দেশে এখন মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে সাধারণ বৃষ্টিপাত হচ্ছে। এই বৃষ্টিতে বন্যা হওয়ার কথা নয়, কিন্তু উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে দেশের উত্তর ও পূর্বাঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকায় বন্যা দেখা দিয়েছে। সিলেট, মৌলভীবাজার, লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে। এসব এলাকায় হাজার হাজার মানুষ গৃহবন্দি হয়ে পড়েছেন। শত শত স্কুল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এখন আষাঢ় মাসের মধ্যভাগ, বৃষ্টি মৌসুম কেবল শুরু হয়েছে, বৃষ্টি হবে আরো কিছুদিন হবে এবং উজান থেকে ঢলও আসবে। সুতরাং বন্যা দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার আশঙ্কা আছে। আমরা ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রণালয়কে বলবো প্রস্তুতি নিন। এখন থেকেই দুর্গতদের পাশে দাঁড়ান।
যে তিস্তা নদীর পানি নিয়ে এত বিতর্ক। সেই তিস্তায় এখন পানির অভাব নেই। গত ৩ দিন ধরে তিস্তার পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। লালমনিরহাটের আদিতমারি, মহিশখোলা, গোবরধন, চরগোবরধন, পারুলিয়া ও হাতিবান্ধায় বন্যা দেখা দিয়েছে। সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জসহ কয়েকটি উপজেলায়, মৌলভীবাজারের বেশির ভাগ এলাকায় বন্যা দেখা দিয়েছে। মৌলভীবাজারের ৯টি উপজেলার অবস্থা বন্যায় করুণ হয়ে পড়েছে। সব মিলিয়ে বন্যার শিকার হয়েছে কয়েক লাখ মানুষ।
বাংলাদেশ ট্রপিক্যাল আবহাওয়ার বৃষ্টি প্রধান একটা দেশ। অবস্থান গত কারণে বাংলাদেশের অবস্থান ভাটিতে। সুতরাং এদেশে বন্যা হবেই। বন্যায় মানুষের যে দুর্ভোগ সৃষ্টি হয় তা ঢাকায় বসে অনুধাবন করা যাবে না। ঘরের মেঝেতে হাটুসমান পানি উঠে গেলে ওই পরিবারের রান্নাবান্না, পয়নিষ্কাশন, খাওয়া-দাওয়া সবই সংকটে পড়ে। বাড়িতে যদি শিশু থাকে তাহলে প্রতিনিয়ত ডুবে মরার হুমকি থাকে। বাংলাদেশের মানুষ প্রাকৃতিকভাবে সংগ্রামী। অনেক দুর্ভোগকেই তারা সংগ্রামের মাধ্যমে মোকাবিলা করে নেয়। একটা সময় ছিল যখন বন্যা দেখা দিলে বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনের কর্মীরা রাস্তায় নেমে আসত। জনগণের কাছ থেকে চাঁদা তুলে ত্রাণ সামগ্রী কিনে তারা দুর্গত এলাকায় যেত। এমনও হয়েছে ত্রাণ দিতে যেয়ে নিজেই পানিতে ডুবে মারা গেছেন। এগুলো এখন আর হয় না। এখন সরকারের অনেক টাকা। তৃর্ণমূল পর্যন্ত সরকারের অবকাঠামো আছে। এ জন্য সরকারকেই উদ্যোগী হতে হবে। গেল বছর উত্তর-বঙ্গে যে মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছিল এবার যেন তা না হয়, সেই প্রস্তুতি থাকতে হবে।