বিনোদন ডেস্ক: জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জয়ী কিংবদন্তি অভিনেতা প্রবীর মিত্র মারা গেছেন। রোববার (৫ জানুয়ারি) রাতে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়েছে তার। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তার ছোট ছেলে সিফাত ইসলাম।
গত কয়েক বছর ধরে বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগছিলেন অভিনেতা প্রবীর মিত্র। এরইমধ্যে ফের শারীরিক অবস্থার অবনতি হয় তার। পরে রাজধানীর একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। প্রায় দুই সপ্তাহ হাসপাতালে থাকার পর এদিন মৃত্যু হলো তার।
এর আগে তার অসুস্থতার ব্যাপারে ছোট ছেলে সিফাত ইসলাম জানিয়েছিলেন, গত ২২ ডিসেম্বর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে প্রবীর মিত্রকে। শরীরে অক্সিজেন পাচ্ছিল না। পরে আইসিইউতে নেয়া হয়। তারপর কেবিনে নেয়া হয়েছিল। পরবর্তীতে এইচডিইউতে রাখা হয়। কিন্তু তাতে কোনো অগ্রগতি ছিল না।
কিংবদন্তী এ অভিনেতাকে ‘শেষ বিদায়’ জানানো নিয়ে শুরুতে অনেকের মনে প্রশ্ন থাকলেও বিষয়টি ইতোমধ্যে খোলাসা করেছেন অভিনেতা মিশা সওদাগর। তিনি জানিয়েছেন, ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন প্রবীর মিত্র। তাই ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী তার জানাজা ও দাফন সম্পন্ন হবে।
ইতোমধ্যে অভিনেতার পরিবারের পক্ষ থেকে জানাজা ও দাফনের বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হয়েছে। প্রবীর মিত্রের ছেলে মিঠুন মিত্র রোববার রাতে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, রাতেই গোসল শেষে ফ্রিজার গাড়িতে প্রবীর মিত্রের লাশ ধানমন্ডির বাসায় নেয়া হবে। আর সোমবার (৬ জানুয়ারি) যোহরের পর বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনে (এফডিসি) তার প্রথম জানাজা হবে।
পরে সেখান থেকে কিংবদন্তী এ অভিনেতার মরদেহ চ্যানেল আইয়ে নিয়ে যাওয়া হবে। সেখানে দ্বিতীয় জানাজা শেষে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জয়ী এই অভিনেতাকে আজিমপুর কবরস্থানে সমাহিত করা হবে।
উল্লেখ্য, ১৯৪৩ সালের ১৮ আগস্ট জন্মগ্রহণ করেন প্রবীর মিত্র। তার পুরো নাম প্রবীর কুমার মিত্র। পুরান ঢাকায় বড় হওয়া প্রবীর মিত্র স্কুলজীবন থেকেই নাট্যচর্চার সঙ্গে যুক্ত হন। স্কুলজীবনে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ডাকঘর’ নাটকে অভিনয় করেছিলেন তিনি। ১৯৬৯ সালে প্রয়াত এইচ আকবরের ‘জলছবি’ সিনেমার অভিনয়ের জন্য প্রথম প্রবীর মিত্র ক্যামেরার সামনে দাঁড়ান। চলচ্চিত্রটি মুক্তি পায় ১৯৭১ সালের ১ জানুয়ারি।
ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে প্রবীর মিত্র ‘নায়ক’ হিসেবে কয়েকটি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। এরপর একের পর এক সিনেমায় অভিনয় করে পেয়েছেন দর্শকপ্রিয়তা। ‘তিতাস একটি নদীর নাম’, ‘জীবন তৃষ্ণা’, ‘সেয়ানা’, ‘জালিয়াত’, ‘ফরিয়াদ’, ‘রক্ত শপথ’, ‘চরিত্রহীন’, ‘জয় পরাজয়’, ‘অঙ্গার’, ‘মিন্টু আমার নাম’, ‘ফকির মজনু শাহ’, ‘মধুমিতা’, ‘অশান্ত ঢেউ’, ‘অলংকার’, ‘অনুরাগ’, ‘প্রতিজ্ঞা’, ‘তরুলতা’, ‘গাঁয়ের ছেলে’, ‘পুত্রবধূ’সহ চার শতাধিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি।
১৯৮২ সালে তিনি ‘বড় ভাল লোক ছিল’ চলচ্চিত্রের জন্য শ্রেষ্ঠ পার্শ্বচরিত্রে অভিনেতা বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। ২০১৮ সালে আজীবন সম্মাননা বিভাগে তাকে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রদান করা হয়।