এ্যাডভোকেট সিরাজ প্রাামাণিক : কে ছড়ালো করোনাভাইরাস – যুক্তরাষ্ট্র, চীন না ব্রিটেন? আসলেই কি এটি জীবজন্তুর দেহ থেকে মানুষের শরীরে ঢুকেছে নাকি জীবাণু অস্ত্রের ল্যাবরেটরি থেকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে এটি ছড়িয়ে দেয়াা হয়েছে ? সংক্রমণ যত ছড়িয়ে পড়ছে, তার সাথে পাল্লা দিয়ে ছড়িয়ে পড়ছে নানা ষড়যন্ত্র তত্ত্ব। শুধু যে সোশ্যাল মিডিয়াই এসব ষড়যন্ত্র তত্ত্বে ছয়লাব তাই-ই নয়, কিছু দেশের মূলধারার কিছু মিডিয়াও এসব তত্ত্ব প্রচার করছে।
পাঠক! আপনাদের নিশ্চয়ই মনে আছে ‘উনিশ শতকের গোড়ার দিকে মেরি শেলি ‘ফ্রাঙ্কেনস্টাইন’ নামে একটি উপন্যাস লিখেছিলেন। এ উপন্যাসের নায়ক ডা. ফ্রাঙ্কেনস্টাইন ল্যাবরেটরিতে একটি মানুষ সৃষ্টি করতে গিয়ে সৃষ্টি করেন মানুষরূপী এক দানব। যে দানবের হাতে প্রথমেই নিহত হয় স্রষ্টার সহযোগী। একে একে এই দানব ডা. ফ্রাঙ্কেনস্টাইনের প্রিয়জনদের সবাইকে হত্যা করে। শেষে এ দানবকে হত্যা করতে গিয়ে ডা. ফ্রাঙ্কেনস্টাইন নিজেই মারা যান। উপন্যাসের এক জায়গায় দুঃখ করে ডা. ফ্রাংকেনস্টাইন লেখেন, আমি ওকে সবকিছু দিয়েছি, শুধু দিতে পারিনি মানুষের বিবেক ও মেধা। এ উপন্যাস প্রকৃতপক্ষে সৃষ্টির হাতে স্রষ্টার পরাজয় ও ধ্বংসের এক উপাখ্যান।’
পাঠক! আপনারা নিশ্চয়ই শক্তিমান বাগদাদের সুলতান হারুন আল রশিদের নাম শুনেছেন। তাঁর দরবারে লোকমান নামে এক প্রসিদ্ধ ব্যক্তি ছিল। সুলতান একদা তাকে জ্বলন্ত কাঠ নিয়ে রুদ্ধশ্বাসে দৌড়ে যেতে দেখলেন। সুলতান এভাবে দৌড়ানোর কারণ জিজ্ঞেস করলে লোকমান সুলতানকে বলল, সে আসলে জাহান্নামে যাচ্ছিল। হারুন বললেন, আগুন নিয়ে জাহান্নামে যাওয়া কেন? সেখানে তো এমনিতেই অনেক আগুন আছে। লোকমান বলল, এটা নিছক ভুল ধারণা। জাহান্নামে যাওয়ার সময় আমাদের প্রত্যেককেই নিজ নিজ আগুন সঙ্গে নিয়ে যেতে হবে।
পাঠক! এ গল্পটি দিয়েই আমার লেখা শেষ করতে চাই। এক বোকা লোক গেল সার্কাস দেখতে। একেক জন লোক এসে নিজের বিভিন্ন দক্ষতা দেখাচ্ছিল। কেউ দড়ির উপরে সাইকেল চালাচ্ছিল, কেউ এক রশি থেকে ঝুলে আরেক রশিতে যাচ্ছিল। এইসব দেখে সবাই খুব মজা পাচ্ছিল। এক পর্যায়ে একজন একটা বাঁদর নিয়ে এল। লোকটির ইশারায় বাঁদরটি নাচছিল, ডিগবাজী দিচ্ছিল আরো অনেক কসরত দেখালো। সব শেষে মঞ্চে এল বাঘ। সে তার রিং মাষ্টারের নির্দেশনায় কখনো এক পায়ে দাড়ালো। কখনো চেয়ারে উঠে বসল। সবাই তুমুল করতালিতে ফেটে পড়ল। এইসব দেখে বোকা লোকটি ভাবল এ আর এমন কি? এতে এত তালি দেয়ার কী আছে? এতো আমিও পারি। এই ভেবে সে বাড়ি ফিরে গেল। পরের দিন জঙ্গলে নিজের দক্ষতা প্রমান করতে গেল। প্রথমেই একটা বাঁদরকে কলা দেখিয়ে লোভ দেখালো। বাঁদরটি কাছে এলে সে ওটাকে ডিগবাজী দিতে বলল। বাঁদরটি ডিগবাজী তো দিলই না বরং কলাটি ছিনিয়ে নিয়ে পালিয়ে গেল। লোকটি হতাশ হয়ে আরো গভীর জঙ্গলে প্রবেশ করল। সামনে দেখল এক বাঘ। রিং মাষ্টারের মত বাঘকে নির্দেশনা দিতে গিয়ে বাঘের তাড়া খেয়ে কোনো রকম প্রাণ নিয়ে ফিরল। মনে মনে নিজেকে স্বান্তনা দিলে এই বলে “পশুকে কথা শোনাতে হলে আমাকেও পশু হতে হবে। কিন্তু আমি মানুষ। পশুর মত আচরন আমাকে মানায় না” এরপর সে তার বাড়ির আশেপাশে কয়েকটি গাছে দড়ি ঝুলিয়ে ভারসাম্যের খেলা দেখাতে গেল। একটু পরেই ভারসাম্য হারিয়ে দড়িতে উলটো ঝুলে রইল। শেষে পরিবারের লোকজন এসে তাকে বাঁচালো।
করোনাভাইরাসের জনক চীন কিন্তু করোনা ধ্বংসের টিকা আবিস্কার করে ফেলেছে। আমাদের চারপাশের জগৎটাও অনেকটা সার্কাসের মতই। যেখানে প্রত্যেকটা মানুষ আলাদা এবং প্রত্যেকেই ভিন্ন ভিন্ন কাজে দক্ষ। কিন্তু আমরা অনেকেই অন্যের দক্ষতাকে তুচ্ছ করে তাকে অবহেলা করি। আর সে অবহেলাকে জাহির করতে তাদের অনুসরন করে নিজে ব্যার্থ হই আর মাঝে মাঝে ক্ষতির স্বীকার হই। পৃথিবীর কোনো কাজই কঠিন না আবার কোনো কাজই সহজ না। প্রত্যেকটা কাজই সফলভাবে করার জন্য অধ্যবসায় দরকার। আর অন্যের অন্ধ অনুকরন না করে নিজেকে আবিস্কারের চেষ্টা করুন। দেখবেন আপনি ও এমন কিছু পারছেন যেটা অন্যেরা কেবল স্বপ্নেই দেখে। তাই অন্যের অনুকরনের বৃথা চেষ্টা না করে নতুন কিছু সৃষ্টিতে মনোযোগ দিন। আমরা যেনো করোনা ধ্বংসের ওষুধ তৈরীতে জয়ী হই।
লেখক : বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী, আইন বিশ্লেষক, আইনগ্রন্থ প্রণেতা ও সম্পাদক-প্রকাশক ‘দৈনিক ইন্টারন্যাশনাল’।