এন, জি, চক্রবর্তী : আমরা জানি যে, পরিচালনা পর্ষদ কোম্পানীর সদস্যদের কাছে নিয়মিতভাবে প্রতিবছরে তাঁদের সমস্ত কর্মকান্ডের জন্য নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে জবাবদিহী করতে আইনত: বাধ্য। সেই অনুষ্ঠানের নাম বার্ষিক সাধারণ সভা। শুরুতেই দেখা দরকার বার্ষিক সাধারণ সভার প্রেক্ষাপট ও উদ্দেশ্য। প্রেক্ষাপট হচ্ছে সদস্যদের কাছে পর্ষদের দায়বদ্ধতার কারণে এ সভায় সদ্য বিদায়ী বছরের নিরীক্ষিত আর্থিক বিবরণীসহ যাবতীয় বিষয়াদি স্বচ্ছতা ও পরিপূর্ণতার সাথে প্রস্তুত করা আর উদ্দেশ্য হচ্ছে বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তা সদস্যদের যথাশীঘ্র অবহিত করা। পর্ষদের পক্ষে কোন বছর যুক্তিযুক্ত কারণে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠান করা সম্ভব নাও হতে পারে। সে না হওয়া বার্ষিক সাধারণ সভাকে এখানে আমরা নাম দিয়েছি বকেয়া বার্ষিক সাধারণ সভা। এবার প্রশ্ন হচ্ছে সে বকেয়া সভাটি হাইকোর্টের দ্বারস্থ না হয়ে কোম্পানী স্ব-উদ্যোগে কোম্পানী করতে পারে কি’না। আমরা সাধারণত: ধরেই নেই যে, বার্ষিক সাধারণ সভা একবার বকেয়া হলে হাইকোর্টে না গিয়ে উপায় নেই। একমাত্র হাইকোর্টই পারে কোম্পানীটিকে ক্ষমা করে সময় বাড়িয়ে এটাকে বৈধ করতে। কথাটি সঠিক কিনা তা বিবেচনা করা দরকার। কারণ হাইকোর্টে গেলে একদিকে খরচ ও মামলাজট বাড়ে অন্যদিকে সময় ক্ষেপন হয় যা কারো কাম্য নয়। কাজেই দেশের স্বার্থে কোম্পানী আইনের সংশ্লিষ্ট ৮১ ও ৮২ ধারা দুটি পর্যালোচনা করা দরকার।
ধারা-৮১: বার্ষিক সাধারণ সভা – (১) প্রত্যেক কোম্পানী উহার সাধারণ সভা ছাড়াও প্রতি ইংরেজী পঞ্জিকা বৎসরে ইহার বার্ষিক সাধারণ সভা হিসাবে একটি সাধারণ সভা অনুষ্ঠান করিবে এবং উক্ত সভা আহ্বানের নোটিশে উহাকে বার্ষিক সাধারণ সভা বলিয়া সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করিবে; এবং কোন কোম্পানীর একটি বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠানের তারিখ এবং উহার পরবর্তী বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠানের তারিখের ব্যবধান পনের মাসের অধিক হইবে না:
তবে শর্ত থাকে যে, কোন কোম্পানী নিগমিত হওয়ার তারিখ হইতে অনধিক আঠারো মাস সময়ের মধ্যে উহার বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠান করিতে পারিবে এবং যদি এইরুপ সাধারণ সভা উক্ত সময়ের মধ্যে অনুষ্ঠিত হয় তাহা হইলে নিগমিত হওয়ার বৎসরে বা উহার পরবর্তী বৎসরে উক্ত কোম্পানীর অন্য কোন বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠান করার প্রয়োজন হইবে না:
আরো শর্ত থাকে যে, উপরোক্ত বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠানের জন্য নির্ধারিত সময় অতিবাহিত হওয়ার তারিখ হইতে ত্রিশ দিনের মধ্যে কোন কোম্পানী রেজিষ্ট্রারের নিকট আবেদন করিলে রেজিষ্ট্রার প্রথম বার্ষিক সাধারণ সভার ক্ষেত্র ব্যতীত অন্যান্য বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠানের সময় অনধিক নব্বই দিন অথবা যে পঞ্জিকা বৎসরের জন্য উক্ত সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা সেই বৎসরের ৩১শে ডিসেম্বর পর্যন্ত, এই দুই মেয়াদের মধ্যে যাহা প্রথমে হয় সেই মেয়াদ পর্যন্ত, বর্ধিত করিতে পারিবে।
(২) কোন কোম্পানী উপধারা (১) এর বিধান পালনে ব্যর্থ হইলে, কোম্পানীর যে কোন সদস্যের আবেদনক্রমে, আদালত উক্ত কোম্পনীর বার্ষিক সাধারণ সভা আহ্বান করিতে অথবা আহ্বান করার নির্দেশ দিতে পারিবে এবং আদালত উক্ত সভা আহ্বান, অনুষ্ঠান ও পরিচালনার জন্য যেরুপ সমীচীন বলিয়া বিবেচনা করিবে সেইরুপ অনুবর্তী ও আনুষঙ্গিক আদেশ প্রদান করিতে পারিবে।
৮২। ধারা ৮১ এর বিধান পালনে দন্ড। – ধারা ৮১ এর উপধারা (১) অনুযায়ী কোন কোম্পানী উহার বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠানে কিম্বা উক্ত ধারার উপধারা (২) এর অধীনে প্রদত্ত আদালতের নির্দেশ পালনে ব্যর্থ হইলে, উক্ত কোম্পানী এবং উহার প্রত্যেক কর্মকর্তা, যিনি উক্ত ব্যর্থতার জন্য দায়ী তিনিও, অনধিক দশ হাজার টাকা করিয়া অর্থদন্ডে দন্ডনীয় হইবেন এবং এইরুপ ব্যর্থতা চলিতে থাকিলে, উহা চলিত থাকাকালীন সময়ের প্রথম দিনের পরবর্তী প্রতিদিনের জন্য, কোম্পানী ও উক্ত কর্মকর্তা উভয়েই অনধিক দুইশত পঞ্চাশ টাকা করিয়া অর্থদন্ডে দন্ডনীয় হইবেন।
এবার পর্যলোচনায় আসা যাক-
প্রথমত: আমরা জানি এমনিতেই হাইকোর্টসহ আমাদের সমস্ত বিচারালয় বিচারাধীন মামলার ভারে জর্জরিত। তার উপর আমাদের বোঝার ভুলের কারণে যদি অপ্রয়োজনীয়ভাবে মামলার সংখ্যা বেড়ে যায় তাহলে বিচারালয়গুলোকে আমরা আরো বিপদে ফেলব। দ্বিতীয়ত: বকেয়া বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্টানের জন্য যদি হাইকোর্টে যাওয়াটা বাধ্যতামূলক না হয়, তাহলে সংশ্লিষ্ট কোম্পানীগুলোর সময় ও অর্থ দুইই সাশ্রয় হয়। মূলত: এই দুই কারণে আজকের আলোচনার বিষয়বস্তু হচ্ছে – হাইকোর্টে না গিয়েও কোম্পানীগুলো নিজ উদ্যেগে তাদের বকেয়া বার্ষিক সাধারণ সভা করতে পারে কি’না তা খতিয়ে দেখা ।
শুরুতেই একটি বিষয় পরিষ্কার করা দরকার। ধারা ৮১ ও ৮২ ছাড়াও ১৮৩ ধারায় যদিও বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠানের তারিখ নির্ধারণ বিষয় (নিরীক্ষিত আর্থিক বিবরণীর তারিখ থেকে বারো মাস/নয় মাস কিম্বা লাভ ক্ষতি হিসাবের সময়বৃত্ত বারো/পনের/আঠারো মাস) সম্পর্কিত, তবুও লক্ষনীয় যে এই ১৮৩ ধারাটি ৮১ ধারা সাপেক্ষে, তাই আমাদের আজকের আলোচ্য বিষয়ে তার কোন প্রত্যক্ষ প্রভাব নেই, সে জন্য আপাতত: এ ধারাটি আলোচনার বাইরে রাখছি।
প্রথমে উপরোক্ত ৮১ ধারাটির প্রাথমিক পর্যালোচনা করা যাক। ৮১ (১) উপধারার তিনটি অনুচ্ছেদ, প্রথমটি বলতে পারি শর্তহীণ, পরের দুটি শর্তযুক্ত। শর্তহীণ অনুচ্ছেদের সংক্ষিপ্তসার: এক- এ ধারা প্রত্যেক নিগমিত কোম্পানীর জন্য প্রযোজ্য, দুই- প্রতি ইংরেজী পঞ্জিকা বৎসরে বার্ষিক সাধারণ সভা হিসাবে একটি সাধারণ সভা অনুষ্ঠান করবে, তিন- উক্ত সভা আহ্বানের নোটিশে তাকে বার্ষিক সাধারণ সভা বলে সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করবে, চার- দুটি বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠানের তারিখের তফাৎ পনের মাসের বেশী হবে না।
বাকি রইল শর্তযুক্ত দুটি অনুচ্ছেদ। এর প্রথমটিতে বলা হচ্ছে- এক- নিগমিত হওয়ার তারিখ থেকে সর্বোচ্য আঠারো মাস সময়ের মধ্যে প্রথম বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠান করতে পারবে, দুই- সে ক্ষেত্রে এর ফলে যে বছর নিগমিত হলো সে বছর এমনকি তার পরের বছরও প্রথম বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠান করার প্রয়োজন নাও পড়তে পারে। দ্বিতীয় শর্তযুক্ত অনুচ্ছেদের বক্তব্য: এক- প্রথম বার্ষিক সাধারণ সভা প্রথম আঠারো মাসের মধ্যে করতে হবে, দুই – যুক্তিযুক্ত কারণে পরিচালক পর্ষদ দ্বিতীয় থেকে পরবর্তী যে কোন বার্ষিক সাধারণ সভা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে অনুষ্ঠানে অসমর্থ হলে নির্ধারিত সময় অতিবাহিত হওয়ার তারিখ থেকে ত্রিশ দিনের মধ্যে রেজিষ্ট্রারের কাছে সময় বাড়ানোর জন্য আবেদন করতে পারে, তিন- আবেদনের প্রেক্ষিতে রেজিষ্ট্রার সভা অনুষ্ঠানের সময় বড়জোড় নব্বই দিন বা যে পঞ্জিকা বছরের জন্য উক্ত সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা সেই বছরের ৩১শে ডিসেম্বর পর্যন্ত- এই দুই মেয়াদের মধ্যে যা প্রথমে হয় সেই মেয়াদ পর্যন্ত বাড়াতে পারবেন।
এরপর ৮১ (২) উপধারার একমাত্র অনুচ্ছেদটি বলছে: এক- কোন কোম্পানী উপধারা ৮১(১) এর বিধান পালন করতে না পারলে, কোম্পানীর যে কোন সদস্য আদালতের কাছে বার্ষিক সাধারণ সভা সময়মত না করতে পারার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে সময় বাড়ানোর জন্য আহ্বান করতে পারে, দুই- আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালত উক্ত সভা আহ্বান, অনুষ্ঠান ও পরিচালনার জন্য যেরুপ সময় ও পদ্ধতি সমীচীন বলে বিবেচনা করবেন সেইরুপ অনুবর্তী ও আনুষঙ্গিক আদেশ প্রদান করতে পারবেন।
এবার আসা যাক ধারা ৮২ এর আলোচনায়। ধারাটির শুরুতেই বলছে এধারাটি ৮১ ধারার বিধান পালনে ব্যর্থতার দন্ড। দেখা যাক আইন কি দন্ডের বিধান করে। বলছে: এক- ধারা ৮১ এর উপধারা (১) অনুযায়ী কোন কোম্পানী উহার বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠানের (মানে- আঠরো/পনেরো/রেজিষ্ট্রারের দেয়া বড়জোড় তিন মাস এর মধ্যে) ব্যর্থতা আর দুই- ৮১ ধারার উপধারা (২) এর অধীনে প্রদত্ত আদালতের নির্দেশ পালনে ব্যর্থতা, আর সবশেষে তিন- এবার বলছে এই দুই ব্যর্থতার দন্ডের বিষয়, দুটো ব্যর্থতার যে কোনটাই হোক না কেন, উক্ত কোম্পানী এবং এর প্রত্যেক কর্মকর্তা, যিনি উক্ত ব্যর্থতার জন্য দায়ী তিনিও অনধিক দশ হাজার টাকা করে অর্থদন্ডে দন্ডনীয় হবেন এবং এইরুপ ব্যর্থতা চলতে থাকলে, তা এরকম ব্যর্থতা চলিত থাকাকালীন সময়ের প্রথম দিনের পরবর্তী প্রতিদিনের জন্য কোম্পানী ও উক্ত কর্মকর্তা উভয়েই অনধিক দু’শ পঞ্চাশ টাকা করে অর্থদন্ডে দন্ডনীয় হবেন।
লক্ষণীয়, কোম্পানীর এ ব্যর্থতা দুটোকে আইন আলাদা আলাদা করে দেখছে, আর সেটাই স্বাভাবিক।
৮১ (১) অনুযায়ী প্রথম ব্যর্থতা আঠারো/পনেরো মাসের ব্যাপার আর দ্বিতীয় ব্যর্থতা আবেদনে সাড়া দিয়ে রেজিষ্ট্রারের দেয়া সর্বোচ্য তিন মাসের ব্যাপার, দুটোই কোম্পানী সংশ্লিষ্ট। সেজন্য আইন এ দুটোকে এক ব্যর্থতার ব্রাকেটে ফেলেছে। অন্যদিকে আদালতের নির্দেশ পাওয়া সত্বেও কোম্পানী যদি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সভাটি না করতে পারে, সেটা কোম্পানীর পক্ষ থেকে আবেদনের ফলে আদালতের সুস্পষ্ট নির্দেশ অমান্য করার ধৃষ্টতা জনিত চরম ব্যর্থতা তাই সেটাকে প্রথমটি থেকে আলাদা ভাবে দেখেছে। এ প্রশ্ন উঠতেই পারে, যদি পৃথকই হলো, তবে দুএর বেলায়ই শাস্তি এ করকম কেন? এর উত্তর সহজ। কারণ এ দুক্ষেত্রেই চুড়ান্ত বিচারে সদস্যেরা সবাই সমান ভাবে কোম্পানীর পরিচালনা পর্ষদের অবহেলার শিকার ও তার ফলে তারা তাদের বৈধ অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ফলাফলের দৃষ্টিতে তাই একই রকম শাস্তির বিধান আইনে রয়েছে।
আমাদের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছে বকেয়া বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠানের জন্য আদালতে যাওয়া বাধ্যতামূলক কি’না তা যাচাই করা। সেজন্য আলোচনা ওই নির্দিষ্ট বিন্দুতে কেন্দ্রীভুত থাকা দরকার। তাই ৮২ ধারাটির বিষয়ে যে আলোচনা আমরা আগে করেছি তা আর একবার দেখি।
৮২ ধারাটি ৮১ ধারার বিধান পালনে ব্যর্থতার দন্ড হিসাবে বলছে: এক- ধারা ৮১ এর উপধারা (১) অনুযায়ী কোন কোম্পানী উহার বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠানের ব্যর্থতা, আর দুই- ৮১ ধারার উপধারা (২) এর অধীনে আবেদনের প্রেক্ষিতে প্রদত্ত আদালতের নির্দেশ পালনে ব্যর্থতা। সবশেষে বলছে এই দুই ব্যর্থতার দন্ডের বিষয়, এ দুটো ব্যর্থতার জন্যই হোক কিম্বা যে কোন একটা, যাই হোক না কেন, উক্ত কোম্পানী এবং এর প্রত্যেক কর্মকর্তা, যিনি উক্ত ব্যর্থতার জন্য দায়ী তিনিও অনধিক দশ হাজার টাকা করে অর্থদন্ডে দন্ডনীয় হবেন এবং এইরুপ ব্যর্থতা চলতে থাকলে, তা এরকম ব্যর্থতা চলিত থাকাকালীন সময়ের প্রথম দিনের পরবর্তী প্রতিদিনের জন্য কোম্পানী ও উক্ত কর্মকর্তা উভয়েই অনধিক দুইশত পঞ্চাশ টাকা করে অর্থদন্ডে দন্ডনীয় হবেন।
তর্কের খাতিরে ধরে নিচ্ছি: (১) আঠারো/পনেরো মাস পার হয়ে গেল বার্ষিক সাধারণ সভা হলো না; কিম্বা (২) রেজিষ্ট্রারের দেয়া সর্বোচ্য তিন মাসও পার হলো তবুও বার্ষিক সাধারণ সভাটি হলো না; (৩) আদালতের দ্বারস্থও কেউ হলো না (মনে রাখা দরকার আদালত স্বত:প্রণোদিত হয়ে সময় বাড়াবে না); (৪) সময় অতিবাহিত হওয়ার পরপরই যদি পরিচালনা পর্ষদ বকেয়া সভাটি করতে চায়, তাহলে কি হবে? কোম্পানী কি বার্ষিক সাধারণ সভা না করে কোন সদস্যের আদালতে যাওয়ার অপেক্ষায় বসে থাকবে, নাকি থাকা উচিৎ? নির্দিষ্ট সময় পার হলেই যদি কেবল আদালতের মুখের দিকে চেয়ে থাকি তা হলে – যা আগেই বলেছি – প্রথমত: কোম্পানীর অর্থ ও সময় দুইই যাবে, দ্বিতীয়ত: বাড়তি যোগ হবে আদালতের মামলার বোঝার উপর শাকের আটি চড়ানো, তৃতীয়ত: আদালতের শরণাপন্ন হয়ে সদস্যদের অধিকার আদায় করার সময়কে আরো দীর্ঘায়িত করা যা নিশ্চয়ই আইনের উদ্দেশ্য নয় । চতুর্থত: সমাধান যদি কেবল আদালতের হাতেই থাকত, তা হলে দশ হাজার টাকা আর কোম্পানী ও কর্মকর্তা উভয়েরই দৈনিক সর্বোচ্য দু’শ পঞ্চাশ টাকা করে জরিমানার বিধান থাকত না। পাল্টা প্রশ্ন উঠতেই পারে। তাহলে কি পরিচালনা পর্ষদকে এর মাধ্যমে অনির্দিষ্টকালের জন্য অনৈতিক স্বাধীনতা দেয়া হচ্ছে না? স্বীকার করতেই হবে – হ্যাঁ হচ্ছে। নিজের অধিকার সম্মন্ধে যে লোক সচেতন নয় সে সদস্য হবার যোগ্য নয়। আর যদি হয়ই, তা হলে তাকে পর্ষদের এই অনৈতিক স্বাধীনতাকে স্বীকার না করে উপায় কি?
আমার ধারণা: (১)এ পর্যন্ত যে কোম্পানীগুলো সময় বাড়ানোর আবেদন নিয়ে আদালতে গেছে, তাদের কাউকে আদালত ফেরায়নি। (২) এ পর্যন্ত বকেয়া সভা করার জন্য কাউকে দশ হাজার টাকা আর দৈনিক দু’শ পঞ্চাশ টাকা জরিমানার বিধান আইনে থাকলেও তার প্রয়োগ নেই।
ফলে আইনত আদালতের দ্বারস্থ না হয়েও জরিমানা দিয়ে বকেয়া এজিএম করা যাবে। তবে গুরুত্বপূর্ণ দুটি প্রশ্ন থেকে যায়: (১) বানিজ্য মন্ত্রণালয় বিষয়টি সত্বর স্পষ্টীকরণ করবেন কি ও রেজিষ্ট্রার মহোদয়কে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিবেন কি? (২) দশ হাজার টাকা আর দৈনিক দু’শ পঞ্চাশ টাকা জরিমানা আদায়ের জন্য রেজিষ্ট্রার মহোদয়ের অনলাইন সার্ভিস ব্যবস্থা প্রস্তুত কি?
লেখক: গবেষক কোম্পানি ল, পেশাদার হিসাববিদ ও সহ প্রতিষ্ঠাতা, আইসিএসবি।