দেশের স্পর্শকাতর অঞ্চল হিসেবে খ্যাত পার্বত্য চট্টগ্রামে সাম্প্রতিক কয়েকটি হত্যাকান্ড এবং পাহাড়ি সংগঠনগুলোর মধ্যে একের পর এক ভাঙন- ওই এলাকার রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণ সৃষ্টি করেছে? গত কয়েকমাস ধরে প্রায়ই সে অঞ্চলে একের পর এক হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। সর্বশেষ নানিয়ারচর উপজেলা চেয়ারম্যান হত্যাকাণ্ড এবং তার পরদিনই আরো পাঁচজনকে গুলি করে হত্যা নতুন উদ্বেগ তৈরি করেছে।
১৯৯৭ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চু্ক্তির পর সে এলাকার রাজনীতি গত বিশ বছরে অনেকটাই বদলে গেছে। শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরের সময় সে অঞ্চলের বড় ধরনের আধিপত্য ছিল জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা বা সন্তু লারমার । কিন্তু লারমা গত বিশ বছরে অনেক জায়গাতেই তাঁর প্রভাব হারিয়েছেন। বর্তমানে শুধু রাঙামাটি শহর এবং আরো কিছু এলাকায় লারমার প্রভাব রয়েছে। কিন্তু বাকি অঞ্চলে সেটি নেই।
১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর সরকারের সাথে যখন লারমার পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (পিসিজেএসএস) শান্তিচুক্তি স্বাক্ষর করেন তখন পাহাড়ে একটি অংশ সেটির বিরোধিতা করেছিল। পিসিজেএসএস’র ছাত্র সংগঠন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ ১৯৯৮ সালের ডিসেম্বর মাসে প্রতিষ্ঠা করেন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট বা ইউপিডিএফ। এরপর পরই সন্তু লারমা পিসিজেএসএস’র সাথে সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে ইউপিডিএফ। জনসংহতি সমিতি এবং ইউপিডিএফ’র সম্পর্ক শুরু থেকেই ‘সাপে-নেউলে’। প্রায় ১২ বছর এ দুটি সংগঠনের মধ্যে আধিপত্যের লড়াই চলছে। এ সময়ের মধ্যে সন্তু লারমার প্রতি তাঁর দলের একটি আস্থা হারাতে থাকেন।
২০১০ সালে লারমার নেতৃত্বে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি ভেঙ্গে আরেকটি নতুন দলের জন্ম হয় যার নাম জেএসএস (এমএন লারমা)। সম্প্রতি রাঙামাটির নানিয়ারচরে উপজেলা চেয়ারম্যান শক্তিমান চাকমাকে গুলি করে হত্যা করা হয়। তিনি ছিলেন সন্তু লারমার দল থেকে বেরিয়ে যাওয়া জেএসএস (এমএন লারমা) দলের অন্যতম শীর্ষ নেতা।
২০১৭ সালে ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট বা ইউপিডিএফও ভাঙনের কবলে পড়ে। সে দল ভেঙ্গে প্রতিষ্ঠা করা হয় ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক)। দলটির প্রতিষ্ঠাতা তপন জ্যোতি চাকমাসহ পাঁচজনকে কয়েকদিন আগে গুলি করে হত্যা করা হয়। সবমিলিয়ে পার্বত্য এলাকায় এখন পাহাড়িদের চারটি সংগঠন রয়েছে। সে এলাকায় অস্থিরতা, হত্যা, চাঁদাবাজী এবং অপহরণের জন্য এসব আঞ্চলিক দলগুলো পরস্পরকে দায়ী করে।
অসৎ উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য দলগুলোর মধ্যে ভাঙন সৃষ্টি এবং এ ঘটনার প্রাণহানি ঘটছে হচ্ছে বলে পাহাড়ি সংগঠনের নেতৃবৃন্দ মনে করলেও জাতীয় রাজনীতিতে একে অন্যকে দোষারোপ এবং কাঁদা ছোড়াছুড়ি করতে দেখা যায়। যদিও আমাদের দেশের রাজনীতিতে এটা নতুন কিছু নয়। কোন ঘটনা ঘটার পর তদন্ত করে দোষীদের চিহ্নিত করার আগেই রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের উপর দোষ চাপানো এক ধরণের রেওয়াজে পরিণত হয়েছে-যা কখনোই কাম্য হতে পারে না। সুষ্ঠ তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের চিহ্নিত করা হউক-এটাই সবার প্রত্যাশা।