কর্পোরেট সংবাদ ডেস্ক : পৌরসভা ও সিটি করপোরেশনের মেয়র এবং ইউনিয়ন-উপজেলা-জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে নিরক্ষর ও স্বল্পশিক্ষিতরা নির্বাচন করতে পারবেন না। এসব পদে নির্বাচন করতে গেলে ন্যূনতম স্নাতক ডিগ্রি লাগবে।
এ ছাড়া থাকবে না সরাসরি ভোটের বিধানও। তবে সরাসরি ভোটের বিধান বলবৎ থাকবে ইউপি সদস্য (মেম্বার) নির্বাচনে। সরকারি চাকরিজীবীরা কাউন্সিলর-সদস্য হতে পারবেন।
বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের মতামত বিশ্লেষণ ও রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে এমন সুপারিশ করতে যাচ্ছে স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশন। আগামী ফেব্রুয়ারি মাসের শেষের দিকে এই প্রতিবেদন জমা দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে কমিশন।
এ বিষয়ে সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. তোফায়েল আহমদ গণমাধ্যমকে বলেন, সাধারণ মানুষের অভিযোগ—দল-পেশীশক্তি ও টাকার দাপটের কারণে শিক্ষিত মানুষ জনপ্রতিনিধি হতে পারেন না। নিরক্ষর লোক যেন জনপ্রতিনিধি হতে না পারেন, শিক্ষিতরা জনপ্রতিনিধি হতে আগ্রহী হন এবং বিজয়ী হয়ে আসতে পারেন, এমনভাবে সংস্কারের প্রস্তাব দেয়া হবে।
ইউপি সদস্যরা ভোট দিয়ে যাকে চেয়ারম্যান নির্বাচিত করবেন, তাকে কমপক্ষে স্নাতক ডিগ্রিধারী হতে হবে। ইউপি সদস্যদের মধ্যে একজনকে সভাধ্যক্ষ নির্বাচিত করা হবে। সভাধ্যক্ষকেও স্নাতক ডিগ্রিধারী হতে হবে।
একই পদ্ধতিতে সিটি করপোরেশন ও পৌরসভায় সরাসরি ভোটে মেয়র নির্বাচিত হতে পারবেন না।
জানা গেছে, চেয়ারম্যান ও মেয়রদের সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করতে হবে। তাই তাদের বেতন কাঠামোতেও সংস্কারের প্রস্তাব আনা হয়েছে। ইউপি চেয়ারম্যানের বেতন উপজেলা পর্যায়ের প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তার সমান ও পৌর মেয়রের বেতন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সমান হবে। এ ছাড়া স্থানীয় সরকারে উপদেষ্টা বা কোনো পদে থাকতে পারবেন না সংসদ সদস্যরা (এমপি)। তারা শুধু সভায় উপস্থিত হয়ে মতামত দিতে পারবেন।
সংস্কার কমিশন ৫০ হাজারের চেয়ে কম জনসংখ্যার পৌরসভাকে বাতিলের সুপারিশ করবে। কেননা এসব পৌরসভার বেশির ভাগই অতীতে দলীয় নেতাদের পুনর্বাসনের জন্য করা হয়েছে। এসব পৌরসভায় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাসের পর মাস বেতন বকেয়া থাকে। এ ধরনের প্রায় শখানেক পৌরসভাকে ইউনিয়নের সঙ্গে একীভূত করা জন্য কমিশন সুপারিশ করবে।
এ বিষয়ে কমিশনপ্রধান ড. তোফায়েল জানান, ২০২১ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত স্থানীয় সরকারে ভোট করতে নির্বাচন কমিশনের ২৩ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। একই সঙ্গে এসব নির্বাচন করলে খরচ হতো ৬০০ কোটি টাকা। এ জন্য প্রস্তাবে সব স্থানীয় সরকার নির্বাচন একসঙ্গে করার সুপারিশ থাকবে। আর কোনো স্থানীয় সরকার নির্বাচন দলীয় প্রতীকে হবে না।
জানা গেছে, উপজেলা ও জেলা পরিষদে প্রায় একইভাবে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হবেন। ইউপি, পৌরসভা ও সিটি করপোরেশনে একটি ছায়া পরিষদ থাকবে। তারা ইউপি সদস্য বা কাউন্সিলরদের মধ্য থেকে নির্বাচিত হবেন। তারা বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করবেন। বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন সভাধ্যক্ষরা। সেখানে উন্নয়ন, পরিকল্পনা প্রণয়নসহ লেজিসলেটিভ (আইনি) অংশ দেখবেন।
স্থানীয় সরকারে উপদেষ্টা বা কোনো পদে থাকতে পারবেন না সংসদ সদস্যরা (এমপি)। সভায় উপস্থিত হয়ে শুধু মতামত দিতে পারবেন। কমিশন মনে করে, এমপিদের প্রভাবের কারণে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারেন না। তারা এমপিনির্ভর হয়ে পড়েছিলেন। এ ছাড়া স্থানীয় সরকারে জাতীয় সংসদের মতো স্থায়ী কমিটি থাকবে।