November 22, 2024 - 11:42 am
তথ‌্য অ‌ধিদপ্ত‌রের নিবন্ধন নম্বরঃ ৭৭
Homeজানা অজানাদেশের একমাত্র মুঘল আমলের জীবন্ত নবাববাড়ি

দেশের একমাত্র মুঘল আমলের জীবন্ত নবাববাড়ি

spot_img

তিমির বনিক, ষ্টাফ রিপোর্টার: বাংলাদেশের সিলেট বিভাগের মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলায় পৃথীমপাশা নবাববাড়ি। এই নবাব বাড়ির মতো জীবন্ত নবাব বাড়ি বাংলাদেশে দ্বিতীয়টি আর নেই। একসময় এই অঞ্চলটি ত্রিপুরা রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিলো। মোগল সম্রাট আকবরের সময়কালে ইরান থেকে ধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যে ভারতবর্ষে আসেন শিয়া মতবাদি সাকি সালামত খাঁন, তাঁহার ছেলে ইসমাইল খাঁন পৃথীমপাশায় এসে ধর্ম প্রচার করেন। এখানেই তাঁহার নামে একটি দিঘির নামকরন করা হয়। ইসমাইল খানের ছেলে শামসুদ্দিন খাঁন তাঁর ছেলে রবি খাঁন। রবি খানের নামে ” রবির বাজার হাট” নামে একটি বাজারের নামকরণ করা হয়েছে। রবি খানের ছেলে মোহাম্মদ আলী খাঁন সিলেটের কাজী (বিচারক) ছিলেন।

সে-সময় পাহাড় বেষ্টিত এই অঞ্চলটিতে নাগা কুকি উপজাতির বেশ দাপট ছিলো। তাহারা তৎকালীন বিট্রিশ সরকারের কোন আইনেই মানতেন না। ব্রিটিশ সরকার এই কুকি উপজাতিদের বিদ্রোহ দমন করতে এলে মোহাম্মদ আলী খাঁন ব্রিটিশ সরকারের পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। ইংরেজ সরকার এতে খুশি হয়ে মোহাম্মদ আলীর ছেলে গাওস আলী খাঁনকে ১২০০ হাল (১৪৪০০) বিঘা জমি দান করেন। তখন থেকেই এখানে জমিদারি প্রথার প্রতিষ্ঠিত হয়। জমিদার গণের নির্মিত প্রাসাদ, শিয়া সম্প্রদায়ের একটি চমৎকার নকশা খচিত ইমামবাড়ি, মসজিদ, শান বাঁধানো ঘাটসহ সুবিশাল দীঘি, দীঘির দু’পাড়ে দুইটি মাজার একটি হাজি খাঁ। আপরটি শাহ্ ডিঙ্গির মাজার রয়েছে।

১৮৫৭ সালে সিপাহি বিদ্রোহের সময় চট্টগ্রাম থেকে হাবিলদার রজব আলীর নেতৃত্বে একদল ইংরেজ বিদ্রোহী সৈন্য সিলেটে আসেন এবং গাওস আলী খাঁর সমর্থন চাইলে গাওস আলী খাঁন গোপনে বিদ্রোহী সৈন্যদের সর্বাত্মক সহযোগিতা করেন। যুদ্ধ শেষে গাওস আলী খাঁনকে বিদ্রোহে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়। ইংরেজ সরকার শত চেষ্টা করেও কোন প্রমাণ করতে না পেরে গাওস আলী খাঁনকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়। উত্তরাধিকার সূত্রে জমিদারির মালিক হন আলী আহমদ খাঁন। জমিদার আলী আহমদ খানের শাসনামলে জমিদারির খাজনা ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পায়। তিনি বৃটিশ সরকারের আনুকুল্যে লাভ করেন। তিনি প্রজাদের কল্যাণে অনেক জনহিতকর কাজ করেন। তাহার সময় সুরমা নদীর তীরে চাঁদনীঘাট এবং আধুনিক সিলেট শহরের গোড়াপত্তন হয়। তিনি অনেক রাস্তা, মসজিদ, মাদ্রাসা, দীঘি, পুকুর, খনন করেন। অনেকদিন আগের কথা তখন এ অঞ্চলে ঘড়ির অবাধ প্রচলন ছিল না, মানুষ সূর্যের দিকে তাকিয়ে সময় অনুমান করতো। ১৮৭৪ সালে সুরমা নদীর তীরে ঐতিহাসিক ঘড়িঘরটি নির্মাণ করেন বৃহত্তর সিলেটের কুলাউড়ার পৃথীম পাশার জমিদার নবাব আলী আমজাদ খাঁন। আসামের গভর্নর লর্ড নর্থ ব্রুকের সিলেট আগমন উপলক্ষে তার সম্মানে এই ঘড়িঘরটি নির্মাণ করা হয় কলকাতার শিল্পী দ্বারা। মুক্তিযুদ্ধের আগে ঘড়িটি মেশিন চাবি দিয়ে চালানো হতো। প্রতিদিন ঘড়ির চাবি দেয়ার জন্য তৎকালীন পৌরসভায় একজন কর্মচারী নিযুক্ত ছিল। বিরাট আকারের ডায়াল ও কাঁটা সংযুক্ত সুবিশাল ঘড়িটির ঘণ্টাধ্বনি শহরের বাইরে অনেকদূর থেকেও শোনা যেতো। নির্মাণের পর এই আকর্ষণীয় ঘড়িটি দেখার জন্য প্রতিদিন সিলেটে দূর-দূরান্তের গ্রামাঞ্চল থেকে লোকজনের শহরে আগমন ঘটত। সে আমলে মানুষজন শহরের প্রবেশপথে স্থাপিত ঘড়িঘরের সময় দেখে শহরে আসা-যাওয়া ও কাজকর্ম সম্পাদন করতেন। আলী আমজাদ খাঁনের জন্ম ১৮৭১ সালে। পিতার মৃত্যুর পর ছেলে আলী আমজাদ খাঁন জমিদারির দ্বায়িত্বভার গ্রহণ করেন। তিনি অত্যন্ত প্রজা হিতকর ছিলেন। নারী শিক্ষা, যোগাযোগ ব্যবস্তাসহ বিভিন্ন উন্নয়ন মূলক কর্মকাণ্ড আজও ইতিহাস হয়ে আছে। ১৯০৫ সালে মৌলভীবাজার আলী আমজাদ উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় এবং পৃথীমপাশা বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি জনকল্যাণমুখী কাজের অবদানে ব্রিটিশ সরকার ‘নবাব’ খেতাবে ভূষিত করেন। তিনি মাত্র ৩৪ বৎসর বয়সে ১৯০৫ সালের শেষের দিকে ইন্তেকাল করেন।

তাঁহার সুযোগ্য ছেলে আলী হায়দার খাঁন ব্রিটিশ ভারতে বঙ্গআসাম প্রাদেশিক সরকারের কৃষি মন্ত্রী ছিলেন। তিনি বৃটিশ সরকার বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম নেতা ছিলেন। আলী হায়দার খানের দুই ছেলে যথা আলী সফদর খাঁন (রাজা সাহেব) ও আলী সারওয়ার খাঁন (চুন্নু নবাব) আলী সফদর খাঁন বাম প্রগতিশীল রাজনৈতিক নেতা ছিলেন এবং মওলানা ভাসানীর অত্যান্ত বিশ্বস্ত অনুসারী ছিলেন। অন্য ভাই আলী সারওয়ার খাঁন আওয়ামীলীগ করতেন ১৯৭০ সালে আওয়ামীলীগ প্রার্থী হয়ে বিজয়ী হন এবং ১৯৭৩ সালে উপনির্বাচনে কুলাউড়া আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। আলী সফদর খাঁন রাজা সাহেবের সুযোগ্য সন্তান নবাব আলী আব্বাস খাঁন ১৯৫৮ সালের ২৬ ডিসেম্বর পৃথীমপাশা নবাব বাড়ি জন্মগ্রহণ করেন। তিনি আইনশাস্ত্রে পড়ালেখা শেষ করে আইন পেশায় কর্মরত থাকার পাশাপাশি রাজনীতিতে সক্রিয় হন।

ব্যক্তি জীবনে তিনি অত্যন্ত ভদ্র, বিনয়ী, সৎ, জনকল্যাণকর মনোভাবের মানুষ। তিনি জাতীয় পার্টি থেকে নির্বাচিত হয়ে মৌলভীবাজার- ২ কুলাউড়া আসনে ১৯৮৮, ১৯৯১ ও ২০০৮ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি এলাকার মানুষের সাথে সময় দিতেন। এলাকায় থেকে মানুষের শ্রদ্ধা, ভালোবাসা নিয়ে জনকল্যাণমুখী কাজ করে যাচ্ছেন। বর্তমানে নবাব আলী আব্বাস এই নবাব স্টেটের মোতোয়ালি। তাহাঁর তিন ছেলে আলী হাসিব খাঁন, আলী সাকিব খাঁন, আলী আরিফ খাঁন। এই নবাব বাড়িতে অনেক নামি-দামি মানুষের আগমন ঘটেছে। ব্রিটিশ সরকারের গভর্নর জেনারেল নর্থ ব্রুক, ত্রিপুরার মহারাজা রাধা কিশোর মানিক্য বাহাদুর, ১৯৫১ সালে ইরানের সম্রাট রেজা শাহ্ পাহলভী, ফীল মার্শাল মোহাম্মদ আউয়ুব খাঁন, ২০০৬ সালে সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদ, সাবেক প্রধানমন্ত্রী কাজী জাফর আহমেদসহ আরো অনেকের নবাব বাড়ির আতিথেয়তা গ্রহণ করেন।

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন
spot_img

সর্বশেষ সংবাদ

২ কোম্পানির বোর্ড সভার তারিখ ঘোষণা

নিজস্ব প্রতিবেদক : পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ২ কোম্পানির বোর্ড সভার তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। কোম্পানি ২টি হলো-গ্লোবাল...

জেড ক্যাটাগরিতে গ্লোবাল হেভি কেমিক্যালস

নিজস্ব প্রতিবেদক : পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি গ্লোবাল হেভি কেমিক্যালস লিমিটেডের ক্যাটাগরি পরিবর্তন করা হয়েছে। কোম্পানিটিকে ‘বি’ ক্যাটাগরি থেকে ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। ঢাকা স্টক...

পুঁজিবাজারের ২ কোম্পানির এজিএমের তারিখ পরিবর্তন

নিজস্ব প্রতিবেদক : পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি নাহি অ্যালুমিনিয়াম কম্পোজিট প্যানেল লিমিটেড ও বিবিএস কেবলস পিএলসির বার্ষিক সাধারণ সভার (এজিএম) তারিখ পরিবর্তন করেছে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ...

শরীয়াহ পরিপালনে ইউনিয়ন ব্যাংক বদ্ধপরিকর

কর্পোরেট ডেস্ক : ইসলামী ব্যাংকিং এমন এক ব্যাংক ব্যবস্থা যেখানে সকল লেনদেনে সুদ নিষিদ্ধ।ব্যাংকিং সংক্রান্ত সকল কার্যক্রম ইসলামী শরীয়ার আলোকে পরিচালিত হয়। ইউনিয়ন ব্যাংক পিএলসি....

সাউথইস্ট ব্যাংক, টাইনি টটস ও সামার ফিল্ড স্কুলের মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর

কর্পোরেট ডেস্ক : সাউথইস্ট ব্যাংক পিএলসি. টিউশন ফি কালেকশন সার্ভিস, পে-রোল ব্যাংকিং এবং অন্যান্য ব্যাংকিং পরিষেবা প্রদানের জন্য ব্যাংকের হেড অফিসে টাইনি টটস ও...

বরগুনায় প্রান্তিক মানুষের মাঝে এনআরবিসি ব্যাংকের ঋণ বিতরণ

কর্পোরেট ডেস্ক : বরগুনা জেলার বিভিন্ন শ্রেণি পেশার নিন্ম আয়ের প্রান্তিক মানুষদের মাঝে প্রকাশ্যে ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পুন:অর্থায়ন তহবিল কর্মসূচির আওতায়...