করবে তবে তার পাপ মোচন ও জাহান্নাম থেকে মুক্তির কারণ হবে এবং রোযাদারের মূল প্রতিদানের কোনো অংশ কমানো ব্যতিরেকে সে রোজাদারের সমান প্রতিদান পাবে। সাহাবাগণ বলে ওঠলেন ইয়ারাসুলুল্লাহ! ইফতার করানোর মতো সামর্থ্যতো আমাদের সবার নেই!! তখন রাসুল সাল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন যারা একটুখানি দুধ বা একটি খেজুর বা এক ঢোক পানি দিয়ে হলেও কোনো রোজাদারকে ইফতার করাবে আল্লাহ তাআলা তাদেরকেও এই সাওয়াব দেবেন। (ইবনে খুযাইমা)।

রমজান মাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্টম-িত আমল হলো শেষ দশ দিন ইতিকাফ থাকা। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রতি বছর রমজানের শেষ দশ দিন ইতিকাফ থাকতেন। তবে তার ইন্তিকালের বছর তিনি বিশ দিন ইতিকাফ ছিলেন। সুতরাং ইতিকাফ যেকোনো সময় থেকে পারে। কিন্তু অধিক তাৎপর্যপূর্ণ ওগুরুত্ববহ হলো রমজানের শেষ দশ দিন ইতিকাফ থাকা। যাতে লাইলাতুল কদর লাভের সৌভাগ্য হয়।

রমজান মাসের আরেক নেয়ামত হলো লাইলাতুল কদর। রমজানের শেষ দশ দিনের যেকোনো বিজোড় রাত লাইলাতুল কদর হতে পারে। তবে অধিকাংশ উলামায়ে কেরামের মতে ২৭তম রাত (উল্লেখ্য, আরবি মাস শুরু হয় মাগরিবের আজানের পর পর তাই ২৭তম রাত্রি বলা হয়েছে ২৭ রমজানের আগের রাত্রী ২৭তম রাত) লাইলাতুল কদর হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। লাইলাতুল ক্বদরের গুরুত্ব ও মর্যাদা সম্বন্ধে আল্লাহ তাআলা বলেন- অবশ্যই আমি এ কুরআনকে লাইলাতুল ক্বদরে অবতীর্ণ করেছি। আপনি (হে নবী) কি জানেন- লাইলাতুল ক্বদর কি? তা হচ্ছে এমন এক রাত যা হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম। (সুরা আল-ক্বদর)।

সদকাতুল ফিতর রমজান মাসে দিতে হয় এমন একটি অনুদান। যাতে মুসলিম সমাজের অভাবী ব্যক্তিরাও যেন স্বাচ্ছন্দে ঈদ উদযাপন করতে পারে। ঈদের নামাযের পূর্বেই এই সদকা আদায় করতে হয়। সাহাবায়ে কেরাম ঈদের বেশ কয়েক দিন পূর্বে অভাবীদের কাছে এ সদকা পৌছে দিতেন। যাতে তারা ঈদের জামা-কাপড় এবং বিভিন্ন খাদ্য সামগ্রী কেনাকাটা করে খুশি মনে ঈদ উদযাপন করতে পারে।

রমজানে সংযম ও আত্মত্যাগের অনুশীলন এবং সেই সাথে ইসলামভিত্তিক ন্যায়-নিষ্ঠা, সত্য ও সততা প্রতিষ্ঠার দৃঢ় প্রত্যয় গ্রহণ প্রয়োজন। ন্যায়-নিষ্ঠা ও ইনসাফের প্রতিষ্ঠার জন্যে ত্যাগ-তিতিক্ষা বরণ, ইতিহাসের ধারাবাহিকতায় প্রমাণিত, শাশ্বত ও জীবন্ত। বাঙ্গালী মননে চিরায়ত ইসলামী মূল্যবোধ, ধ্যান-ধারণা, চরিত্র, ধর্ম ও আদর্শ রক্ষা এবং সর্বগ্রাসী অপরাধ প্রবণতা রোধের অনুশীলনের চেতনা জোরদার করার দারুণ সুযোগ আসে এ মাসে।
পরম করুণাময় অতি দয়ালু আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের সকাশে সকাতর আর্তি তিনি যেন আমাদের সকলকে মাহে রমজানের পবিত্রতা রক্ষা করার তৌফিক দান করেন এবং তার অফুরান অনুকম্পা ও করুণার বারিধারায় আমাদের সিক্ত করেন।

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন
spot_img

সর্বশেষ সংবাদ