September 20, 2024 - 5:29 pm
তথ‌্য অ‌ধিদপ্ত‌রের নিবন্ধন নম্বরঃ ৭৭
Homeবিশেষ প্রতিবেদনবিলম্বিত কর : বাংলাদেশ প্রেক্ষিত

বিলম্বিত কর : বাংলাদেশ প্রেক্ষিত

spot_img

এন জি চক্রবর্তী এফসিএ, এফসিএস:

ইন্টারন্যাশনাল ফিনান্সসিয়াল রিপোর্টিং স্ট্যার্ন্ডাডস্ (আইএফআরএস্) ও ইন্টারন্যাশনাল এ্যাকাউন্টিং স্ট্যার্ন্ডাডস (আইএএস্) অনুযায়ী হিসাব প্রণয়নের ক্ষেত্রে প্রদেয় আয়কর, আর কর আইন অনুসারে প্রদেয় আয়কর এ দু’য়ের মধ্যে পার্থক্য হতে পারে আর ’বিলম্বিত কর’ হিসাব সৃষ্টির মাধ্যমে সেই পার্থক্যকে দূর করার কথা ’ আইএএস্’এ বলা হয়েছে।

প্রসংগত: আন্তর্জাতিক পুঁজির সুবিধার জন্য বাংলদেশে কোম্পানির হিসাব প্রণয়নের ক্ষেত্রে ’আইএফআরএস্ ’ ও ’ আইএএস্’ এর অনুসরণ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। ষোলটি ’ আইএফআরএস্ ’ আর পঁচিশটি ’ আইএএস্’ ইতিমধ্যে কার্যকর করা হয়েছে। এর মধ্যে আয়কর সম্পর্কিত ১২ নম্বর ’আইএএস্’ টি আমাদের বর্তমান আলোচ্য বিষয়ের সাথে সংগতিপূর্ন যেখানে ’বিলম্বিত কর’ এর বিষয়ে বলা হয়েছে।

বিলম্বিত করের বিষয়টি এরকম: ’কর’ মানে আয়কর, ’বিলম্বিত’ কথাটির সরল অর্থ ’এখন নয় পরে’। তবে আমাদের আজকের বিষয়বস্তুকে বুঝতে হলে একটু ভিতরে ঢোকা দরকার। কর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দু’জন – একজন হলো ’ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ’ যিনি কর দেবেন, আরেকজন হলো ’কর কর্তৃপক্ষ’, যিনি কর আদায় করবেন। ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট হিসাবরক্ষক যিনি আন্তর্জাতিক হিসাব মান অনুসারে হিসাব প্রস্তুত করবেন। আর কর কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে কর কর্মকর্তা কর আইন অনুযায়ী কর আদায় করবেন। যেহেতু ’হিসাবমান’ আর ’কর আইন’ এ দু’য়ের মধ্যে ফারাক রয়েছে তাই দুজনের কাছে যৌক্তিক কারণেই করযোগ্য মুনাফা দু’রকম হতে পারে। সুতরাং একটাকে বলতে পারি ’ব্যবস্থাপনা মুনাফা’ আরেকটিকে ’কর মুনাফা’। ’ব্যবস্থাপনা মুনাফা’ র উপর হিসাবরক্ষক প্রযোজ্য হারে যেটুকু কর প্রদেয় হয় তা যথারীতি ’নিয়মিত কর খরচ’ ও বকেয়া থাকলে ’দায়’ দেখাবেন, এতে নতুনত্ব কিছু নেই। যেটা নতুন তাহলো, করযোগ্য মুনাফার এই যে তারতম্য তার জন্য যেটুকু কম বা বেশি হলো তার উপর ’বিলম্বিত কর’ হিসাব করতে হবে। যদি হিসাবরক্ষকের কাছে করপূর্ব মুনাফা থেকে করযোগ্য মুনাফা বেশি হয় তাহলে বেশিটুকর উপরে একদিকে ’বিলম্বিত কর খরচ’ ও অন্যদিকে ’বিলম্বিত কর দায়’ হিসাবে দেখাতে হবে। আর যদি কম হয় তো বিপরীতভাবে কমটুকু একদিকে ’বিলম্বিত কর আয়’ ও অন্যদিকে ’বিলম্বিত কর দাবি’ হিসাবে দেখাতে হবে।

কথা এখনো রয়ে গেল। এই যে তারতম্যের কথা বলা হলো, পরবর্তিতে সমন্বয়ের কথা মাথায় রেখে যথার্থভাবে এই তারতম্যকে দু’ভাগে ভাগ করা হয়েছে, এক হচ্ছে ’সাময়িক’ আর অন্যটি ’স্থায়ী’। তারতম্যটি পরবর্তিতে সমন্বয়যোগ্য হলে ’সাময়িক’ হিসাবে ’বিলম্বিত কর’ এর মর্যাদা পাবে আর অসমন্বয়যোগ্য বা ’স্থায়ী’ হলে বিলম্বিত করের বদলে সেটি যথারীতি ’নিয়মিত কর খরচ’ ও বকেয়া থাকলে ’দায়’ দেখাতে হবে। এতেও কোন সমস্যা নেই।

এখন দেখা যাক, কি কি কারণে এই তারতম্য ঘটতে পারে। অবচয় পদ্ধতি বা অবচয় হার ভিন্ন হলে অবচয় খাতে ’সাময়িক’ পার্থক্য হতে পারে। ’ব্যবস্থাপনা মুনাফা’ আর ’কর মুনাফা’ এর মধ্যে পার্থক্যের সম্ভাব্য আরো কারণ হিসাবে আইএএস্টিতে অন্যান্য যেসব সাময়িক’ পার্থক্যের উদ্ভব হতে পারে বলে বলা হয়েছে তার মধ্যে যেমন: ইনভেন্টরি মূল্যায়নে পদ্ধতিগত ভিন্নতা, এ্যাক্রুয়াল পদ্ধতিতে ও নগদ ভিত্তিতে নির্ণীত রেভিনিউ এর পার্থক্য ইত্যাদি। এগুলোকে ’সাময়িক’ পার্থক্য বলা হয়েছে, কারণ আজ না হলেও কাল এ আয় বা খরচগুলো হিসাবে অন্তর্ভুক্ত ও সমন্বয় হবে।

উপরেরগুলো বাদেও এমন কিছু কিছু বিষয় বাংলাদেশের কর আইনে আছে যা বিদেশে আছে বলে আমার জানা নেই (অন্তত: এ হিসাবমানটি থেকে অনুমান করা যায়) এবং সেগুলো ’স্থায়ী’ পার্থক্যের জন্ম দেয়। যেমন খরচের পূর্ব নির্দ্ধারিত ঊর্দ্ধসীমা – ’আপ্যায়ন ব্যয়’, ’ফ্রি স্যাম্পল খরচ’ ইত্যাদি ক্ষেত্রে। আবার আরো কিছু খরচ আছে যা পূর্ব নির্ধারিত ঊর্দ্ধসীমা না থাকলেও উৎসে কর কর্তন ও কর্তিত কর ব্যাংকে জমা দেওয়ার ব্যর্থতায় পুরোটা করযোগ্য আয় হিসাবে করদায় বেড়ে যাবে। এসমস্ত বিষয়কে হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য আইএএস’ এ নীতিগতভাবে বাধ্যবাধকতা থাকলেও আর এগুলো নির্ণয়যোগ্য হলেও বাস্তবে বাংলাদেশে দু’একটি ব্যতিক্রম ছাড়া তার প্রয়োগ আমার চোখে পড়েনি।

আবার এমন কিছু বিষয় আছে যা পূর্ব নির্দ্ধারিত তো নয়ই, আগাম অনুমান করাও মুস্কিল। তবে কর কর্মকর্তা বাস্তবে প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে তা করছেন। যেমন- বিক্রী প্রাক্কলন, গ্রস প্রফিট হার বাড়ানো, স্থায়ী সম্পত্তির সংযোজন অগ্রাহ্যকরণ ইত্যাদি। ফলে ওগুলো স্থায়ী পার্থক্যের জন্ম দেয়। একমাত্র উপরওয়ালা ছাড়া কি হিসাবরক্ষক, কি ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ, এমনকি কর নির্দ্ধারণে যতক্ষণ করকর্মকর্তা হাত না দেন ততক্ষণ পর্যন্ত খোদ কর কর্তৃপক্ষ, কারুরই সাধ্য নেই এগুলোর আগাম নির্দ্ধারণ তো ’দূর কি বাত’ অনুমান করাও মুস্কিল। ফলে বাংলাদেশে এসমস্ত কারণে উদ্ভুত স্থায়ী পার্থক্য বিলম্বিত করের মাধ্যমে সমন্বয় করা অসম্ভব।
আইএএস্ ১২ তে উল্লেখিত বিলম্বিত কর বিষয়ক যে বিধি দেয়া হয়েছে, তা শুধুমাত্র ’কর খরচ’/’কর আয়’ আর ’কর দায়’/’কর দাবী’ এর মধ্যে সীমাবদ্ধ। বাংলাদেশে বর্ণিত অবস্থা দু’টি কারণে আপত্তিকর।

প্রথমত: বাস্তব অবস্থার প্রেক্ষিতে একমাত্র অবচয় ছাড়া অন্যন্য খরচ যেমন অননুমোদন যোগ্য ’আপ্যায়ন ব্যয়’, ’ফ্রি স্যাম্পল খরচ’ ইত্যাদি আগাম জানা সত্বেও বিলম্বিত কর নির্ণয় করা হয়না। কিংবা কর্তণযোগ্য হলেও প্রদানের সময় উৎসে কর কর্তন করা হয়নি এমন ব্যয় কিংবা ব্যাংকের মাধ্যমে পরিশোধের নিয়ম থাকলেও নগদে করা হয়েছে এমন ব্যয় ইত্যাদির যে পরিমান তার জন্যও বিলম্বিত কর নির্ণয় করা হয়না। ফলে ’স্থিতিপত্র’ ’ট্রু আর ফেয়ার’ রইল না, এসবগুলো কর পরবর্তি মুনাফার সাথে সমন্বয়ের কোন ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগই থাকল না। অবস্থাটা এমন দাঁড়ালো যে করও দিলাম কিন্তু তার সংশ্লিষ্ট বেনিফিট বা ফলাফল ’রিটেইন্ড আর্নিংস’ বা ’পুঞ্জিভুত মুনাফা’য় পড়লোই না। এটাকে ন্যায্য বলা যায় না।

দ্বিতীয়ত: চলতি বছরের অনুমান নির্ভর প্রাক্কলিত বিক্রির উপর গত বছরের ’গ্রস মুনাফা’ হার প্রয়োগ করে মুনাফা বৃদ্ধিজনিত আয়, আবার অনুমানের উপর নির্ভর করে কিছু খরচের অনুমোদন দেয়া হয় না। এই অনুমান নির্ভর করারোপের ফলে আইএএস্ অনুসরণ করে হিসাব প্রণয়নের সময় বিলম্বিত করদায় সংশ্লিষ্ট উদ্ভুুত ’স্থায়ী’ পার্থক্য নির্দ্ধারণ ও সে অনুযায়ী তা নিরসন করা বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে সাধ্যাতীত।

এমতাবস্থায় বাংলাদেশের আইনী কাঠামো সাপেক্ষে করণীয় হচ্ছে: (১) অবচয়ের পার্থক্যের সংগে নির্ণয়যোগ্য সম্ভাব্য অনুমোদনঅয়োগ্য সমস্ত অস্থায়ী পার্থক্যকে বিলম্বিত করের অন্তর্ভুক্ত করা (২) আগামী বাজেটে আয়কর আইনে (ক) বিক্রি/গ্রস মুনাফা ভিত্তিক অনুমিত মুনাফা প্রাক্কলনের সুযোগ রহিতকরণ, (খ) শিল্পভিত্তিক সেক্টর ওয়ারি সম্ভাব্য খরচের প্রতিটি খাতের অনুমোদনযোগ্য খরচের ঊর্দ্ধসীমা নির্দ্ধারণ, (গ) ’স্থায়ী’ পার্থক্যের ফলে উদ্ভুত অংক ’ইন্টান্জিবল’ হিসাবে রিটেইন্ড আর্নিংস বা পুঞ্জিভুত মুনাফায় প্রতিফলনের আইনী সুযোগ সৃষ্টি, (ঘ) নগদ অর্থ প্রবাহ বিবরণীর ’ব্যবসা পরিচালনা থেকে উদ্ভুত নগদ প্রবাহ’ এর ভিত্তিতে আয়কর নির্দ্ধারণ এবং (৩) এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট আইএএস্টিকেও বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে সংশোধন করা দরকার।

এদিকে টপ টেন ফেব্রিক্স অ্যান্ড টেইলার্স লিমিটেডের মালিকানা নিয়ে কোম্পানি আইনে দায়ের করা মামলা নিষ্পত্তি করে গত বুধবার (২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩) বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের একক হাইকোর্ট বেঞ্চ রায়ের পাশাপাশি পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন।

একই সঙ্গে দেশের বর্তমান কোম্পানি আইন সংশোধন করে নতুন কোম্পানি আইন প্রণয়ন এবং প্রাইভেট ও পাবলিক লিমিটেড কোম্পানির মালিকানা সংক্রান্ত বিরোধ দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে ১৪ পরামর্শ দিয়ে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট।

রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেন, বর্তমান কোম্পানি আইন ১৯৯৪ অনেক ক্ষেত্রেই প্রয়োগের অনুপযোগী। কোম্পানি আইন ১৯৯৪ এটিকে বলা হলেও প্রকৃতপক্ষে এটি পুরোটাই কোম্পানি আইন ১৯১৩-ই রয়ে গেছে। এ অবস্থায় বাংলাদেশকে উন্নত দেশের পর্যায়ে নিতে হলে অবশ্যই ১০৯ বৎসরের পুরনো কোম্পানি আইন আমূল পরিবর্তন একান্তভাবে অপরিহার্য।

সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত রায়ে হাইকোর্ট বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে যে ১৪টি পরামর্শ দিয়েছেন সেগুলো হল-

১. অতি দ্রুততার সঙ্গে ভারতের কোম্পানি আইনের আদলে বাংলাদেশের কোম্পানি আইন সংশোধন করে নতুন আইন প্রণয়ন। প্রতি বৎসর উক্ত আইনের হালনাগাদকরণ করার নিমিত্তে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শ।

২. প্রতিটি জেলায় কোম্পানির সংখ্যানুপাতে এক বা একাধিক কোম্পানি আইনের ট্রাইব্যুনাল গঠন করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের পরামর্শ প্রদান।

৩. প্রতিটি বিভাগে একটি করে কোম্পানি আপিল্যাট ট্রাইব্যুনাল গঠন করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে পরামর্শ প্রদান।

৪. কোম্পানি আইনের অধীনে অপরাধ সমূহের জন্য বিশেষ ফৌজদারি আদালত প্রতিষ্ঠার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে পরামর্শ প্রদান।

৫. যৌথমূলধনী কোম্পানি ও কার্যসমূহের পরিদপ্তরকে (আরজেএসসি) আধুনিকীকরণ ও আইনি কাঠামো শাক্তিশালীকরণের নিমিত্তে এবং এর সেবার উন্নয়নে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে পরামর্শ প্রদান।

৬. করপোরেট ল কোড বাংলায় প্রকাশ করে প্রত্যেক কোম্পানির অফিসে সংরক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশ প্রদান করার জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে পরামর্শ প্রদান।

৭. প্রত্যেক কোম্পানিতে একজন স্থায়ী আইন কর্মকর্তার পদ সৃজন করে স্থায়ী আইন কর্মকর্তা রাখা এবং কোম্পানি আইনে অভিজ্ঞ একজন আইনজীবীকে পরামর্শক রাখা বাধ্যতামূলক করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে পরামর্শ প্রদান।

৮. প্রতিটি জেলায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন কোম্পানি গঠন, ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন। নিয়মিত প্রতিটি কোম্পানির কর্মকর্তাদেরকে বৎসরে অন্তত একবার উক্ত প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ বাধ্যতামূলক করার জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে পরামর্শ প্রদান।

৯. প্রতি কোম্পানিতে একজন করে নিরপেক্ষ পরিচালক, কোম্পানির সচিব, অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষক নিয়োগ বাধ্যতামূলক করার নিমিত্তে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে পরামর্শ প্রদান।

১০. পরিশোধিত মূলধন ৫ কোটি টাকার উপরে হলে প্রত্যেক কোম্পানিতে সার্বক্ষণিক কোম্পানি সচিব রাখা বাধ্যতামূলক করে (যারা আইসিএসবির সদস্য হবে) প্রয়োজনীয় পরিপত্র ইস্যু করার জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে পরামর্শ প্রদান।

১১. কোম্পানির কার্যালয় যে শহরে নিবন্ধিত, সে শহরে এজিএম বাধ্যতামূলক করে দ্রুত পরিপত্র ইস্যু করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে পরামর্শ প্রদান।

১২. শেয়ারবাজারের আইনের সঙ্গে সংঘাত এড়ানো, কোম্পানির বার্ষিক সাধারণ সভায় (এজিএম) অনাহূত পরিস্থিতির অবসান, রিটার্ন দাখিল সহজতর করা ইত্যাদি বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে পরামর্শ প্রদান

১৩. এজিএমে বা অন্য কোথাও কোম্পানির পক্ষ থেকে শেয়ারহোল্ডারদের কোনোরূপ উপহার, উপঢৌকন, নগদ অর্থ প্রদান সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ করে বিধি প্রণয়ন। এজিএম অনুষ্ঠানে ব্যর্থ হলে সংশ্লিষ্ট কোম্পানির নিবন্ধন আপনা আপনি বাতিল মর্মে বিধি প্রণয়নের পরামর্শ প্রদান।

১৪. লাভ-ক্ষতির হিসাব, উদ্বৃত্তপত্র, রিটার্ন বা করের বিষয় আরজেএসসিতে দাখিল করার বিষয়ে সুনির্দিষ্টভাবে বিধি বিধান করার পরামর্শ প্রদান।

এসময় আদালত রায়ের পর্যবেক্ষণে আরো বলেন, প্রায় ১৭ কোটি জনসংখ্যার দেশে কয়েক লাখ প্রাইভেট ও পাবলিক লিমিটেড কোম্পানির জন্য একটি মাত্র কোম্পানি আদালত। অসংখ্য কোম্পানি বিরোধের জন্য একটি কোম্পানি বেঞ্চ থাকার কারণে দৈনন্দিন কার্যক্রম চরম ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। দ্রুত বিরোধ নিষ্পত্তি করতে পারলে কোম্পানিগুলো নিজে উন্নত হয়ে দেশকেও উন্নত করতে ভূমিকা রাখতে পারবে। আধুনিক ও উন্নত বিশ্বের আদলে আমাদের কোম্পানি আইনকে ঢেলে না সাজালে উন্নত বিশ্বের পর্যায়ে উঠতে অনেক সময় লেগে যাবে। উন্নত ও যুগোপযোগী কোম্পানি আইনেই উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশ গড়ে উঠবে।

প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য বাণিজ্যমন্ত্রী, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ও আইন কমিশনের চেয়ারম্যানকে রায়ের অনুলিপি দ্রুত পাঠাতে বলা হয়েছে।

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন

সর্বশেষ সংবাদ