নিজস্ব প্রতিবেদক : টাকা দিলে মিলছে, না দিলে বিঘ্নিত হচ্ছে নাগরিক সেবা। এমন ঘটনা ঘটেছে মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলার সায়েস্তা ইউনিয়ন পরিষদে। এমন অভিযোগ উঠেছে ঘটনার মূল নায়ক ওই ইউনিয়ন পরিষদের সচিব (প্রশাসনিক কর্মকর্তা) মো: মঞ্জুরুল হক ভুইঁয়ার বিরুদ্ধে। তার হয়রানির শিকার হচ্ছেন ইউপি সদস্যসহ ইউনিয়ন পরিষদে সেবা নিতে আসা সাধারণ নাগরিকেরা।
রবিবার (২৬ জানুয়ারি) ওই ইউনিয়নের ভুক্তভোগী নাগরিকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ইউপি সচিব মনজুরুল হক ভূঁইয়া চেয়ারম্যানের অনুপস্থিতিতে নিজের ইচ্ছামত স্বেচ্ছাচারিতা করছেন। টাকা দিলে মিলে সব সনদ, না দিলে ভুক্তভোগীদের ঘুরতে হয় মাসের পর মাস।
সাহরাইল মুন্সিপাড়া গ্রামের সাইদ আলীর স্ত্রী শ্যামলা বেগম অভিযোগ করে বলেন, আমাদের পরিবারের ৪ জনের মৃত্যু সনদ আনতে গিয়ে সচিবকে ৪ হাজার টাকা দিতে হয়েছে। এর আগে টাকা না দেওয়ায় তিন মাস ইউনিয়ন পরিষদে ঘুরতে হয়েছে। পরে বাধ্য হয়ে টাকা দিতে হয়।
চরকানাইনগর গ্রামের করিম বিশ্বাস বলেন, মেয়ের জন্ম নিবন্ধনের জন্য আমাকে ৩ বছর ঘুরতে হয়েছে। পরে চেয়ারম্যান কে বলে আমি ওই সনদ চলতি বছর পেয়েছি। নীলটেক গ্রামের আমির হোসেন বলেন,আমার স্ত্রীর গর্ভকালীন ভাতার জন্য জনৈক রবিউলের মাধ্যমে সচিবকে প্রায় ৫ হাজার টাকা দেই । বয়স একমাস কম হওয়া সত্ত্বেও আমার কাজটি হওয়ায় আমি কোন আপত্তি করিনি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ভুক্তভোগী জানান, সচিব মো: মঞ্জুরুল হক ভূঁইয়াকে টাকা দিলে সব সেবা মিলে,টাকা না দিলেই পড়তে হয় হয়রানির মধ্যে।
এদিকে ৭ নং ওয়ার্ড মেম্বার মহিদুর রহমান বলেন, ট্রেড লাইসেন্স, ট্যাক্স, জন্ম নিবন্ধন, মৃত্যু সনদ ও ওয়ারিশ সনদসহ সব কাজেই তাকে টাকা দিতে হয়। আমরা প্রতিবাদ করেও কোন ফল পাইনি। এছাড়া ইউনিয়ন পরিষদের উন্নয়ন কাজে কোনো পরামর্শ নেয় না। নিজের ইচ্ছে মতো প্রকল্প তৈরি করেন। বিলের সময় সভাপতি হিসেবে মেম্বারদের স্বাক্ষর নেন সচিব।
তিনি আরো বলেন, অন্যের লাইসেন্স দিয়ে নিজেই প্রকল্পের কাজে নয়-ছয় করে থাকেন। দেখার জন্য কেউ নেই। মহিদুর মেম্বারের মত এমন অভিযোগ করেন, সংরক্ষিত নারী ইউপি সদস্য আছমা আক্তার রোকসানা ও ঝর্ণা আক্তার । ভুক্তভোগী নাগরিকেরা ইউপি সচিব মো: মঞ্জুরুল হক ভুঁইয়ার এরকম হয়রানি বন্ধের জোর দাবি জানান।
অভিযুক্ত প্রশাসনিক কর্মকর্তা (ইউপি সচিব) মোঃ মঞ্জুরুল হক ভূঁইয়া বলেন, সকল প্রকার সনদের জন্য কোনো টাকা নেয়া হয় না। সার্ভারের যে নিয়ম আছে শুধু সেটা নেয়া হয়। প্রশাসনের নির্দেশে গত ২ জানুয়ারি থেকে ইউনিয়ন পরিষদের সকল নাগরিক সেবা বন্ধ রয়েছে। ১% এর প্রকল্পগুলো সকল মেম্বারদের উপস্থিতিতে সভা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলেও তিনি জানান।
এ প্রসঙ্গে সায়েস্তা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল হালিম বলেন, প্রশাসনিক নির্দেশ মোতাবেক আমি পরিষদের সকল কাজ কর্ম থেকে বিরত রয়েছি। সচিব সাহেব দুর্নীতি করে থাকলে সে দায়িত্ব তার। প্রমানিত হলে প্রশাসন তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবেন।
এ ব্যাপারে সিংগাইর উপজেলা নির্বাহী অফিসার কামরুল হাসান সোহাগ বলেন, সরকার নির্ধারিত ফি’র বাইরে টাকা নেয়ার সুযোগ নেই। কোনো ভূক্তভোগী অভিযোগ দিলে তদন্ত সাপেক্ষে ওই সচিবের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।