অর্থ-বাণিজ্য ডেস্ক : সৌদি রাষ্ট্রদূত ঈসা ইউসেফ ঈসা আল দুহাইলান বলেছেন, সৌদি আরবের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন তেল কোম্পানি আরামকো বাংলাদেশে একটি তেল শোধনাগার স্থাপনে আগ্রহী যা বঙ্গোপসাগর অঞ্চলে উল্লেখযোগ্য প্রভাব রাখতে পারে।
তিনি বলেন, ‘আমরা বিশ্বের বৃহত্তম তেল কোম্পানি আরামকোর কথা বলছি। তারা এখানে একটি শোধনাগার নির্মাণের জন্য বাংলাদেশে আসতে ইচ্ছুক।’
রোববার (৫ জানুয়ারি) এখানে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ‘সৌদি-বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সম্পৃক্ততা বৃদ্ধি: প্রবণতা, প্রধান চ্যালেঞ্জসমূহ এবং দীর্ঘমেয়াদি প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রদূত এ মন্তব্য করেন।
রাষ্ট্রদূত উল্লেখ করেন, প্রস্তাবিত শোধনাগার বাংলাদেশের পেট্রোলিয়াম পণ্যের ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাবে এবং বৃহত্তর আঞ্চলিক বাজারে পরিবেশন করবে যা জ্বালানির ক্ষেত্রে রূপান্তরমূলক পরিবর্তন আনবে বলে আশা করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রাম এবং জেদ্দা বা দাম্মামের মধ্যে একটি সামুদ্রিক রুট প্রতিষ্ঠিত হলে, এটি বাংলাদেশ এবং এ অঞ্চলে রূপান্তরমূলক পরিবর্তন আনতে পারে। রিফাইনারির পণ্যগুলি চীন, ভারত ও অন্যান্য প্রতিবেশী দেশেও রপ্তানি করা যেতে পারে।
রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘আমাদের কিছু সাফল্যের নজির রয়েছে। আমাদের আন্তর্জাতিক কোম্পানি, রেড সি গেটওয়ে টার্মিনাল, পতেঙ্গা টার্মিনাল পরিচালনা করছে এবং মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্র বন্দরে কাজ করতে আগ্রহী।’
রাষ্ট্রদূত স্মরণ করেন যে, আরামকো একটি হাই প্রোফাইল প্রতিনিধিদলের সাথে ২০১৬-২০১৮ সালের মধ্যে তিনবার বাংলাদেশ সফর করেছিল। তখন কেউ তাদের গ্রহণ করেনি। তিনি আরো বলেন, ‘তবে আমরা অতীত নিয়ে কথা বলব না। আমরা ভবিষ্যতের বিষয়ে কথা বলব।’
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে যেখানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন অর্থ ও বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।
পররাষ্ট্র সচিব মো. জসিম উদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে যোগ দেন পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন।
স্বাগত বক্তব্য রাখেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (পূর্ব) ড. মো. নজরুল ইসলাম এবং পলিসি এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান মাসরুর রিয়াজ প্রতিবেদনের প্রধান বৈশিষ্ট্যের ওপর আলোচনা করেন।
বাংলাদেশ-সৌদি আরব সম্পর্ককে বহুমাত্রিক উলে¬খ করে সৌদি রাষ্ট্রদূত বলেন, তার দেশ কখনো বাংলাদেশকে না বলেনি এবং বাংলাদেশও কখনো সৌদি আরবকে না বলে না।
গভীর রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পৃক্ততার গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি বলেন, ব্যাপক সহযোগিতার জন্য এই দুটি জিনিস একসাথে চলতে হবে।
সৌদি রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘আমাদের সম্পর্ক অনন্য, আমাদের অনেক সাফল্য রয়েছে। বাণিজ্য, বিনিয়োগ, সংস্কৃতি, পর্যটন ও অন্যান্য ক্ষেত্রে আমরা আরও বেশি সহযোগিতা চাই।
তিনি বলেন, সৌদি কোম্পানি ও বৈশ্বিক কোম্পানি উভয়ের জন্যই বাংলাদেশ বিনিয়োগের জন্য একটি সবুজ ক্ষেত্র।
রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশ-সৌদি আরব সম্পর্কের ভিত্তিতে আরও সাফল্য অর্জন করতে একসঙ্গে কাজ করার ওপর জোর দেন।
তিনি বলেন, ‘এসিডব্লিউএ পাওয়ার’ নামে তাদের বিশ্বের বৃহত্তম নবায়নযোগ্য জ্বালানি কোম্পানি রয়েছে এবং তারা প্রায় ৩.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করতে বাংলাদেশে আসতে ইচ্ছুক।
রাষ্ট্রদূত উল্লেখ করেন, এখন বাংলাদেশের জন্য একটি পরিবর্তনের সময়, যেখানে সংস্কার উদ্যোগ চলছে। ‘সরকারি পদ্ধতির সংস্কারই বিনিয়োগ আকর্ষণের চাবিকাঠি।’
তিনি আমলাতান্ত্রিক বিলম্বের কারণে উদ্ভূত চ্যালেঞ্জগুলোর উলে¬খ করে বলেন, প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে প্রায়শই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে মন্ত্রীর অফিসে, তারপর সচিব এবং বেসামরিক কর্মচারীদের কাছে যেতে হয়, যেখানে সেগুলো প্রায়শই আটকে যায়।
তিনি বলেন, ‘কিছু লোক আছে যারা দেশের স্বার্থ নয়, নিজের স্বার্থ খোাঁজে, যেকোনো দেশের জন্যই বড় চ্যালেঞ্জ।’
রাষ্ট্রদূত বলেন, দুর্নীতি বা এ ধরনের যেকোনো বাধার বিষয়ে তাদের জিরো টলারেন্স রয়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রণীত প্রতিবেদনটিতে বাংলাদেশ ও সৌদি আরবের অংশীদারিত্বের বহুমুখী মাত্রা সন্ধান, বর্তমান অবস্থা এবং ভবিষ্যতের অর্থনৈতিক সহযোগিতার সম্ভাবনা উভয়ই পরীক্ষা করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে সৌদি আরবে বাংলাদেশের রপ্তানি বাড়ানোর পাশাপাশি তেল সমৃদ্ধ দেশটি থেকে আমদানির প্রকৃতি ও সুযোগ যা বাংলাদেশের অর্থনীতিকে উপকৃত করতে পারে সে সকল সম্ভাব্য সুযোগ অন্বেষণ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে উভয় দেশের মূল খাতগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে যেগুলো পারস্পরিক বিনিয়োগের জন্য সম্ভাবনাময় এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগ প্রবাহ বৃদ্ধির সম্ভাবনাকে তুলে ধরে।
যেকোনো অর্থনৈতিক অংশীদারিত্বের মতো, বিভিন্ন চ্যালেঞ্জগুলো বিদ্যমান রয়েছে যা এই সম্ভাবনাকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে। গবেষণায় বাধাগুলোকে তুলে ধরা হয়েছে এবং অর্থনৈতিক অংশীদারিত্বকে নতুন উচ্চতায় উন্নীত করার লক্ষ্যে সেগুলো অতিক্রম করার জন্য কৌশলগত সুপারিশ প্রদান করা হয়েছে।
প্রতিবেদনটি উভয় দেশের নীতিনির্ধারক, ব্যবসা ও বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি নির্দেশিকা হিসেবে কাজ করবে বলে আশা করা হচ্ছে। এটি বাংলাদেশ ও সৌদি আরবের মধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্ক কীভাবে পারস্পরিক সুবিধার জন্য জোরদার করা যেতে পারে সে বিষয়ে আলোকপাত করেছে।