পৌষের শুরুতেই সারা দেশে তীব্র শীত জেঁকে বসেছে। সেই প্রবাহকে অনুসরণ করে আবারও শৈত্যপ্রবাহ। এর মাঝে আবার হালকা বৃষ্টি। এতে দুর্ভোগে সাধারণ মানুষ। বিশেষ করে হতদরিদ্র মানুষকেই মুখোমুখি হতে হচ্ছে অনাকাক্সিক্ষত কষ্টের চাপ। তবে দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে চলেছে। গত দুইদিন কুয়াশা থাকার পাশাপাশি বৃষ্টি হলেও শনিবার (২৮ ডিসেম্বর) সকাল থেকে কুয়াশা কেটে গেছে, তবে ঠাণ্ডা বেড়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছেন, শনিবার সারাদিন ধরেই প্রচণ্ড ঠাণ্ডা থাকবে। সেই সঙ্গে বয়ে যাচ্ছে হিমেল বাতাস। আজ ঢাকায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৩ দশমিক তিন ডিগ্রি সেলসিয়াস। শুক্রবার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ১৮ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তবে ঠাণ্ডা বাতাসের কারণে এই শীতের তীব্রতা বেশি অনুভূত হতে পারে।
আবহাওয়াবিদ মনোয়ার হোসেন বলছেন, এখন যে প্রচণ্ড ঠাণ্ডা চলছে, সেটা এই মাসের পুরোটাই, অর্থাৎ আরো কয়েকদিন থাকবে।
তিনি আরো জানান, এখন রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের ওপর দিয়ে একটি মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে, যা আশেপাশের এলাকায় বিস্তৃত হতে পারে। সেটার প্রভাব দেশের অন্যান্য অঞ্চলেও টের পাওয়া যাবে। আরো এক দুইদিন এই তীব্রতা থাকবে বলে তারা মনে করছেন। দেশের বেশিরভাগ স্থানে তাপমাত্রা এক থেকে ২ ডিগ্রি কমে যেতে পারে।
এ সময় সূর্যের আলো দেখার সম্ভাবনা নেই। বৃষ্টি হওয়ারও সম্ভাবনা নেই। জানুয়ারি মাসের শুরুর দিকে তাপমাত্রা কিছুটা বাড়তে পারে। তবে তারপরে আরেকটা শৈত্যপ্রবাহ আসার সম্ভাবনা রয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, শুক্রবার (২৭ ডিসেম্বর) সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায়। এদিন সেখানে ৯ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। শৈত্যপ্রবাহের কারণে রংপুর ও রাজশাহীর জেলাগুলোতেও তীব্র শীত রয়েছে।
এদিকে প্রচন্ড শীতে উত্তরের জনজীবন মুখথুবড়ে পড়েছে। গত বুধবার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা তেঁতুলিয়ায় ৬ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তাপমাত্রা ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে গেলেই শৈত্যপ্রবাহ তীব্র আকার ধারণ করে। শীতের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কুয়াশার ঘনত্ব বাড়ছে। ব্যাহত হচ্ছে যান চলাচল। দেশের ফেরি চলাচল বিঘ্নিত হচ্ছে। ঘন কুয়াশার কারণে গত মঙ্গলবার রাত থেকে বুধবার সকাল পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৫ ঘণ্টা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উড়োজাহাজ ওঠানামা বন্ধ ছিল। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, কুয়াশার দাপট আরো কয়েক দিন থাকবে।
এবারের শীতে কুয়াশা আর শৈত্যপ্রবাহের কাছে রোদের প্রাচুর্য যেন হারাতে বসেছে। শুধু প্রাচুর্য হারানোই নয়, পরাজয় স্বীকার করে আত্মসমর্পণ করেছে। সন্ধ্যার পর রাস্তা অনেকটা খালি হয়ে যায়। যে যার আস্তানায় ফিরে গিয়ে শীতের তীব্রতা থেকে নিজেকে বাঁচাতে চেষ্টা করে। ভীষণভাবে কষ্টের মুখোমুখি হয় হতদরিদ্র মানুষ। এদের পাশে দাঁড়ানো বিত্তবানদের নৈতিক দায়িত্ব হলেও তেমনভাবে এগিয়ে আসতে কাউকে দেখো যায়নি। সরকারের পক্ষ থেকেও তেমন কোনো উদ্যোগ চোখে পড়ছে না। শীতজনিত কারণে গত ২৪ ঘণ্টায় ৯ জনের মৃত্যুর সংবাদ পাওয়া গেছে।
আবহাওয়াবিদদের মতে, শীতের তিনটি প্যারামিটার একসঙ্গে যোগ হওয়ার কারণে শীতের তীব্রতা এত বেশি অনুভূত হচ্ছে। প্রথমত, শীতের শুরু থেকেই ছিল ঘন কুয়াশা। এ কারণে পর্যাপ্ত সূর্যের আলো মাটিকে স্পর্শ করতে না পারায় উষ্ণতা ক্রমেই কমছে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে শৈত্যপ্রবাহ। এখানেই শেষ নয়, যোগ হয়েছে বৃষ্টির আলামত।
আবহাওয়াবিদরা বলেন, শীতের তীব্রতা কমে যাওয়ার আপাত কোনো লক্ষণ নেই। প্রচণ্ড ঠাণ্ডার কারণে নিম্নবিত্ত মানুষজন চরম দুর্ভোগের মুখে পড়েছেন। ঠাণ্ডার সঙ্গে গত কয়েকদিন বৃষ্টি যোগ হওয়ায় ছিন্নমূল ও ফুটপাতে থাকা মানুষজন চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন।
শহর এলাকায় কুয়াশার দাপট কমলেও নদী তীরবর্তী এলাকাগুলো তা অব্যাহত রয়েছে। ফলে ফেরী ও নৌ-চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। প্রতিদিন রাতেই মাওয়া ও পাটুরিয়ায় কুয়াশার কারণে কয়েক ঘণ্টা ফেরি চলাচল বন্ধ রাখতে হচ্ছে, যার ফলে পদ্মা নদীর দুই পাড়ে তৈরি হচ্ছে যানজট।
আমরা মনে করি, এবারের শীত অন্যবারের চেয়ে কিছুটা হলেও ব্যতিক্রমী হবে। অন্যবারের চেয়ে কিছুটা বেশি করে ঘনীভূত হবে। এতে জীবনযাত্রা বিঘ্নিত হবে। কষ্ট বেড়ে যাবে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর। সুতরাং এসব বিষয়ে আগাম দৃষ্টি দেওয়াই হোক রাষ্ট্রের লক্ষ্য। আর এটাই রাষ্ট্রের কাছে জাতির প্রত্যাশা।