জাকির হোসেন আজাদী: অভিযোগ উঠেছে বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের নামে খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কেডিএ) কর্তৃক লটারির মাধ্যমে বরাদ্দকৃত খুলনার ময়ূরী আবাসিক প্রকল্পে প্লট আকৃতি চরমভাবে বিকৃত করে প্লটের উপযোগীতা মারাত্মকভাবে নষ্ট করার মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্থ করা হয়েছে। যেখানে বিশেষ প্রভাবশালীদের অবৈধ রাস্তার কারণে মুক্তিযোদ্ধা সন্তানদের পাওয়া প্লটটি ব্যবহার অনুপযুক্ত ও পরিত্যক্ত পর্যায়ে পড়েছে। এর প্রতিকার চেয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন করেছেন এই প্লটের মালিক ভুক্তভোগী জি এম হারুন উর রশিদ। পিতা- মৃত জি এম আমজাদ হোসেন। গ্রাম দক্ষিণ চন্দনীমহল। ডাকঘর- চন্দনীমহল। থানা- দিঘলিয়া, জেলা- খুলনা।
আবেদনে ভুক্তভোগী জি এম হারুন উর রশিদ বলেন, “আমি নিম্নস্বাক্ষরকারী বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে আমি একটি সরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আছি। লটারীর মাধ্যমে খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কেডিএ) আমাদের ৩ ভাইয়ের সম্মিলিত নামে ময়ূরী আবাসিক প্রকল্পে একটি ৫ কাঠার প্লট বরাদ্দ দেয়। উক্ত প্লটের অংশীদার আমার অপর দু’ভাইও প্রকৌশলী এবং তারাও বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। ময়ূরী আবাসিক প্রকল্পে ১ম পর্যায়ে দরখাস্ত আহবান করা হলে আমরা মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ৩ ভাই সম্মিলিতভাবে ৫ কাঠার একটি প্লটের জন্য আবেদন করি। লটারীর মাধ্যমে আমরা নির্বাচিত হই এবং আমাদের নামে ৫ কাঠার একটি প্লট বরাদ্দ দেয়া হয়। যে স্বল্প ক’জন প্লট গ্রহীতা সর্বাগ্রে প্লটের সম্পূর্ণ মূল্য পরিশোধ করেন তাদের মধ্যে আমরা অন্যতম।”
তিনি আরও বলেন, ” কেডিএ লটারীর মাধ্যমে প্লট গ্রহীতাদের মাঝে প্লট বন্টন করে। তবে এক্ষেত্রে কেডিএ প্রবিধানমালা ভঙ্গ করে অপেক্ষাকৃত ভাল প্লটগুলো রিজার্ভ রেখে অপেক্ষাকৃত খারাপ ও খর্বাকৃতির প্লটগুলো ১ম পর্বের লটারীতে অন্তর্ভুক্ত করে। লটারীর মাধ্যমে আমাদের নামে বিসমবাহু ত্রিভুজাকৃতির ও একটি খর্বাকৃতির প্লট যার নং ২৩৯ বরাদ্দ দেয়। ১ম পর্যায়ের এবং সর্বাগ্রে সম্পূর্ণ টাকা পরিশোধ করার পরও কেডিএ কিভাবে প্রবিধানমালা লংঘন করে একজন গ্রাহককে প্রমাণ সাইজের প্লট প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত করে খর্বাকৃতির একটি প্লট বরাদ্দ দিল তা আমাদের বোধগম্য নয়”।
তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে কেডিএ’র নীতি নির্ধারকদের মধ্য থেকে আপত্তি উত্থাপিত হলেও কেডিএ চেয়ারম্যান তা কর্ণপাত করেননি। আমাদের নামে বরাদ্দকৃত প্লটটির সম্মুখে রাস্তা এবং পিছন দিকে খাল ও ওয়াক ওয়ে। প্লটটি একপ্রান্তে অবস্থিত এবং এর আকৃতি অনেকটা লম্বা লেজওয়ালা সাপ ঘুড়ির মত দেখতে। প্রকৌশলীদের মতে যেখানে কোন আবাসিক ভবন নির্মাণ করা সম্ভব নয়। বড়জোর কার পার্কিং এরিয়া হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। অথচ এটি নাকি কেডিএ’র আদর্শমানের একটি আবাসন প্রকল্প।”
তিনি বলেন, ” উক্ত প্রকল্পে কেডিএ’র অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারীর নামেও প্লট বরাদ্দ দেয়া হয়। বিশ্বস্তসূত্রে জানা যায় যে, তাদের মধ্যে অনেককে নিয়ম বহির্ভূতভাবে প্লট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। ইতোপূর্বে কেডিএ’র প্লট পাওয়া কর্মকর্তা-কর্মচারীগণও কেডিএ’র প্রবিধানমালা ভঙ্গ করে পুনরায় এখানে প্লট বরাদ্দ নিয়েছেন এবং এখনও নিচ্ছেন। তাদের নামে প্রকল্পের ভাল ভাল প্লটগুলো বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। অথচ সর্বাধিক মূল্য পরিশোধকারী এবং নিয়মতান্ত্রিকভাবে প্লট বরাদ্দ পাওয়া সাধারণ নাগরিকদের সবচেয়ে খারাপ ও খর্বাকৃতির প্লটগুলো বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। কেডিএ একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান, এটি কোন;ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নয়।
এটি জনগণের কল্যাণের জন্য কাজ করবে, এটাই জনগণ প্রত্যাশা করে। অথচ কেডিএ কাঠা প্রতি ৯.৫ লক্ষ টাকা এবং কিস্তিতে উক্ত মূল্যের উপর ১১% হারে সুদ গ্রহণ করে জনসাধারণের মাঝে প্লট বরাদ্দ দিয়েছে।”
তিনি বলেন, ” অন্যদিকে, সাধারণ জনগণকে প্রমাণ সাইজের প্লট পাওয়া থেকে বঞ্চিত করে স্বপ্ন মূল্যে এবং বিশেষ বিবেচনায় নিজস্ব কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাঝে অপেক্ষাকৃত ভাল ভাল প্লটগুলো বরাদ্দ দিয়েছে, যা প্রতারণার শামিল বলে মনে করি।বাংলাদেশের কোন উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ এত উচ্চ মূল্যে জনসাধারণের মাঝে প্লট বিবরণ করেছে মর্মে আমাদের জানা নেই। কেডিএ’র দৌরাত্ব এখানে থেমে থাকেনি। এরপর শুরু হয় কেডিএ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নামে বরাদ্দকৃত প্লটের সৌন্দর্য ও
সুযোগসুবিধা বৃদ্ধির প্রতিযোগিতা।”
তিনি বলেন, “মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক অনুমোদিত মাস্টার প্লান পরিবর্তন করে তারা প্লটের আকৃতি পরিবর্তন, নিজস্ব প্লটের পাশ দিয়ে অপ্রয়োজনীয় অতিরিক্ত রাস্তা নির্মাণ, মূল্য পরিশোধ ব্যতিরেকে প্রকল্পের অতিরিক্ত জমি নিজ নিজ প্লটে অন্তর্ভুক্ত করাসহ নানা রকম অনৈতিক কার্যক্রম বাস্তবায়নের লক্ষ্যে নতুন করে প্লান প্রস্তুত করে তা;অনুমোদনের ব্যবস্থা করে। আর এক্ষেত্রে বলির পাঠা বানানো হয় আমাদের নামে বরাদ্দকৃত খর্বাকৃতির প্লটটিকে। কেডিএ’রএকজন নির্বাহী প্রকৌশলী’র (চলতি দায়িত্ব) নামে বরাদ্দকৃত ২৪১ নং প্লটটির সৌন্দর্যবৃদ্ধি কল্পে ২৪০ এবং ২৪১ নং প্লটের মাঝ দিয়ে পার্কে যাওয়ার জন্য অপ্রয়োজনীয় এবং অতিরিক্ত একটি রাস্তা নির্মাণ করা হয় এবং উক্ত রাস্তা নির্মাণের জন্য আমাদের ২৩৯ নং প্লট থেকে প্রায় ১.৫ কাঠা জমি বের করে নিয়ে আমাদের প্লটটিকে এমন একটি আকৃতি প্রদান করা হয় যেখানে আদৌ কোন অবকাঠামো নির্মাণ করা সম্ভব নয়। কেডিএ’র একজন উচ্চাভিলাষী কর্মকর্তার প্লটের সৌন্দর্য বৃদ্ধির বলির পাঠা হই আমারা ৩ মুক্তিযোদ্ধার সন্তান।”
তিনি বলেন, ” অথচ কেডিএ কর্মকর্তার প্লটের পাশ দিয়ে উক্ত রাস্তা নির্মাণ করার কোন যৌক্তিকতাই নেই। কারণ মাস্টার প্লান ভঙ্গ করে নতুনভাবে নির্মিত রাস্তাটির ঠিক দু’টি প্লট পরেই রয়েছে পার্কে প্রবেশের মূল রাস্তা। এ অনৈতিক কর্মটি যে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভবে করা হয়েছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। সবচেয়ে লক্ষ্যণীয় বিষয় হলো, নকশা পরিবর্তনের কাজটি জনসাধারণের মাঝে ১ম পর্বের প্লট বরাদ্দের পরে করা হয়েছে এবং এক্ষেত্রে কেডিএ কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ তাদের নামে বরাদ্দকৃত প্লটের আকৃতি ইচ্ছেমত পরিবর্তন ও পরিবর্ধন করে নিয়েছে সাধারণ প্লট গ্রহীতাদের ক্ষতিগ্রস্থ করার মাধ্যমে। বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসেবে আমাদের বক্তব্য স্পষ্ট। কেডিএ আমাদের কাছ থেকে নির্ধারিত হারে প্লটের মূল্য নিয়েছে। এককভাবে আর্থিক সামর্থ না থাকায় আমরা ৩ ভাই সম্মিলিতভাবে একটি প্লট লটারীর মাধ্যমে পেয়েছি। আমরা আমাদের পৈত্রিক সম্পদ বিক্রি করে সবার আগে প্লটের সমুদয় মূল্য পরিশোধ করেছি। কেডিএ আমাদেরকে একটি প্রমাণ সাইজের প্লট বরাদ্দ দিতে নীতিগতভাবে দায়বদ্ধ। কিন্তু কেডিএ নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে আমাদের নামে ৫ কাঠা জমি বরাদ্দ দিয়েছে ঠিকই, তবে সেটাকে কোন সুস্থ মস্তিষ্ক সম্পন্ন ব্যক্তি আবাসিক প্লট বলবে না। বিষয়টি কেডিএ’র চেয়ারম্যানসহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে একাধিকবার অবহিত করা হয়েছে এবং গত ২৯/০৫/২০২২ খ্রিঃ তারিখে লিখিতভাবেও জানানো হয়েছে। কিন্তু কেডিএ অদ্যাবধি এ বিষয়ে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি।”
তিনি বলেন, ” ১ম পর্বের প্লট বরাদ্দের পর কেডিএ বিভিন্ন ব্যক্তির নামে পরবর্তীতে আরও ৩২টি প্লট বরাদ্দ দিয়েছে। যদিও উক্ত; বরাদ্দ নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। আদালতে মামলাও হয়েছে জানা যায়। আমাদের সমস্যার সমাধান না করে অতি সম্প্রতি কেডিএ প্রবিধানমালা ভঙ্গ করে আরো ১৫টি প্লট বিভিন্ন ব্যক্তির নামে বরাদ্দ দিয়েছে।
আমরা মনে করি, এর মাধ্যমে কেডিএ মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রায়াত বীর সৈনিক মুক্তিযোদ্ধা সন্তানদের প্রতি চরম অবহেলা অবজ্ঞা ও অবমাননা প্রদর্শন করেছে, যা জাতির জন্য লজ্জাজনক। এ বিষয়ে গত ২১/০৭/২০২২ খ্রিঃ তারিখে আমরা মাননীয় প্রতিমন্ত্রী এবং মাননীয় সচিব, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় বরাবর লিখিত আবেদন করেছি।”
তিনি বলেন, “মাননীয় জনদরদী নেত্রী, আমাদের দাবী আমাদের প্লটটির আকৃতি পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে দেয়া হোক, নতুবা আমাদের নামে প্রমাণ সাইজের একটি প্লট বরাদ্দ দেয়া হোক। আমরা কেডিএ’র কাছ থেকে কোন বিশেষ সুযোগ সুবিধা প্রত্যাশা করি না। শুধু আমরা আমাদের প্রাপ্য অধিকারকে ফিরিয়ে দিতে বলেছি। এ বিষয়ে আপনার সদয় হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
উল্লেখ্য, আমার প্রায়াত পিতা বীর মুক্তিযোদ্ধা জি এম আমজাদ হোসেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর মরহুম শ্রদ্ধেয় চাচা জনাব শহীদ শেখ আবু নাসের মহোদয়ের অত্যন্ত ঘনিষ্টজন ছিলেন। বাবার কাছে শুনেছি তিনি অনেকবার খুলনায় আমাদের বাড়িতে এসেছিলেন। মহোদয়ের সার্বিক সহযোগিতায় ঐ সময়ে গ্রামে স্কুল, খেলার মাঠ ও ঈদগাহ নির্মাণ করা হয়।’