November 22, 2024 - 12:30 pm
তথ‌্য অ‌ধিদপ্ত‌রের নিবন্ধন নম্বরঃ ৭৭
Homeকর্পোরেট ভয়েসএকটা ধন্যবাদ অনন্ত জলিল পেতেই পারেন

একটা ধন্যবাদ অনন্ত জলিল পেতেই পারেন

spot_img

আয়শা এরিন : চলচ্চিত্র ফলত সাংস্কৃতিক শক্তি। অন্যদিকে, কার্যত শক্তিশালী গণমাধ্যম। মুলত, মনুষ্য জীবনের দৃশ্যমান বাস্তবতা কাল্পনিক জগত তৈরি করে বার্তা রাখার প্রয়াসে যায়। বস্তুত, জনশ্রেণির বিনোদনের খোরাক হয়ে চলচ্চিত্র একটি ক্ষেত্র প্রস্তুত করে। প্রাসঙ্গিক দাবীতে মুখরিত হয়ে নির্মাতা তখন বলেন, নির্যাস নাও, অতঃপর মনে রেখো !

চলচ্চিত্র বিশেষ একটি শিল্প মাধ্যম। মানুষ সভ্যতাকে আলিঙ্গন করতে যেয়ে চলচ্চিত্রের ধারণা একদা নিতে শুরু করে। ঊনবিংশ শতকের শেষ দিকেই এমন অভিযাত্রা শুরু। উপমহাদেশে বরেণ্য চিত্রশিল্পী রাজা রাভি বার্মার আধুনিক মানসিকতা ও ঝুঁকিপূর্ণ পৃষ্ঠপোষকতায় দাদাসাহেব ফালকে উদ্যোক্তা পরিচালক হিসাবে চলচ্চিত্র মাধ্যমকে পরিচিত করান। তিনি ১৯১৩ সালে একটি পূর্ণদৈর্ঘ্য নির্বাক চলচ্চিত্র নির্মাণ করে চমক দেখান। এদিকে বাংলাদেশ প্রায় পঞ্চাশ বছরে এই শিল্পের অনগ্রসর জাহাজটিকে প্রত্যাশিত গন্তব্যে নিয়ে যেতে পারেনি।

দু’একটি সাহিত্য নির্ভর সিনেমা ব্যতিত বাংলাদেশ এই শিল্পে সেরা কিছু প্রদর্শন করতে পারেনি। কিন্তু, মানুষ একসময় সিনেমা হলগুলোয় গিয়েছে। আকাশ সংস্কৃতির বিস্তার যখন গ্রাস করেনি, সে পর্যন্ত মধ্যবিত্ত ও অতি অবশ্যই নিম্নবিত্ত মানুষ সিনেমা দেখতে যেত বলে ধরে নেয়ার সুযোগ আছে।

অন্যদিকে নির্মাতাদের অতি মাত্রায় বিদেশি সংস্কৃতির ওপর নির্ভরশীল হয়েই এই দেশে সস্তা জনপ্রিয়তা লুফে নিতে হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় যে, বাংলাদেশে রাজ্জাক, কবরী, ববিতা, শাবানা যারাই জনপ্রিয় হয়েছেন, তাঁদের প্রত্যেকের অভিনীত অধিকাংশ চলচ্চিত্রই প্রতিবেশী দেশ ভারতীয় চলচ্চিত্রের গল্প চুরি করেই নির্মিত। এবং, তেমন ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ আজ অব্দি সেই কাজটিই করে যাচ্ছে। মৌলিক গল্প লিখবার এখানে কেহ নেই। গীতিকার সুরকারেরাও অন্ধকার রাস্তায় যেয়েই পথিক হয়েছেন। মোদ্দকথা, বাণিজ্যিক ধারার চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে যেয়ে নিজস্ব কৃষ্টির ওপর দাঁড়িয়ে থেকে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র উদাহরণ সৃষ্টি করতে পারেনি।

বক্স অফিস নেই, কিন্তু অধুনা সংস্কৃতির প্রেক্ষাপট বিচারের আদ্যপান্ত যাচাইয়ে মনযোগি হলে বাংলাদেশে দেখা যাচ্ছে, তিনটি ধারার সংবাদমাধ্যম তথা ইলেক্ট্রনিক, প্রিন্ট এবং অনলাইন মাধ্যমগুলোর বিনোদন সংবাদকর্মীরা চলচ্চিত্রের বিকাশে বিপ্লব প্রত্যাশা করছেন। তাঁদের সাংবাদিকতার সাংস্কৃতিক মনবোধ তৈরি হোক বা না হোক, চলচ্চিত্র এবং এই শিল্পের সাথে থাকা অভিনয় শিল্পী, পরিচালকদের খবরাখবর দিচ্ছেন তাঁরা ঘন্টায় ঘন্টায়।

ঈদুল আজহায় প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে তিন সিনেমা; অনন্ত জলিলের ‘দিন : দ্য ডে’, শরিফুল রাজের ‘পরাণ’ ও জিয়াউল রোশানের ‘সাইকো’। এবারের ঈদে সর্বাধিক সিনেমা হলে মুক্তি পেয়েছে অনন্ত জলিলের ‘দিন : দ্য ডে’। বাংলাদেশের বিনোদন সংবাদকর্মীবৃন্দ তিনটি সিনেমারই প্রচারে থেকে দর্শকদেরকে বলতে চেয়েছেন, আপনিই বিচার করুন এবারের ঈদে কোন চলচ্চিত্রটি দেখতে পারেন !

দিনঃ দ্য ডে
বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের ইতিহাসে এতটা ভাল সিনেমাটোগ্রাফি নিয়ে কোন সিনেমা ইতোপূর্বে নির্মিত হয় নাই। সুস্পষ্টভাবে অনন্ত জলিল তাঁর পরিশ্রমী সাংস্কৃতিক পথচলাকে শুধুমাত্র রঙ্গিনই করেন নি, ধারা ভেঙ্গে ইতিহাসের অংশ হয়েছেন। কারণ, বাংলদেশ এখন বলতে পারবে, ফিল্মিক ফ্রেম ধরাটা রপ্ত করতে পেরেছে বাংলাদেশ। গল্পের নতুনত্ব, সম্পাদনা মিলিয়ে দিন দ্য ডে চলচ্চিত্রটির সাথে সত্যিকার অর্থে অন্যান্য সিনেমাগুলোর তুলনা করাটা ভুলই হচ্ছে। অসম প্রতিযোগিতার মত করে হয়ে যায় ! অনন্ত জলিল ও বর্ষা তাঁদের অভিনয় শৈলীকে ভবিষ্যতে আরো পরিণত করতে পারলে তাঁরা এক সময় অভিনেতা-অভিনেত্রী হিসাবেও উৎরিয়ে যাবে বলে মনে করার সুযোগ আছে।

পরাণ
এই চলচ্চিত্রটির সেন্সর দেয়াটা সমীচীন হয়নি। সামাজিকভাবে চিন্তার উদ্রেকে মেতে উঠলে নয়ন বন্ড তৈরি হোক বা প্রজন্ম এমন ধরণের সাংস্কৃতিক সত্তায় সঁপে দিয়ে উগ্র মানসিকতায় ভর করুক, তেমন প্রভাবের আলোটিই কায়দা করে দর্শকদের চোখে পড়ুক— এটিই এই চলচ্চিত্রের ম্যাসেজ !

চলচ্চিত্রটির অধিকাংশ দৃশ্যায়নে ক্লোজ শট ব্যতিরকে নাটকের ফ্রেম ধরা পড়েছে। যা খুবই দুর্বল ও চলমান বৈশ্বিক ধারাবাহিকতার সাথে যায় না। বিব্রতকর ! এই চলচ্চিত্রের মাধ্যমে পরকিয়া প্রেমকে সু স্বাগত বলার অপচেষ্টা করা হয়েছে, যা সমাজের জন্য ইতিবাচক ফল বয়ে আনে না। তবে নবাগত রাজ অভিনয়টা ভাল করেছেন।

সাইকো
সাইকো চলচ্চিত্রটি তারুণ্য, ভিন্ন ভাবনায় প্রেমের উপস্থাপন ও কিছু বার্তার গল্পে নির্মাণাধীন বাংলাদেশি পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র হিসাবে প্রচারণায় থাকা হয়েছে। ট্রাডিশনাল ফিল্মের উপকরণের সম্ভার নিয়ে সিনেমাটি প্রচারণায় পিছিয়ে থাকলেও মন্দের ভাল হিসাবেই দেখতে হবে। প্রধান দুই চরিত্রের বাইরে ছোট পর্দার শক্তিশালী অভিনেতা- অভিনেত্রীরা কাজ করার ফলশ্রুতিতে সিনেমাটিতে পেশাদারিত্ব ছিল।

নিজেদের উপযোগি শাসন ব্যবস্থার ওপর ভর করে যেমন রাষ্ট্রের গতির যান ও চালক নির্ধারণ করার দরকার—– ঠিক একইভাবে সাংস্কৃতিক বাস্তবতায় চলচ্চিত্র শিল্পের বিকাশে স্ব-কৃষ্টি কষ্টি পাথরের মত করে জীবনকে ঘষুক। চলচ্চিত্র আসলে কি ? যখন তোমার নিত্যদিনের পথচলা তথা চলমান জীবনের ধারা ক্যামেরার মাধ্যমে ধারণ করে বা এনিমেশনের মাধ্যমে উপস্থাপিত হবে এবং সবিশেষ বার্তা রেখে সমাজ ও প্রকৃতিকেও জেতায়। সেরকম কিছু করতে পারছো কিনা ! পঞ্চাশ বছরের বাংলাদেশে দিন দ্য ডে কি গল্প নিয়ে এসেছে, সেটা বড় নয়, বড় হল, এই চলচ্চিত্রের দৃশ্যায়ন। সিনেমাটিক ছিল। সঙ্গত যুক্তিতে একটা ধন্যবাদ অনন্ত জলিল পেতেই পারেন। ধন্যবাদ তাঁকে !

লেখকঃ সাংবাদিক, প্রযোজক, বৈষ্টমি প্রোডাকশন।

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন
spot_img

সর্বশেষ সংবাদ

২ কোম্পানির বোর্ড সভার তারিখ ঘোষণা

নিজস্ব প্রতিবেদক : পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ২ কোম্পানির বোর্ড সভার তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। কোম্পানি ২টি হলো-গ্লোবাল...

জেড ক্যাটাগরিতে গ্লোবাল হেভি কেমিক্যালস

নিজস্ব প্রতিবেদক : পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি গ্লোবাল হেভি কেমিক্যালস লিমিটেডের ক্যাটাগরি পরিবর্তন করা হয়েছে। কোম্পানিটিকে ‘বি’ ক্যাটাগরি থেকে ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। ঢাকা স্টক...

পুঁজিবাজারের ২ কোম্পানির এজিএমের তারিখ পরিবর্তন

নিজস্ব প্রতিবেদক : পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি নাহি অ্যালুমিনিয়াম কম্পোজিট প্যানেল লিমিটেড ও বিবিএস কেবলস পিএলসির বার্ষিক সাধারণ সভার (এজিএম) তারিখ পরিবর্তন করেছে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ...

শরীয়াহ পরিপালনে ইউনিয়ন ব্যাংক বদ্ধপরিকর

কর্পোরেট ডেস্ক : ইসলামী ব্যাংকিং এমন এক ব্যাংক ব্যবস্থা যেখানে সকল লেনদেনে সুদ নিষিদ্ধ।ব্যাংকিং সংক্রান্ত সকল কার্যক্রম ইসলামী শরীয়ার আলোকে পরিচালিত হয়। ইউনিয়ন ব্যাংক পিএলসি....

সাউথইস্ট ব্যাংক, টাইনি টটস ও সামার ফিল্ড স্কুলের মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর

কর্পোরেট ডেস্ক : সাউথইস্ট ব্যাংক পিএলসি. টিউশন ফি কালেকশন সার্ভিস, পে-রোল ব্যাংকিং এবং অন্যান্য ব্যাংকিং পরিষেবা প্রদানের জন্য ব্যাংকের হেড অফিসে টাইনি টটস ও...

বরগুনায় প্রান্তিক মানুষের মাঝে এনআরবিসি ব্যাংকের ঋণ বিতরণ

কর্পোরেট ডেস্ক : বরগুনা জেলার বিভিন্ন শ্রেণি পেশার নিন্ম আয়ের প্রান্তিক মানুষদের মাঝে প্রকাশ্যে ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পুন:অর্থায়ন তহবিল কর্মসূচির আওতায়...