সম্পাদকীয় : প্রায় তিন বছর স্থগিত থাকার পর মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার বাংলাদেশিদের জন্য আবার খুললো। রোববার (১৯ ডিসেম্বর) মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে এ ব্যাপারে দুই দেশের মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়।
সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করেন বাংলাদেশের প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমেদ ও মালয়েশিয়ার মানবসম্পদমন্ত্রী দাতুক সেরি সারাভানন। মালয়েশিয়ার কর্মী নিয়োগ নিয়ে বিশৃঙ্খলার প্রেক্ষিতে একটা পর্যায়ে জি টু জি পদ্ধতিতে কর্মী নিয়োগ শুরু হয়েছিল। মাত্র ২৫ হাজার টাকায় ওই পদ্ধতিতে বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়ায় কর্মী যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু নানা কারণে ওই প্রক্রিয়া খুব একটা সাফল্য পায়নি। মাঝখান থেকে বেসরকারি জনশক্তি রফতানিকারকরা এবং কিছু অসাধু মানব পাচারকারীরা অপতৎরতা শুরু করে, ফলে কিছুটা বিরক্ত হয়ে মালয়েশিয়া বাংলাদেশ থেকে শ্রমশক্তি আমদানি বন্ধ করে দেয়। মালয়েশিয়া একটা বড় শ্রমবাজার এবং কাছের দেশ হওয়াতে বিমান ভাড়াও কম এসব নানা কারণে সরকার মালয়েশিয়ায় লোক পাঠানো পুনরায় শুরু করার জন্য নানাভাবে চেষ্টা অব্যাহত রাখে। কিন্তু কোনভাবেই তা খুলছিল না। সরকার বিশেষ করে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কমসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমেদ বিষয়টা নিয়ে বেশ তৎপর ছিলেন, যা হোক শেষ পর্যন্ত বাজারটা খুলেছে এটাই বড় কথা। এখন এই সুযোগের সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে এবং এই সম্ভাবনাময় শ্রমবাজারটা ধরে রাখতে হবে।
নতুন সমঝোতা স্মারক অনুযায়ী বাংলাদেশি কর্মীদের মালয়েশিয়া প্রান্তের সব খরচ নিয়োগকর্তা বহন করবেন। যেমন রিক্রটমেন্ট এজেন্সি নিয়োগ, মালয়েশিয়ায় নিয়ে যাওয়া, তাদের আবাসন, কর্মে নিয়োজিত করা এবং কর্মীদের দেশে ফেরত পাঠানোর খরচ। এছাড়াও মালয়েশিয়ায় পৌঁছনোর পর কর্মীদের ইমিগ্রেশন ফি, ভিসা ফি, স্বাস্থ্য পরীক্ষার খরচ, ইন্সুরেন্স, করোনা পরীক্ষা, কোয়ারেন্টাইন খরচসহ সব খরচ নিয়োগকারী বহন করবে।
সকল শর্তই বাংলাদেশের পক্ষে হয়েছে। এতে দেখা যাচ্ছে কর্মীদের কোনও খরচই আর থাকছে না। এটা ভালো যে দেরিতে হলেও চুক্তি হয়েছে। মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি শ্রমিকদের বড় সমস্যা হচ্ছে শৃঙ্খলা ভঙ্গ করা, ভিসার মেয়াদ শেষ হলেও চুরি করে থেকে যাওয়ার চেষ্টা, বৈধ কাগজপত্র ছাড়া নানা অছিলায় সেদেশে ঢোকা প্রভৃতি। এখন শ্রমবাজাটা খুললো। এটা বাংলাদেশের জন্য দ্বিতীয় বৃহত্তম শ্রমবাজার। এই বাজার ধরে রাখা অনেকটা নির্ভর করছে কর্মীদের পেশাদার ও সুশৃঙ্খল ব্যবহারের ওপর। এজন্য দেশ থেকেই তাদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণ এবং নিয়ম মেনে চলার জন্য প্রয়োজনীয় জ্ঞান দিয়ে দিতে হবে। অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে বাজারটা উদ্ধার করা হয়েছে, এটা নষ্ট হতে দেয়া যাবে না।