মো. আজিজুর রহমান।। বর্তমানে অনেকের প্রশ্ন? নকলের ভিড়ে আসল কোথায়! নকল ও মানহীন পণ্য বৈধ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে, সরকার প্রতিনিয়ত রাজস্ব হারাচ্ছে এবং সর্বোপরি বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এই প্রেক্ষাপটে মেধাস্বত্ব সুরক্ষায় ও নকল প্রতিরোধে বিনা মূল্যে জনগণের সেবায় বিভিন্ন আধুনিক অনলাইন সুবিধাসহ এবং বিশেষ করে ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (আইপিএবি) সদস্যদের ব্র্যান্ড; অর্থাৎ, পণ্য-সংক্রান্ত মেধাস্বত্ব সুরক্ষা ও আধুনিক ব্যবসায়িক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিতের লক্ষ্যে ‘এটুজি’ (a2z) হবে একটি ওয়েবভিত্তিক বহুমুখী ডিজিটাল সমাধান। এই উদ্যোগ একদিকে, কেবল মেধাস্বত্ব সুরক্ষা, পুরোনো ও নতুন উদ্যোক্তাদের আধুনিক ব্যবসা গঠন ও পরিচালনা, অনলাইনভিত্তিক ব্যবসায়িক যোগাযোগের মাধ্যমে পণ্যের সহজ বিপণন ব্যবস্থা তৈরি ও বিভিন্ন আধুনিক অনলাইন সুবিধাসহ ই-সাপ্লাইচেইন ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে সহায়ক ভূমিকাই রাখবে না, বরং বেসরকারি খাতের কাঙ্ক্ষিত এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সরকারকে সহায়তা করবে।
‘এটুজি’-তে ১১টি মডিউল বা বিশেষ ব্যবস্থাপনা রয়েছে, যার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ একটি ব্যবস্থাপনা হলো ‘ব্লু-চেক’। অনলাইনভিত্তিক ‘ব্লু-চেক’ পদ্ধতি দিয়ে সহজেই আসল ও নকল পণ্য চিহ্নিত করা যাবে। অন্য ব্যবস্থাপনাগুলোর মধ্যে রয়েছে ই-কমার্স সুবিধাসহ আধুনিক ডিজিটাল সাপ্লাইচেইন ব্যবস্থাপনা, যেখানে প্রতিটি পণ্যের অবস্থান ও নকল পণ্যের অনুপ্রবেশ নির্ধারণ সংক্রান্ত তথ্য নিশ্চিত করা সম্ভব; পণ্যের ক্রয়-বিক্রয়সংক্রান্ত লেনদেন সহজীকরণে প্রধান পরিবেশক থেকে খুচরা বিক্রেতা পর্যন্ত সবার জন্য তাৎক্ষণিক স্বল্পমেয়াদি আধুনিক ডিজিটাল ঋণ সুবিধা; আধুনিক ই-সাপ্লাইচেইন ব্যবস্থাপনা ও ই-কমার্স সুবিধাসহ ডিজিটাল ওয়্যারহাউজ ব্যবস্থাপনা; ই-সাপ্লাইচেইনের যেকোনো পর্যায়ে উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান থেকে খুচরা বিক্রেতা পর্যন্ত উৎপাদিত পণ্যের মজুতের পরিমাণ নির্ধারণ সুবিধা; যেকোনো পণ্যের ক্রেতাদের জন্য বিনা মূল্যে পণ্যের ইনস্যুরেন্স সুবিধা সম্বলিত ডিজিটাল ওয়ারেন্টি ব্যবস্থাপনা; পণ্যের বিজ্ঞাপন সুবিধা ও ব্যবসায়িক জরুরি তথ্য উৎপাদক থেকে খুচরা বিক্রেতা পর্যন্ত সামাজিক মাধ্যম ও অনলাইনে তাৎক্ষণিকভাবে পাঠানোর সুবিধা; সাপ্লাইচেইনের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার ও ভোক্তাদের মতামত গ্রহণের মধ্য দিয়ে পণ্যের গুণগত মান বা বিক্রয় বৃদ্ধির জন্য ডিজিটাল পদ্ধতিতে তথ্য সংগ্রহ ও গবেষণা করা; নকল ও অবৈধ ব্যবসায়িক কার্যক্রম প্রতিরোধে আইপিআর (IPR) এনফোর্সমেন্ট টাস্কফোর্স গঠন ও কার্যকরী ব্যবস্থাপনা গ্রহণ; জনসাধারণের জন্য বৈধ পণ্যের আন্তর্জাতিক মানসম্মত ই-কমার্স তৈরি ও পরিচালনা; এবং ‘এটুজি’ যথাযথভাবে বাস্তবায়ন ও পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয়সংখ্যক সহায়তা কেন্দ্র, সংশ্লিষ্ট সফটওয়্যার, অবকাঠামো, আধুনিক অনলাইন ব্যবস্থাপনা, প্রয়োজনীয় মানব সম্পদ তৈরি ও পরিচালনা করা ইত্যাদি।
এখানে উল্লেখ্য যে, ‘ব্লু-চেক’ একটি সহজ সফটওয়্যারনির্ভর সমাধান, যা সাধারণ গ্রাহককে বিনা মূল্যে ও সহজে যেকোনো পণ্যের আসল ও নকল নির্ধারণে সহায়তা করবে। ‘ব্লু-চেক’ সফটওয়্যারে প্রথমত দুই ধরনের কোডিং প্রকাশ্য (ওভারট) ও অপ্রকাশ্য (কোভারট) ব্যবহার করা হবে। প্রকাশ্য কোডের মধ্যে বিভিন্ন রকমের প্যাটার্ন সম্বলিত ইউনিক কোড, বার কোড ও কিউআর কোড বা অন্য কোনো আধুনিক পদ্ধতি ব্যবহার করা যেতে পারে। এ ছাড়া দুই বা ততোধিক কোডের সংমিশ্রণ, খুদেবার্তা ইত্যাদি পদ্ধতিতে একটি পণ্য আসল না নকল নির্ধারণ করা সম্ভব। অপ্রকাশ্য কোডের মধ্যে ছবিসহ বিভিন্ন ধরনের লুকায়িত চিহ্ন ব্যবহার করা যেতে পারে। এই ‘ব্লু-চেক’ কোড সংশ্লিষ্ট পণ্যের মোড়কে যেকোনো ফর্ম এবং পদ্ধতিতে সহজে স্থাপনযোগ্য যা কোনো কোম্পানির বিদ্যমান উৎপাদন পদ্ধতিকে জটিল না করে এবং সংশ্লিষ্ট পণ্যের উৎপাদন ব্যয়কে কোনোভাবেই প্রভাবিত না করে, সে বিষয়ে লক্ষ্য রাখা হবে। এ ছাড়া একটি পণ্যে ব্যবহৃত ‘ব্লু-চেক’-কোড যেন কোনোভাবেই কপি না হয় বা নকলকে তাৎক্ষণিকভাবে চিহ্নিত করা যায়, তা নিশ্চিত করা হবে।
‘এটুজি’ আধুনিক ডিজিটাল সাপ্লাইচেইন ব্যবস্থাপনা মডিউলের মাধ্যমে কোনো একটি নির্দিষ্ট সময়ে প্রতিটি পণ্যের অবস্থান বা নকল ও অবৈধ পণ্যের অনুপ্রবেশ চিহ্নিত করা সম্ভব। সাধারণত মজুত পণ্য বা স্টক পয়েন্টগুলো হলো মেনুফ্যাকচারিং পয়েন্ট, প্রধান পরিবেশন পয়েন্ট, পাইকারি বিক্রেতা পয়েন্ট, খুচরা বিক্রেতা পয়েন্ট এবং সর্বোপরি কতটুকু পণ্য পরিবহন পর্যায়ে রয়েছে তা একটি নির্দিষ্ট সময়ে নির্ধারণ করা। এই মডিউলের সাহায্যে একটি কোম্পানি জাস্ট-ইন-টাইম (JIT) ইনভেন্টরি ম্যানেজমেন্ট বাস্তবায়ন করতে পারবে। এই মডিউলের মাধ্যমে বাজারের বাস্তব চাহিদা-চিত্র তৈরি ও বাজারের চাহিদা মেটাতে ন্যূনতম মজুত পণ্য, কোন স্তরে কতটুকু রাখা উচিত, তা নির্ধারণ করা সম্ভব। ফলে এই মডেলের মাধ্যমে নির্ভরযোগ্য সাপ্লাইচেইন ম্যানেজমেন্ট; অর্থাৎ, একটি কার্যকরী MIS ব্যবস্থাপনা তৈরি সম্ভব, যা একজন প্রস্তুতকারককে অপ্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে মূলধন ব্যবহার না করার জন্য তথ্যউপাত্ত সরবরাহ করে সহযোগিতা করতে পারে। এ ছাড়া পণ্য প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানকে স্টকআউট পরিস্থিতি এড়াতে কেন্দ্রীয় ওয়্যার হাউজ সুবিধা ব্যবহার করে পরিবেশক, পাইকার ও খুচরা বিক্রেতাদের মধ্যে ই-কমার্স ব্যবস্থাপনা স্থাপন ও প্রয়োজনীয় তথ্য সরবরাহের মাধ্যমে সহায়তা করবে মিডিউলটি।
‘এটুজি’-এর ‘ডিজিটাল (রিটেল) ফাইন্যান্সিং মডিউলটি অন্যান্য সুবিধাগুলো হতে আলাদা। যেকোনো প্রস্তুতকারকের গুরুত্বপূর্ণ সাপ্লাইচেইন অংশীদার; যেমন‑প্রধান পরিবেশক, পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতারা যথাযথ নিয়ম‑নীতি এবং KYC প্রক্রিয়া (নো ইওর কাস্টমার) সম্পন্ন করার পর প্রয়োজনে তাৎক্ষণিকভাবে মাঝারি থেকে স্বল্পমেয়াদি ঋণ সুবিধা এই মডিউলের মাধ্যমে গ্রহণ করতে পারে। এই মডিউলটি শুধু একটি সাশ্রয়ী ডিজিটাল ঋণ সুবিধা প্রদান করে না, বরং এটি যেকোনো উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের বিদ্যমান অভিজ্ঞ বিতরণকর্মী এবং সরবরাহ-চেইন ব্যবহার করে প্রায় ১০০ শতাংশ ঋণ পুনরুদ্ধার নিশ্চিত করা সম্ভব। ফলস্বরূপ, এই মডিউলটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিশেষ করে ডিজিটাল ব্যাংকগুলোর জন্য মাঝারি ও ক্ষুদ্রঋণ প্রদানে সহজে ও অল্প খরচে কার্যকরী ব্যবস্থাপনা হতে পারে। কারণ এই পদ্ধতিতে যেকোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের ব্যবহার না করেই উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের বিদ্যমান বিক্রয় কর্মীদের মাধ্যমেই ডিজিটাল নগদবিহীন ঋণ (Cashless Loan Financing) বিতরণ কার্যক্রম পরিচালনা করা হয় এতে ঋণ প্রক্রিয়ার জন্য অতিরিক্ত পরিচালন ব্যয় হবে না। এখানে উল্লেখ্য যে, সংশ্লিষ্ট ঋণগ্রহীতা ডিজিটাল পেমেন্ট পদ্ধতি ব্যবহার করে সরাসরি ঋণের অর্থ পরিশোধ করতে পারবে অথবা বিক্রয় প্রতিনিধি তাদের নিয়মিত সময়সূচী অনুযায়ী ঋণের অর্থ সংগ্রহ করে নিতে পারবে।
পণ্যের ক্রেতাদের জন্য বিনা মূল্যে ইনস্যুরেন্স সুবিধাসহ ডিজিটাল ওয়ারেন্টি পণ্য ব্যবস্থাপনা একটি উল্লেখযোগ্য সুবিধা এতে পণ্য ব্যবহারকারীর মোবাইল নম্বর ব্যবহার করে ডিজিটাল ওয়ারেন্টি অ্যাকাউন্ট পরিচালনা করা হয়। ফলে কাগজের ওয়ারেন্টি পেপার সংরক্ষণের প্রয়োজন হবে না। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ওয়ারেন্টি‑সংক্রান্ত তথ্যাদি যাচাইয়ের জন্য উক্ত মোবাইলভিত্তিক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে ওয়ারেন্টির বর্তমান অবস্থা জানতে পারবে এবং প্রয়োজনীয় সেবা গ্রহণ করতে পারবে, যার বিস্তারিত ওই অ্যাকাউন্টেই লিপিবদ্ধ থাকবে। প্রস্তুতকারক বিনা মূল্যে ওয়ারেন্টি ব্যবস্থাপনায় বীমার সুবিধা নিশ্চিত করবে, যা নির্দিষ্ট সময়ের ওয়ারেন্টি পরিষেবার গ্যারান্টি দেয়। ওয়ারেন্টি ব্যবস্থাপনা দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের বিক্রয় বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এই ডিজিটাল ওয়ারেন্টি ব্যবস্থাপনায় ব্র্যান্ডের বিপণন প্রসার ছাড়াও পণ্য ব্যবহারকারীদের সুবিধার জন্য দেশব্যাপী পরিষেবা কেন্দ্র স্থাপনের মাধ্যমে নতুন কর্মসংস্থান তৈরিতে ভূমিকা রাখবে।
পণ্যের বিজ্ঞাপনসহ ব্যবসায়িক জরুরি তথ্য উৎপাদনকারী থেকে খুচরা বিক্রেতা পর্যন্ত সামাজিক মাধ্যম ও অনলাইনে তাৎক্ষণিকভাবে প্রচার ও প্রসারের মাধ্যমে কার্যকরী বাণিজ্যিক যোগাযোগ স্থাপন করবে। এই মডিউলে উৎপাদনকারী থেকে খুচরা বিক্রেতা পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট সব গুরুত্বপূর্ণ সাপ্লাইচেন ব্যক্তিদের তথ্য রেকর্ড করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে সেলফোন ও হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর, সোশ্যাল মিডিয়া আইডি, ই‑মেইল ও ঠিকানা। এই মডিউল ক্ষুদ্র, মাঝারি ও বৃহৎ ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের জন্য সহায়ক। এর মধ্যে ব্যবসা সম্প্রসারণে নানা ধরনের ডিজিটাল সুবিধাসহ বিভিন্ন রকমের আধুনিক কর্ম পরিচালনা পদ্ধতি অন্তর্ভুক্ত, যা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর পণ্যের ব্র্যান্ডগুলোর ও ভোক্তার অধিকার সুরক্ষা নিশ্চিত করবে।
জরিপ মডিউলের কার্যক্রম হচ্ছে, সাপ্লাইচেইনের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদারসহ ভোক্তাদের মতামত গ্রহণের মধ্য দিয়ে পণ্যের গুণগত মান বা বিক্রয় বৃদ্ধির জন্য ডিজিটাল পদ্ধতিতে তথ্য সংগ্রহ ও গবেষণা করা। সাধারণ জরিপ প্রক্রিয়া প্রচলিত কৌশল অনুসরণ করে, যা থেকে আমাদের ব্র্যান্ডগুলোর প্রসারে প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করা কঠিন। এই মডিউলে দক্ষ ব্যক্তিদের নিয়ে গঠিত কমিটি বিদ্যমান বিক্রয় কর্মীদের মাধ্যমে আধুনিক ডিজিটাল পদ্ধতিতে জরিপ পরিচালনা করে কম খরচে মানসম্মত প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করা যায়।
আইপিআর (IPR) এনফোর্সমেন্ট টাস্কফোর্স মডিউলে ‘এটুজি’-এর কেন্দ্রীয় ডেটাবেজ, ব্লু-চেক ও সাপ্লাইচেইন ম্যানেজমেন্ট ব্যবহার করে নকল পণ্য বাজারে অনুপ্রবেশ, রাজস্ব ফাঁকি ও অবৈধ ব্যবসাসংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন তৈরি করা সম্ভব। এ পর্যায়ে শিল্প বিশেষজ্ঞ, আইন প্রয়োগকারী কর্তৃপক্ষ, রাজস্ব বোর্ডের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ, আইনজীবী, নকল ও অবৈধ ব্যবসাসংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহকারী গোয়েন্দা সোর্স ইত্যাদি অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের নিয়ে একটি জাতীয় টাস্কফোর্স গঠন ও পরিচালনার মাধ্যমে উৎপাদিত মেধাস্বত্ব পণ্য রক্ষা, নকল ও অবৈধ ব্যবসায়িক কার্যক্রম প্রতিরোধে কার্যকরী ব্যবস্থাপনা গ্রহণ করা সম্ভব। প্রচলিত আছে, দশের লাঠি একের বোঝা। অর্থাৎ, IPR এনফোর্সমেন্ট একটি বিশাল কর্মযজ্ঞ। এর জন্য প্রচুর অর্থের প্রয়োজন, যা একক প্রতিষ্ঠানের পক্ষে বহন করা কঠিন। তাই একটি কার্যকরী জাতীয় টাস্কফোর্স গঠন করে পরিচালন খরচ নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নিলে এ সমস্যা সমাধান যেমন হতে পারে, তেমনি একক প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির IPR এনফোর্সমেন্ট পরিচালনায় স্পর্শকাতর যে সমস্যাগুলো রয়েছে, ‘এটুজি’ ব্যবস্থাপনায় তারও সমাধান করা যেতে পারে। এই মডেল থেকে বিশেষ করে ছোট ও মাঝারি প্রতিষ্ঠান বেশি উপকৃত হতে পারে। সংশ্লিষ্ট আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর সাথে সমন্বিতভাবে নকল ও অবৈধ ব্যবসা এবং আইন লঙ্ঘনকারী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ফৌজদারী মামলা ও যাবতীয় কর্মকাণ্ড পরিচালনাসংক্রান্ত সুবিধাগুলো এই মডিউলে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। মেধাস্বত্ব সুরক্ষা ও অন্যান্য সুবিধাগুলো পাওয়ার জন্য এই প্ল্যাটফর্মে আপনার উৎপাদিত পণ্যের নিবন্ধন করতে হবে।
আমাদের ESG প্রকল্প, ‘এটুজি’-এর উদ্যোক্তা উন্নয়ন মডিউল, সরকারকে SDG লক্ষ্য অর্জনে এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়াতে সাহায্য করতে পারে। মেধাস্বত্ব বিষয়টি বিবেচনায় রেখে এই মডিউলে রিভার্স-ইঞ্জিনিয়ারিং কৌশলকে কাজে লাগিয়ে দোলাইখাল এবং জিঞ্জিরাকে লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং হাব হিসেবে গড়ে তোলার জন্য প্রয়োজনীয় সহযোগিতা প্রদান করা এই প্রকল্পের একটি উল্লেখযোগ্য উদ্দেশ্য। এ সংক্রান্ত বিষয়ে উন্নত দেশগুলো বিশেষ করে চীন, কোরিয়া ও জার্মানি কীভাবে প্রযুক্তি-শিক্ষা কাজে লাগিয়ে উন্নয়ন করছে, তা থেকে আমাদের করণীয় নির্ধারণ করতে হবে। আইনি কাঠামোও অনেক ক্ষেত্রে রিভার্স ইঞ্জিনিয়ারিংকে সমর্থন করে, যেহেতু এটি গবেষণা খরচ পুনরুদ্ধার করতে খুব বেশি সময় নেয় বা খুব বেশি খরচ হয়। এ ক্ষেত্রে সরকার, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক, উন্নত দেশ এবং WIPO-এর মতো আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সমর্থন ছাড়া শিল্পের উন্নয়ন, নতুন ব্র্যান্ড তৈরি, উদ্যোক্তাদের বিকাশ এবং সর্বাপরি উল্লেখিত স্থানগুলো ছোট ও মাঝারি শিল্পে রূপান্তর করা অসম্ভব হবে। ‘এটুজি’-এর ত্রুটিহীন অপারেশন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বিভিন্ন সাপোর্ট সেন্টারও তৈরি করতে হবে।
সর্বোপরি উল্লেখ্য যে, ‘এটুজি’একটি ডিজিটাল অনলাইন আধুনিক ব্যবসায়িক ব্যবস্থাপনা কাঠামো, যা উৎপাদক প্রতিষ্ঠানের মানবসম্পদকে বলবৎ রেখে বিপণন ও পরিবেশন ব্যয় সীমিতকরণের একটি ব্যবস্থাপনা। এটি মেধাস্বত্ব সুরক্ষার পাশাপাশি লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং ও বিভিন্ন ধরনের শিল্পায়নের মাধ্যমে দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা রাখবে। আইপিএবির সদস্যগণ ও জনসাধারণ ‘এটুজি’-এর মূল কাঠামোটি বিনা মূল্যে ব্যবহার করতে পারবে। এই অনলাইন ও ডিজিটাল ‘এটুজি’ (‘a2z’) উদ্ভাবনটি বর্তমানে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পেটেন্ট রেজিস্ট্রেশনের জন্য প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। তাই সংশ্লিষ্ট সকলের স্বার্থ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এই প্রকল্পে আইপিএবি এক্সিকিউটিভ কমিটি’র সদস্যবৃন্দ, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও এনবিআর-এর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বুদ্ধিজীবী ও প্রাজ্ঞ ব্যবসায়ীদের সমন্বয়ে একটি পরিচালনা পর্ষদ গঠিত হতে পারে।
লেখক: মহাপরিচালক, আইপিএবি ও ফেলো এন্ড কাউন্সিল মেম্বার, আইসিএসবি।