এ্যাডভোকেট সিরাজ প্রামাণিক : পত্রিকায় খবর বেরিয়েছে, করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঝুঁকির মধ্যে সরকারি ছুটিতে কুড়িগ্রামে ত্রাণের দাবিতে বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ করেছে একটি গ্রামের দরিদ্র মানুষ। ময়মনসিংহের মুক্তাগাছায় হতদরিদ্রদের জন্য বরাদ্দ দশ টাকা কেজির চাল আত্মসাতের অভিযোগে এক আওয়ামী লীগ নেতাসহ ৩ ডিলারের বিরুদ্ধে মামলা এবং এক ডিলারকে ৩ দিনের সাজা দেয়া হয়েছে। এদিকে ন্যায্যমূল্যে বিক্রির জন্য টিসিবির এক হাজার লিটারের বেশি ভোজ্য তেল উদ্ধার করা হয়েছে রংপুরের এক ব্যবসায়ীর বাড়ি থেকে। বগুড়ায় এক ইউপি চেয়ারম্যানের বাড়ি থেকে ভিজিডি’র ৩৩০ কেজি চাল উদ্ধার করেছে পুলিশ।
আমার নিবন্ধের শিরোনাম বর্তমানে দেশের খেটে খাওয়া মানুষের জন্য এ কথাটা যেন এক মহাসত্য হিসেবে দেখা দিয়েছে। প্রতিনিয়ত জীবন যাপনের খরচ বেড়ে যাচ্ছে, গ্যাস-বিদ্যুৎ-তেলের দাম হু হু করে বাড়ছে, বাড়ি ভাড়া লাগামহীন। সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের জীবনে নাভিশ্বাস উঠার অবস্থা। এর মধ্যে মহামারী রোগের প্রাদুর্ভাব। অন্যদিকে রয়েছে মুজিবের সোনার বাংলায় গণতান্ত্রিক স্বৈরাচারের পদধ্বনি।
কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য্যের কবিতার একটি লাইন ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়, পূর্ণিমা চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি। আজও হাজার হাজার বাঙালীর সন্তান যারা বস্তির অধিবাসী, টোকাই, দারিদ্রের কষাঘাতে জর্জরিত দুবেলা দুমুঠো খাবার জোগার করতে পারে না- তাদের কাছে ঝলসানো রুটিকে আকাশের পূর্ণিমা চাঁদের মতোই আরাধ্য লাগে।
পাঠক! এবার একটি গল্প দিয়েই আমার লেখার ইতি টানতে চাই। হজরত ওমর (রা)এর একবার অসুস্থ অবস্থায় টাটকা মাছ খাওয়ার ইচ্ছা জাগল। মদীনায় অনেক খোঁজাখোঁজির পরও টাটকা মাছ পাওয়া গেল না। কয়েকদিন পর যখন পাওয়া গেল তখন দেড় দিরহাম দিয়ে কিনে এনে রান্না করা হল। তারপর একটা রুটির উপর মাছটা রেখে হজরত ওমর (রা) এর সামনে পেশ করা হল। ঠিক এই সময় এক ভিক্ষুক দরজায় এসে হাক দিল। হজরত ওমর (রা) বললেন- এই মাছ উক্ত ফকিরকে দিয়ে দাও। খাদেম আরজ করল জনাব অনেক দিন থেকে যখন মাছ খেতে আপনার মন চাইছিল, তখন তা পাওয়া যায় নাই, এখন পাওয়ার পর দেড় দিরহাম দিয়ে কিনে এনে আপনার জন্য রান্না করেছি। আপনি বললে আমি ভিক্ষুককে এর মূল্য দিয়ে দেই। তিনি বললেন না, এই মাছ রুটির সাথে জড়িয়ে তাকে দিয়ে দাও, অতঃপর খাদেম ভিক্ষুককে বলল-তুমি এটা এক দিড়হামের বিনিময়ে বিক্রি করবে? ভিক্ষুক সম্মতি দিলে খাদেম এক দিরহামের বিনিময়ে তাকে দিয়ে আবার তার সামনে হাজির করল এবং বলল এ মাছটি আপনার জন্য এক দিরহাম দিয়ে কিনে এনেছি। হজরত ওমর (রা) আবার বলল- ভিক্ষুকের কাছ থেকে দেরহাম ফিরত না নিয়ে এই মাছ সহ রুটি টা তাকে দিয়ে এসো।
একবার মুসলমানরা গণিমতের মাল হিসাবে কিছু ইয়ামেনী কাপড় পেয়েছিলেন। সকলকে এক টুকরো করে কাপড় বন্টন করে দেওয়া হল। উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু সেই কাপড় দিয়ে জামা তৈরি করলেন। তিনি যেহেতু লম্বা-চওড়া ছিলেন, এক টুকরো কাপড়ে তাঁর জামা হতো না, তাই তাঁর পুত্র আব্দুল্লাহ নিজের কাপড়টিও তাঁকে দিয়ে দিয়েছিলেন। মিম্বরে উঠে খুতবা দেওয়ার সময় একজন লোক উঠে দাঁড়িয়ে বলল: আপনি যে জামা পরেছেন, তা এক টুকরো কাপড়ে বানানো সম্ভব নয়। এর উত্তর না দেওয়া পর্যন্ত আমরা আপনার খুতবা শুনব না। যখন আব্দুল্লাহ উঠে দাঁড়িয়ে বললেন যে তিনি তাঁর ভাগের কাপড়টিও পিতাকে দিয়ে দিয়েছেন জামা বানানোর জন্য, তখন লোকটি মেনে নিল।
লেখক : বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী, আইন বিশ্লেষক, আইনগ্রন্থ প্রণেতা ও সম্পাদক-প্রকাশক ‘দৈনিক ইন্টারন্যাশনাল’।