স্পোর্টস ডেস্ক : জামাল মুসিয়ালা ও ইকে গুনডোগানের গোলে হাঙ্গেরিকে ২-০ ব্যবধানে পরাজিত করে প্রথম দল হিসেবে ইউরো চ্যাম্পিয়নশীপের নক আউট পর্ব নিশ্চিত করেছে স্বাগতিক জার্মানি। এবারের আসরে প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে দ্বিতীয় গোলের দেখা পেয়েছেন বায়ার্ন মিউনিখের ২১ বছর বয়সী মুসিয়ালা। স্টুটগার্ট এ্যারেনাতে ম্যাচের ২২ মিনিটে গোল করে জার্মানিকে এগিয়ে দেন এই তরুণ। ৬৭ মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুন করেন অধিনায়ক গুনডোগান। প্রথম ম্যাচে স্কটল্যান্ডকে ৫-১ গোলে উড়িয়ে দিয়ে ইউরো শুরু করেছিল জার্মানি। গ্রুপ-এ’র দ্বিতীয় ম্যাচে সহজ জয়ে স্বাগতিকদের নক আউট পর্ব নিশ্চিত হয়ে গেছে। আগামী রোববার ফ্রাঙ্কফুর্টে গ্রুপের শেষ ম্যাচে জার্মানির প্রতিপক্ষ সুইজারল্যান্ড।
ম্যাচ শেষে জার্মান কোচ জুলিয়ান নাগলসম্যান বলেছেন, ‘আমাদের গ্রুপে আমরা প্রথম হবার লক্ষ্য নিয়ে টুর্নামেন্ট শুরু করেছিলাম। এটা গুরুত্বপূর্ণ, কারন আমরা প্রতিটি ম্যাচ জিততে চাই। এভাবে টুর্ণামেন্ট শুরু করার সত্যিই অভাবনীয়।’
পরপর দুই ম্যাচে পরাজিত হয় হাঙ্গেরি এখন বিদায়ের দ্বারপ্রান্তে রয়েছে। সুইজারল্যান্ডের কাছে ৩-১ গোলের পরাজয় দিয়ে ইউরো শুরু করেছিল হাঙ্গেরি। নক আউট পর্বে যেতে হলে তাদেরকে শেষ শ্যাচে স্কটল্যান্ডকে অবশ্যই পরাজিত করতে হবে। হাঙ্গেরি কোচ মার্কো রোসি বলেছেন, ‘আমার দৃষ্টিকোন থেকে যেকোন ভাবেই জার্মানি আজ জিততো। কিন্তু আজকের ম্যাচে রেফারিং নিয়ে আমার আপত্তি আছে।’
প্রথম ম্যাচে স্কটল্যান্ডকে উড়িয়ে দেয়া দলটি নিয়েই কাল মাঠে নেমেছিল জার্মানি। আগের তিনটি বড় টুর্নামেন্টে প্রথম ম্যাচে পরাজিত জার্মানরা এবার আর সেই ভুল করেনি। ঘরের মাঠে দাপুটে জয় দিয়েই তারা ইউরো শুরু করেছে। অন্যদিকে সুইসদের বিপক্ষে হতাশাজনক পরাজয়ের ম্যাচটি থেকে রোসি দুটি পরিবর্তন করেছিলেন। তিন জনের রক্ষনভাগে রোসি মার্টোন ডারডাইকে এনেছিলেন। এছাড়া রাইট-উইং ব্যাকে খেলিয়েছেন বেনডেগুজ বোলাকে। হাঙ্গেরি কোচ স্বীকার করেছেন জার্মানিকে পরাজিত করতে হলে তার দলের মাঠে শতভাগ নিখুঁত ম্যাচ খেলার প্রয়োজন ছিল।
ম্যাচের শুরুতেই হাঙ্গেরি প্রায় এগিয়ে গিয়েছিল। রোলান্ড সালাইয়ের পায়ের উপর থেকে কার্যত বল ছিনিয়ে নেন ম্যানুয়েল নয়্যার। হাঙ্গেরিয়ান ডিফেন্ডার উইলি ওরবানকে কাটিয়ে কেই হাভার্টজ শট নিলেও গোলরক্ষক পিটার গুলাসি দারুনভাবে কর্ণারের সাহায্যে রক্ষা করেন। কর্ণার থেকে রবার্ট এ্যান্ড্রিচের ভলি বোলা হেডের সাহায্যে ক্লিয়ার করতে গেলে আত্মঘাতি গোলের লজ্জা থেকে কোনমতে রক্ষা পায় হাঙ্গেরি। মুসিয়াল একটি বল গুনডোগানের দিকে বাড়িয়ে দেন। জার্মান অধিানয়ক আক্রমনের ধারা বজায় রেখে আবারো মুসিয়ালার দিকে ফিরিয়ে দেন। মুসিয়ালার দুর্দান্ত শট জার্মানিকে এগিয়ে দেয়। হাঙ্গেরি অবশ্য গুনডোগানের বিপক্ষে ওরবানকে ফাউলের আবেদন করেছিল। ভিএআর পরীক্ষা করে গোলের সিদ্ধান্ত বহাল রাখা হয়। ডোমিনিক সোবোজলাইয়ের কার্লিং ফ্রি-কিক দুর্দান্ত গতিতে ডানদিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে রক্ষা করেন নয়্যার। সোবোজলাইয়েল পরের মিনিটেই আরো একটি প্রচেষ্টা জোনাথন টাহ ব্লক করেন। মুসিয়ালার শট সাইডে নেটে লেগে বাইরে চলে যায়। প্রথমার্ধের স্টপেজ টাইমে হাঙ্গেরি জার্মানির জালে বল জড়িয়েছিল। কিন্তু ওরবানের হেড নয়্যার রুখে দেবার পর সালাই শট নেবার সময় অফসাইড পজিশনে ছিলেন।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে টনি ক্রুসের একটি ডিফ্লেকটেড শট গুলাসি কোনমতে রক্ষা করেন। সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে একমাত্র গোল করা বারনাবাস ভারগা অল্পের জন্য গোলের ঠিকানা খুঁজে পাননি। ৬৭ মিনিটে দারুন একটি সংঘবদ্ধ আক্রমন থেকে জার্মানী ব্যবধান দ্বিগুন করে। বামদিক থেকে ম্যাক্সিমিলিয়ান মিটেলস্টাডে জায়গা খুঁজে নিয়ে গুনডোগানের দিকে বাড়িয়ে দেন। পেনাল্টি স্পটের কাছ থেকে জার্মান অধিনায়ক দলের ব্যবধান দ্বিগুন করতে কোন ভুল করেননি। জসুয়া কিমিচের শক্তিশালী ক্রস থেকে নিকলাস ফুলক্রুগ ব্যবধান বাড়াতে ব্যর্থ হন। ম্যাচের শেষভাগে গুলাসি কিমিট ও লেরয় সানেকে হতাশ করলে জার্মানরা বড় ব্যবধানের জয় পায়নি।
ম্যাচের নিয়ন্ত্রন নিজেদের কাছে রাখা নিশ্চিত হবার পর জার্মান বস নাগলসম্যান সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচকে মাথায় রেখে আক্রমনভাগের তিনজনে উঠিয়ে নেন। নয়্যার একেবারে শেষ মিনিটে কিছুটা নার্ভাস হয়ে গিয়েছিল। যদিও ওরবানের শট লাইনের উপর থেকে ক্লিয়ার করে দলকে রক্ষা করেছেন কিমিচ। ইউরোপীয়ান চ্যাম্পিয়নশীপের শেষ আট ম্যাচে এই প্রথম জার্মানি কোন গোল হজম না করে ম্যাচ শেষ করলো।