কর্পোরেট সংবাদ ডেস্ক: একটি প্রতিষ্ঠানে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন বিভাগ-প্রধানের সাফল্যের ওপর নির্ভর করে ওই প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বা সিইও’র সাফল্য। সিইও সফল হলে প্রতিষ্ঠানটির মুনাফা বেশি হয়। খুশি হন শেয়ারহোল্ডাররা। চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে সিইও’র সুনাম। প্রতিষ্ঠানের প্রধান অর্থ কর্মকর্তা (সিএফও), কোম্পানি সচিব, চিফ কমপ্লায়েন্স অফিসার, চিফ মার্কেটিং অফিসারসহ এইচআর প্রধানরা থাকেন পাদপ্রদীপের আড়ালে। টপ ম্যানেজমেন্টের বড় অংশ হলেও তারা আলোচনার বাইরে থাকতে পছন্দ করেন। অর্ন্তমূখী এসব কর্মকর্তা সব সময় কেবল প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য বাস্তবায়নে ব্যস্ত থাকেন। সেসব কর্মকর্তাকে নিয়ে নিয়মিত আয়োজন ‘টপ ম্যানেজমেন্ট’ সাক্ষাৎকারে এবার প্রাইম ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট (এসইভিপি) ও প্রধান অর্থ কর্মকর্তা (সিএফও) বাদল চন্দ্র রাজবংশী, এফসিএস, এফসিএ।
বাদল চন্দ্র রাজবংশী এফসিএস, এফসিএ প্রাইম ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট (এসইভিপি) ও প্রধান অর্থ কর্মকর্তা (সিএফও)। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষে সম্পন্ন করেছেন চার্টার্ড সেক্রেটারি ও চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্সি পেশাগত ডিগ্রি। তিনি ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড সেক্রেটারিজ অব বাংলাদেশ (আইসিএসবি) ও দি ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশের (আইসিএবি) সম্মানিত ফেলো।
প্রশ্ন: ক্যারিয়ার গড়ার পেছনের গল্প দিয়ে শুরু করতে চাই।
বাদল চন্দ্র রাজবংশী, এফসিএস, এফসিএ: ছোটবেলায় পড়াশোনায় একদম মন বসত না। এ কারণে আমার জন্য বাড়িতে একজন শিক্ষক রাখা হয়। শিক্ষকের কড়া নজরদারিতে পড়ালেখা শুরু হয় আমার। পঞ্চম শ্রেণিতে বৃত্তি পাই। এরপর আমার মধ্যে পরিবর্তন আসে। অষ্টম শ্রেণিতে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পাই। এসএসসিতে ঢাকা বোর্ডে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করি। এইচএসসিতেও ভালো রেজাল্ট হয়। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করি। এরপর চার্টার্ড অ্যাকাউন্টিং পড়ার জন্য ভর্তি হই। রহমান রহমান হক অ্যান্ড কোং চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্সি ফার্ম থেকে সিএ আর্টিকেলশিপ শেষ করি। কানাডিয়ান ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট এজেন্সিতে (সিডা) চাকরিজীবনের শুরু। এরপর ইউনাইটেড ইন্স্যুরেন্সে অ্যাকাউন্টস অ্যান্ড ফাইন্যান্স বিভাগে যোগ দিই। ওই প্রতিষ্ঠানে বোর্ড সচিব ও শেয়ার বিভাগের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে পড়ালেখার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করি। ২০১৫ সালের শেষের দিকে প্রাইম ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডে সিএফও হয়ে চলে আসি।
প্রশ্ন: পেশাগত ডিগ্রি চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্সিকে বেছে নেওয়ার কারণ কী?
বাদল চন্দ্র রাজবংশী: স্কুলে পড়ার সময় থেকেই মনের মধ্যে গেঁথে গিয়েছিল চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট হবো। যদিও তখন চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্সি সম্পর্কে তেমন ধারণা ছিল না। পরে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষে এ বিষয়টি সম্পর্কে জানতে পারি। এ পেশার পদমর্যাদা ও পেশাজীবীদের জীবনযাত্রা সম্পর্কে জানতে পারি। এরপর চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্সি পড়ার সিদ্ধান্ত নিই এবং সিএ শেষ করি।
প্রশ্ন: প্রতিষ্ঠানে একজন সিএফও’র গুরুত্ব সম্পর্কে বলুন।
বাদল চন্দ্র রাজবংশী: সিএফওকে প্রতিষ্ঠানের হার্ট বলা যায়। অনেক গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন একজন সিএফও। সিইও’র পরে অবস্থান সিএফও’র। তিনি প্রতিষ্ঠানের নানা ডেটা বিশ্লেষণের মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেন। প্রতিষ্ঠানকে যথাযথভাবে পরিচালনার জন্য সিইওকে সাহায্য করেন তিনি। একটি কোম্পানির নেট প্রফিট ভাল হবার জন্য সবরকম ব্যবস্থা নেওয়ার দায়িত্ব সিএফও’র। এছাড়া আর্থিক ব্যবস্থাপনা, বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নেওয়া, নানা ধরনের কমপ্লায়েন্স পরিপালন তো আছেই।
প্রশ্ন: বিমা খাতের কোম্পানিতে দায়িত্ব পালনে সিএফওকে কোন বিষয়গুলো বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে দেখতে হয়?
বাদল চন্দ্র রাজবংশী: সাধারণ কোম্পানি থেকে বিমা খাতের কোম্পানিতে কিছুটা ভিন্নতা দেখা যায়। কারণ এ খাতের কোম্পানিতে বিশেষ কিছু নিয়মনীতি অনুসরণ করতে হয়। কোম্পানি আইনের পাশাপাশি বিমা কোম্পানিতে আলাদা রেগুলেটরের নানা নিয়মনীতি অনুসরণ করে চলতে হয়। করপোরেট ট্যাক্স, ভ্যাট, প্রিমিয়াম, ডিপজিট প্রিমিয়াম এগুলোর সঠিকভাবে রেকর্ড নিশ্চিত করাও সিএফও’র দায়িত্ব।
প্রশ্ন: বিমা খাতের কোম্পানিতে দায়িত্ব পালনে সিএফও’কে কোন ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়?
বাদল চন্দ্র রাজবংশী: নন লাইফ বিমা কোম্পানিতে এজেন্ট নামে একটা বিষয় রয়েছে। আর এই এজেন্টের কমিশনের যে বিষয়টি বিদ্যমান, সেটি নিয়ে কাজ করা বেশ চ্যালেঞ্জিং। বিমা খাতে এজেন্টের কমিশনের বিষয়টি আইনে উল্লেখ থাকলেও তা যথাযথভাবে তাদের দেওয়া হয় না। বরং তা বিমা গ্রহীতাকে দেওয়া হয়। এ খাতের উন্নতি না হওয়ার একটা বড় কারণ এটি। আমি মনে করি, এ বিষয়টি নিয়ে আরও চিন্তার সুযোগ রয়েছে। এছাড়া আইনমত বিনিয়োগ খাত রক্ষা করাও একটি চ্যালেঞ্জ।
প্রশ্ন: বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠানগুলোয় করপোরেট গভর্ন্যান্স সম্পর্কে আপনার
মূল্যায়ন কী?
বাদল চন্দ্র রাজবংশী: প্রাতিষ্ঠানিক সুশাসনের বিষয়টি বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ২০০৬ সালে নিয়ে আসে। যুক্তরাষ্ট্রের বিশাল একটি প্রতিষ্ঠানের দেউলিয়া হয়ে যাওয়ার ঘটনা থেকেই মূলত প্রাতিষ্ঠানিক সুশাসনের বিষয়টি সামনে আসে। এরপর সুশাসন নিয়ে আইন হয়। ওই আলোকে বাংলাদেশেও এটি আনা হয়। শেয়ারহোল্ডারদের স্বার্থ সুরক্ষার জন্যই এটি করা হয়। আমি মনে করি, কেবল তালিকাভুক্ত কোম্পানিই নয়, প্রাইভেট কিংবা যেকোনো প্রতিষ্ঠানের সফলতার জন্য করপোরেট সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা অতীব জরুরি। উল্লেখ্য, প্রাইম ইন্স্যুরেন্সে সম্পূর্ণভাবে ম্যানেজমেন্টের তত্ত্বাবধানে চলে সেদিক থেকে আমি ভাগ্যবান, স্বাধীনভাবে চলতে পারি।
প্রশ্ন: সিএফও পেশাকে কীভাবে মূল্যায়ন করেন?
বাদল চন্দ্র রাজবংশী: পেশা হিসেবে বেশ সম্মানজনক। একইসঙ্গে পেশাটি যেমন গুরুত্বপূর্ণ তেমনি চ্যালেঞ্জিংও বটে। প্রতিষ্ঠান তথা দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার সুযোগ রয়েছে এ পেশায়। প্রতিষ্ঠানের সুনাম অর্জনেও সিএফও’র ভূমিকা অপরিসীম। সিএফও’র কাজের বহিঃপ্রকাশ হচ্ছে বার্ষিক প্রতিবেদন। প্রসঙ্গত, সিএফও প্রণীত প্রাইম ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের ২০১৬ ও ২০১৭ সালের প্রতিবেদন সাউথ এশিয়ান ফেডারেশন অব অ্যাকাউন্ট্যান্টসের (এসএএফএ) অ্যাওয়ার্ডে বিমা খাতে বিজয়ী হয় (প্রথম স্থান)। এ অর্জন শুধু প্রাইম ইন্স্যুরেন্সেরই নয়, বাংলাদেশের ভাবমূর্তিও উজ্জ্বল করেছে।
প্রশ্ন: ফাইন্যান্স পেশায় যারা ক্যারিয়ার গড়তে চায় তাদের উদ্দেশে কিছু বলুন।
বাদল চন্দ্র রাজবংশী: এ পেশায় যারা আসতে চান তাদের স্বাগত জানাই। সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্বপালনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠান ও নিজের উন্নতির সুযোগ আছে। তবে মনে রাখতে হবে, এ পেশায় যেমন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব রয়েছে, তেমনি রয়েছে নানা চ্যালেঞ্জ। যারা চ্যালেঞ্জ নিতে পছন্দ করেন তারা এ পেশায় ভালো করবেন।
প্রশ্ন: কর্মজীবনে সফলতার জন্য কোন বিষয়গুলোকে তরুণদের বেশি গুরুত্ব দিতে পরামর্শ দেবেন?
বাদল চন্দ্র রাজবংশী: কর্মজীবনের সফলতার জন্য নিষ্ঠা ও সততা অত্যন্ত জরুরি। প্রতিষ্ঠানে যথাযথভাবে দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি সমাজের নানা বিষয়াদিও মাথায় রাখতে হবে। পরিশ্রমী হতে হবে। মনে রাখতে হবে, প্রতিষ্ঠানকে এগিয়ে নিতে পারলে নিজেকেও এগিয়ে রাখা যাবে। সূত্র: শেয়ারবিজ