মো. মিজানুর রহমান, এফসিএস; পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর জন্য ‘স্বতন্ত্র পরিচালক প্যানেল’ গঠন করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। ২৯ এপ্রিল ২০২০, কমিশনের ৭২৫তম সভায় স্বতন্ত্র পরিচালকের প্যানেল গঠনের বিষয়ে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটি শেষে এই বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে বিএসইসি থেকে জানানো হয়েছিল।
বর্তমানে করপোরেট গভর্নেন্স কোডের শর্ত অনুযায়ী তালিকাভুক্ত কোম্পানিতে পরিচালনা পর্ষদের সদস্য হবেন সর্বনিম্ন ৫ জন ও সর্বোচ্চ ২০ জন। আর তাদের মধ্যে প্রতি ৫ জনের মধ্যে ১ জন স্বতন্ত্র পরিচালক থাকতে হবে এবং এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হলে প্যানেলের বাইরে থাকা কোনো স্বতন্ত্র পরিচালকে তালিকাভুক্ত কোম্পানি আর নিয়োগ দিতে পারবে না। তখন পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দেওয়া হবে শুধুমাত্র ‘স্বতন্ত্র পরিচালকের প্যানেল’ থেকেই। স্বতন্ত্র পরিচালকরা যেন সঠিক ভূমিকা রাখতে পারেন, তা বিবেচনায় নিয়েই এই স্বতন্ত্র পরিচালক প্যানেল তৈরির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে আমরা ধরে নিতেই পারি।
বাজার সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, এর ফলে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর জবাবদিহিতা নিশ্চিত হবে। একইসঙ্গে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোতে প্রাতিষ্ঠানিক সুশাসনও প্রতিষ্ঠা হবে। প্যানেল গঠনের পর স্বতন্ত্র পরিচালকরা যথাযথ ভূমিকা পালন করলে কোম্পানিগুলোতে দুর্নীতির পরিমাণ কমে যাবে। পুঁজিবাজারে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে।স্বতন্ত্র পরিচালকের প্যানেল বাস্তবায়ন করা সম্ভব হলে কোম্পানিগুলোতে অনিয়ম বন্ধ হবে। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোতে স্বতন্ত্র পরিচালকের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।
কিন্তু দুঃজনক হলেও সত্য, অধিকাংশ তালিকাভুক্ত কোম্পানিতে স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগের ক্ষেত্রে যোগ্যতার শর্ত পরিপালন করা হয় না। কোম্পানিগুলো নিজেদের পচ্ছন্দ মতো লোককেই স্বতন্ত্র পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেয়। ফলে তাদের দ্বারা সাধারণ বিনিয়োগকারীদের পক্ষে জোরালো অবস্থান নেওয়া সম্ভব হয় না। স্বতন্ত্র পরিচালক প্যানেল গঠিত হলে এসব অনিয়ম দূর হবে এমনটাই আশা সাধারণ বিনিয়োগকারীদের।
বিদায় নেয়ার আগে অত্যন্ত সঠিক ও সাহসী সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএসইসি’র বিগত কমিশন। তবে করপোরেট গভর্নেন্স কোডে শুরুতেই এ বিষয়ে বলা খাকলে বিএসইসি’র আগের কমিশন এটা বাস্তবায়ন করেই যেতে পারতেন। সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটি শেষে এই বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে বিএসইসি থেকে জানানো হয়েছে। ফলে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের বিষয়ে সংকা থেকেই যায়, তারপরও আমরা ভালো কিছুর অপেক্ষায় আছি।
বিএসইসি’র ‘করপোরেট গভর্নেন্স কোডে শেয়ারহোল্ডারদের স্বার্থ সংরক্ষণে স্বতন্ত্র পরিচালকদের সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। কোম্পানিগুলো যেন স্বতন্ত্র পরিচালক হিসেবে সঠিক ব্যক্তি নির্বাচন করতে পারে তার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। স্বতন্ত্র পরিচালক প্যানেল গঠিত হলে বিএসইসি’র ‘করপোরেট গভর্নেন্স কোড আরো শক্তি নিয়ে আগাতে পারবে এবং কোম্পানীতে স্বচ্ছতা বাড়বে, কারণ যোগ্য স্বতন্ত্র পরিচালকরাই পুঁজিবাজারে কর্পোরেট সুশাসনের মূলশক্তি।
অবশ্য বিএসইসি’র বর্তমান কমিশন পৃথক স্বতন্ত্র পরিচালক প্যানেল গঠন করার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করার বিষয়ে এখনও কোন পদক্ষেপ নেয়নি। যদিও এটি একটি সঠিক ও সাহসী সিদ্ধান্ত যা বাস্তবায়ন হলে পুঁজিবাজারে কর্পোরেট সুশাসনের ক্ষেত্রে বর্তমান কমিশনের জন্য দৃষ্ঠান্ত হয়ে থাকবে। কিন্তু আমরা আশাহত না, নতুন কমিশনের কাছে স্বতন্ত্র পরিচালক প্যানেল গঠনের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের সাথে কমপ্লায়েন্স অডিটের জন্যও একটি পৃথক প্যানেল অগ্রিম চেয়ে রাখছি, যা কোন ভাবেই কম গুরুত্বপূর্ণ না।
আর আমরা আশা করতেই পারি যে, খুব শির্ঘ্রই করপোরেট গভর্নেন্স কোডে সংশোধনী এনে বিএসইসি’র নতুন চেয়ারম্যান ও তার কমিশন স্বতন্ত্র পরিচালক প্যানেল গঠনের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের সাথে সাথে কমপ্লায়েন্স অডিটের জন্যও আর্থিক নিরীক্ষক প্যানেলের মতো একটি পৃথক কমপ্লায়েন্স অডিটরস্ প্যানেল গঠন করার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করবেন।
যদিও সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের বিষয়ে সংকা থেকেই যায়, তারপরও আমরা ভালো কিছুর অপেক্ষায় আছি। যদি শেষ পর্যন্ত আগের কমিশনের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হয় তবে বর্তমান কমিশন ও বাজারের উপর সাধারণ বিনিয়োগকারীদের আস্থার জায়গা তৈরী হবে, যেমনটি হয়েছে আর্থিক নিরীক্ষক প্যানেলের উপর। আর এই স্বতন্ত্র পরিচালক প্যানেল তৈরির সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হলেই তখন কোম্পানিগুলোর পরিচালকদের মধ্যে পুঁজিবাজারে কর্পোরেট সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হবে।