এন জি চক্রবর্তী
দ্বিতীয় ভাগ।
চব্বিশ অধ্যায়।
ব্যাংকিং লেনদেন।
যখন আপনি ব্যাংক থেকে টাকা তুলে আপনার দেশী বা বিদেশী পাওনাদারকে টাকা পরিশোধ করবেন, তখন উপরের জার্নালটির বিপরীত জার্নাল করবেন। যদি আপনি টাকা তোলেন, তাহলে নগদ হিসাবকে ডেবিট আর ওই ব্যাংক বা তার মালিকের নামে ক্রেডিট করুন। আপনি যদি কাউকে চেক দেন তবে প্রয়োজনীয় ব্যাখ্যা লিখে তার নামে ডেবিট করুন আর ব্যাংক বা তার মালিকের নামে ক্রেডিট করুন। প্রথমটির জন্য আপনার জার্নালটি হবে:
যথাযথ বর্ণনা দিয়ে এ জার্নালগুলোকে লেজারে পোষ্টিং দিতে হবে। পোষ্টিং হয়ে গেলে প্রয়োজনমত হিসাবের খাতগুলোর এরকটা চার্ট তৈরী করুন আর মেমোরেন্ডাম ও জার্নালটির পোষ্টিং মার্ক দিন। আপনার টাকা আপনি আন্তর্জাতিক ড্রাফটের মাধ্যমে লন্ডন, ব্রাজিস, রোম লিয়ন বা অন্য যে কোন জায়গায় পাঠালেও একই রকম জার্নালে এন্ট্রি দিন। এই রকম আন্তর্জাতিক লেনদেনের ক্ষেত্রে যাতে কোন রকম ভুল বোঝাবুঝি না থাকে তার জন্য সমস্ত বিবরণ, শর্তাদি লিখে রাখাই ব্যবসায়িক রেওয়াজ। সে সমস্ত বিবরণ আর শর্তাদির মধ্যে ধরুন, যে মুদ্রায় লেনদেন হচ্ছে সে মুদ্রার নাম, কতদিনের মধ্যে দাম পরিশোধ করতে হবে, আংশিক জাহাজীকরণ করা যাবে কিনা, কমিশন, সুদ বা অন্যান্য খরচাপাতি কি লাগবে তার বিবরণ এবং পরবর্তীতে যাতে কোন বিবাদ উপস্থিত না হয় তার জন্য আরো যা যা তথ্য দরকারী হতে পারে তা লিখে রাখা উত্তম। মোদ্দা কথা হচ্ছে, ওই নির্দিষ্ট লেনদেনটির বিষয়ে পরে কি, কেন, কোথায় ইত্যাদি যেসব প্রশ্ন উঠতে পারে তা আগেভাগেই বিশদভাবে লিখে রাখা দরকার।
এতক্ষণ আপনি ব্যাংকের একজন গ্রাহক হিসাবে আপনার কি করণীয় তা বল্লাম। এবার বলি আপনি যদি ব্যাংকের মালিক হন তাহলে পুরো ব্যাপারটাই হবে উল্টো। ব্যাংকার হিসাবে আপনি যখন আপনার ব্যাংকের কোন হিসাবধারীকে টাকা দেবেন, তখন তাকে মানে তার হিসাবকে ডেবিট করে ক্রেডিট হবে ক্যাশ। যখন আপনার ব্যাংকের কোন হিসাবধারী সরাসরি টাকা না তুলে তার বদলে অন্য কাউকে ড্রাফট দেয়, সেক্ষেত্রে জার্নালটি হবে:
এভাবে একজনের নাম থেকে আরেকজনের নামে টাকা স্থানান্তর হচ্ছে ঠিকই, তবে আপনি বা আপনার ব্যাংক কারো না কারো কাছে দেনাদার বা খাতক থেকেই যাচ্ছেন। এভাবে আপনি দুপক্ষের এজেন্ট বা প্রতিনিধি হিসাবে কাজ করছেন। তবে এর জন্য আপনি আপনার ব্যাংকে ওভারহেড খরচ পোষাবার জন্য আপনি ব্যাংকার হিসাবে যথোপযুক্ত বৈধ কমিশন পাবেন। আর এতে আপনার কি কি বাড়তি উপকার হচ্ছে দেখুনÑ যাওয়া আসা বা ভ্রমন খরচ নেই, মুদ্রা বিনিময় হারের ঝুঁকি থাকলেও তা সামান্য, ড্রাফটির প্রাপকের কাছেও আপনার ঝুঁকি সামান্য, মুদ্রা বিনিময়ের যে সমস্ত ঝামেলা ছিল তার থেকে মুক্তি পেলেন। কখনো যদি একজন গ্রাহক তার হিসাবটি বন্ধ করে দিতে চায় তাহলে ব্যাংকারকে সবসমসয় গ্রাহকের কাছ থেকে ব্যাংকের দেওয়া সমস্ত কাগজের মূলকপি ফেরৎ নেওয়ার কথা মাথায় রাখতে হবে। এভাবে কিকি কাগজ, দলিল, দস্তাবেজ ফেরৎ পেলেন তা একটা ফাইলে রেখে তার তালিকা তৈরী করবেন এবং সেগুলো ক্যানসেল বা বাতিল করবেন। এতে গ্রাহক এরপরও টাকা ফেরৎ চাইলে দ্বিতীয়বার টাকা দেওয়ার মত ভুল থেকে রেহাই পাবেন।
যে কোন ব্যাংকের রেওয়াজ হচ্ছে অর্থ প্রাপ্তি স্বীকারপত্র আদায় ও তা যত্নে রাখা। ধরা যাক, আপনি জেনেভা’র একজন ড্রয়ারকে নগদ ১০০ টাকা দেওয়ার ফলে ফ্লোরেন্সের গিওভান্নি ফ্রেসকোবাল্ডি’র নামে ড্রয়ারের করা ১০০ টাকার একটা বৈধ ড্রাফট পকেটে নিয়ে জেনেভা থেকে ভেনিস যাচ্ছেন। যখন ফ্লোরেন্সের গিওভান্নি ফ্রেসকোবাল্ডি’র ব্যাংক আপনাকে ১০০ টাকা দেবে তখন আপনার কাছ থেকে একটা প্রাপ্তি স্বীকার পত্রের দুটি কপি আদায় করবে। এটা এ জন্য যে, ওর একটা কপি জেনেভার ব্যাংকে পাঠিয়ে দেবে অরেকটা নিজের কাছে রেখে তার হিসাব মেলাবে বা রিকনসাইল করবে। আপনি যদি দ্বিতীয়বার টাকা চাইতে জেনেভা’র বা ফ্লোরেন্সের গিওভান্নি ফ্রেসকোবাল্ডি’র ব্যাংকে যান তাহলে আপনাকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হবে। আজকালকার এই বিশ্বাসহীনতার যুগে এ ধবণের সাবধানতা অবলম্বনের প্রয়োজন আরো বেশী হয়ে পড়েছে।
উপরের উদাহরনের দুটো জার্নালের এবং তার লেজার পোষ্টিং দেওয়ার প্রয়োজন হবে। প্রথম মেসার্স গিওভানি এ্যান্ত কোং এর লেজারটাতে জেনেভার ড্রয়ারকে ডেবিট করতে হবে। আর দ্বিতীয়টিতে জেনেভাতে আপনার যে এজেন্ট রয়েছে তার হিসাবে মেসার্স গিওভানি এ্যান্ত কোং’কে ১০০ টাকা ক্রেডিট করতে হবে।
যে ব্যাংকগুলো আন্তর্জাতিক লেনদেন করে তারা সবাই একটা কোড ব্যবহার করে, যাতে দুজন দুজনের কাছে পরিস্কার থাকতে পারে। সুতরাং জায়গামত সঠিকভাবে ও সবিস্তারে সব ঘটনা নিয়মিতভাবে লিখে রাখুন।
(চলবে)