নিজস্ব প্রতিবেদক: মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলার ডাউটিয়া ঈদগাহ মাঠের জায়গায় ব্যক্তিগত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার অভিযোগ উঠেছে কমিটিতে থাকা দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে। এ নিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে।
স্থানীয় মোখলেসুর রহমান নামে জনৈক ব্যক্তির প্রশাসনের কাছে দায়ের করা লিখিত অভিযোগ প্রেক্ষিতে সরেজমিন গণমাধ্যম কর্মীদের কাছে এমন তথ্য মিলেছে। যদিও ভুক্তভোগী ওই ব্যক্তি সরকারি রাস্তা বন্ধের বিষয়ে অভিযোগে উল্লেখ করেন। স্থানীয় লোকজনের সাথে কথা বলে মিলে অন্যরকম তথ্য।
রেকর্ডপত্র পর্যালোচনা করে দেখা গেছে,ডাউটিয়া মৌজার আরএস ১৬৭ ও ১৬৮ দাগে মোট ৪৮ শতাংশ জমি ডাউটিয়া ঈদগাহ কমিটির পক্ষে মতুয়ালির নামে। অথচ পশ্চিম পাশে জামে মসজিদের কিছু ফাঁকা মাঠ ছাড়া পূর্বপাশের বাকি সবটুকুতে বসানো হয়েছে বাজার। ঈদগাহ কমিটির সাধারণ সম্পাদক পল্লী চিকিৎসক আবু বক্করসহ অন্যান্য দায়িত্বশীল পদে থাকা ব্যক্তিরা দোকান ঘর তুলে দেদারসে ব্যবসা করছেন। আবার কেউ কেউ কম দামে ভাড়া নিয়ে মসজিদে সামান্য কিছু টাকা দিয়ে বেশি দামে অন্যকে ঘর ভাড়া দিচ্ছেন। ফলে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানটি বঞ্চিত হচ্ছে ন্যায্য পাওনা থেকে। এতে রক্ষক অবতীর্ণ হয়েছেন ভক্ষকের ভূমিকায়।
গত রবিবার (৫ জানুয়ারি) স্থানীয় বাসিন্দা ও ডাউটিয়া বাজারে গিয়ে দোকানিদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ঈদগাহ মাঠের সাধারণ সম্পাদক বকচর গ্রামের আবু বক্কর মাত্র ৫০০ টাকার বিনিময়ে ভাড়া নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ওষুধের ফার্মাসির দোকান দিয়ে ব্যবসা করছেন। নতুন করে ঘরটি ভেঙে সংস্কারের নামে স¤প্রসারণ করতে গেলে এলাকাবাসীর বাধার মুখে পড়েন তিনি। সরকারি রাস্তা বন্ধ করে ঘর তোলার অভিযোগও ওঠে তার বিরুদ্ধে। প্রশাসনের নজর এড়াতে ছুটির দিন শুক্র ও শনিবার বেছে নিয়ে ঘরে নির্মাণের কাজ সম্পন্ন করেছেন বলে জানা গেছে। অপরদিকে, কবির ও শাজাহান নামের দুই ব্যক্তি নামমাত্র ভাড়া দিয়ে মুদি দোকান ও কীটনাশক ওষুধের ব্যবসা করছেন ঈদগাহ মাঠের জায়গায়। বকচর গ্রামের আমজাদ নামের এক ব্যক্তি ৫০০ টাকা দিয়ে ভাড়া নিয়ে মহর নামের আরেক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা অ্যাডভান্স নিয়ে প্রতিমাসে দুই হাজার টাকা করে ভাড়া উত্তোলন করছেন । অনুরূপ, আরজুল্লাহ, তাসের, আশরাফুল ও ইসমাইল হোসেন মাত্র ৫০০ টাকা ভাড়া দিয়ে ব্যবসা করছেন ঈদগাহ মাঠের জায়গায় । তবে ডাউটিয়া গ্রামের কাঁচামাল ব্যবসায়ী আলী আকবর বলেন,আমি ৫০০ টাকা ভাড়া দিলেও বেচাকেনার অবস্থা হিসেবে আমার জন্য কষ্ট হয়। আক্ষেপ করে তিনি আরো বলেন, বাধ্য হয়ে ব্যবসার নামে বাজার পাহারা দিচ্ছি মাত্র।
এ প্রসঙ্গে ডাউটিয়া ঈদগাহ মাঠ কমিটির সভাপতি সোনামুদ্দিন অসুস্থ থাকায় তার সাথে কথা বলা সম্ভব হয়নি। অভিযুক্ত সাধারণ সম্পাদক আবু বক্করের কাছ মোতয়ালীর নাম জানতে চাইলে তিনি নাম বলতে পারেননি। ঈদগাহ মাঠের সম্পত্তি তাদের বংশের পূর্ব পুরুষদের দান করা দাবি করে বলেন, মসজিদ উন্নয়নে প্রতিমাসে টাকা দিয়ে মাঠের জায়গায় ব্যবসা করছি। কমিটির সভায় এমন সিদ্ধান্তের রেজুলেশন আছে কিনা জানতে চাইলে এড়িয়ে যান দায়িত্বে থাকা ঈদগাহ মাঠ কমিটির ওই সাধারণ সম্পাদক।
জামির্ত্তা ইউনিয়ন (ভূমি) সহকারী কর্মকর্তা মোঃ কুদ্দুসুর রহমান বলেন, সরকারি রাস্তা দখলের অভিযোগের প্রেক্ষিতে আমি ঘটনাস্থলে গিয়ে জায়গা পরিমাপ করে রিপোর্ট দিয়েছি। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন । ঈদগাহ মাঠে দোকান ঘর কিংবা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়তে তোলা প্রসঙ্গে কেউ অভিযোগ নিয়ে আসেনি।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. কামরুল হাসান সোহাগ বলেন, আপনার কাছ থেকেই জানলাম। দ্রুত বিষয়টি ওয়াকফ স্ট্রেটকে জানাবো।