October 7, 2024 - 5:27 am
তথ‌্য অ‌ধিদপ্ত‌রের নিবন্ধন নম্বরঃ ৭৭
Homeসারাদেশ ও রাজনীতিরাজনীতিগোলাম আজমের নামে নির্মিত কক্সবাজার কলেজের গেইট ভেঙ্গে ফেলা হচ্ছে

গোলাম আজমের নামে নির্মিত কক্সবাজার কলেজের গেইট ভেঙ্গে ফেলা হচ্ছে

spot_img

মোহাম্মদ রিদুয়ান হাফিজ, কক্সবাজার প্রতিনিধি: কক্সবাজার সরকারী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের প্রধান ফটকে সাবেক জামায়াত আমীর গোলাম আজমের নামে নির্মিত গেইট অবশেষে অপসারিত হচ্ছে। গত ১৯ ফেব্রুয়ারী শহরের বিলাসবহুল হোটেল মিলনায়তনে আয়োজিত কক্সবাজার সরকারী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের হীরক জয়ন্তী উদযাপন পরিষদের প্রস্তুতি সভায় এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

সভায় উপস্থিত কক্সবাজার কলেজের সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের জোরালো দাবীর প্রেক্ষিতে গোলাম আজমের নামে নির্মিত গেইট ভেঙ্গে ফেলার সিদ্ধান্ত হয়। হীরক জয়ন্তী উদযাপন পরিষদের আহবায়ক কক্সবাজার কলেজের সাবেক জিএস জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মেয়র মুজিবুর রহমান এই গেইট অপসারণের ঘোষণা দেন।

উল্লেখ্য আগামী ৪ মার্চ হীরক জয়ন্তী উদযাপনের কথা রয়েছে। এর আগেই এই কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী গোলাম আজমের নামে স্থায়ী ভাবে নির্মিত গেইট ভেঙ্গে ফেলা হবে।স্বাধীনতার মাসে একজন যুদ্ধাপরাধীর স্মৃতি চিহ্ন মুছে যাবে কক্সবাজার সরকারী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের গেইট থেকে এর চেয়ে খুশীর খবর আর কি হতে পারে? এমনটাই মনে করেন কক্সবাজারের প্রগতিশীল সচেতন ছাত্র জনতা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৯৯১ সালে কক্সবাজার কলেজে ইসলামী ছাত্র শিবিরের নবীনবরণ ও সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন জামায়াতের সাবেক আমীর গোলাম আজম।তার আগমন উপলক্ষে ইসলামী ছাত্রশিবির কক্সবাজার কলেজের প্রধান গেইট গোলাম আজমের নামের আধ্যাক্ষর দিয়ে নির্মাণ করা হয় স্থায়ী পাকা এই গেইট। তখন কলেজের ছাত্র সংসদসহ পুরো কলেজের নিয়ন্ত্রণ করতো ইসলামী ছাত্র শিবির। হীরক জয়ন্তী উদযাপন পরিষদের সদস্য সচিব কক্সবাজার সরকারী বিশ্ব বিদ্যালয় কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ওই কলেজের সাবেক শিক্ষার্থী ফজলুল করিম বলেন,দীর্ঘ ১৯৮০ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত কক্সবাজারে কলেজের নিয়ন্ত্রণ ছিল ইসলামী ছাত্র শিবিরের হাতে।অন্য কোন ছাত্র সংগঠনের প্রকাশ্যে ক্যাম্পাসে রাজনীতি করার সুযোগ ছিল না। দীর্ঘ ৩০ বছর ইসলামী ছাত্র শিবিরের রাজত্ব চলে কক্সবাজার কলেজে। এমনকি ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে ও কক্সবাজার কলেজের সকল কর্মকাণ্ড চলতো শিবিরের নির্দেশনায়। শিক্ষার্থী ভর্তি থেকে পাস, ফেল ও হোস্টেল বরাদ্দ সবই ছিল ইসলামী ছাত্র শিবিরের নিয়ন্ত্রণে। গত ত্রিশ বছরে ছাত্রলীগ, ছাত্র ইউনিয়ন, জাসদ ছাত্রলীগসহ প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনের অসংখ্য নেতা কর্মী হতাহত হয় শিবিরের নির্যাতনে। এসব হতাহতদের চিত্র তুলে ধরেন সাবেক ও বর্তমান ছাত্রলীগ ছাত্র ইউনিয়নসহ প্রগতিশীল ছাত্র নেতৃবৃন্দ। তাদের একটায় দাবী ইসলামী ছাত্র শিবিরের সাবেক ও বর্তমান নেতাকর্মী যারা প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীদের উপর হামলা করেছে, মামলা করেছে, গাড়ি ভাংচুর করেছে, নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত, বৌদ্ধ মন্দিরে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট চালিয়েছে তাদের সাথে একাত্ম হয়ে হীরক জয়ন্তী উদযাপন করা সম্ভব নয়।দুষ্কৃতকারীদের বিভিন্ন উপ কমিটি থেকে বাদ দিতে হবে।

এক প্রশ্নের জবাবে হীরক জয়ন্তী উদযাপন পরিষদের সদস্য সচিব ফজলুল করিম বলেন, যখন গোলাম আজমের নামে কক্সবাজার কলেজের গেইট নির্মাণ করা হয়েছিল তখন তিনি ওই কলেজের প্রফেসার ছিলেন। তখন অধ্যক্ষ ছিলেন গুরুপদ পালিত। তিনি শিবিরের চাপের মূখে বাধ্য হয়েছিলেন গোলাম আজমের নামে নির্মিত গেইটের অনুমোদন পত্রে স্বাক্ষর করতে। আমাদের ও স্বাক্ষর করতে চাপ প্রয়োগ করা হয়েছিল।আমি ও অন্যআরেকজন প্রফেসার স্বাক্ষর করি নাই।

জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ৯০ এর ছাত্র নেতা বর্তমান পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ফরিদুল আলম বলেন, কক্সবাজার কলেজের প্রধান ফটকে নির্মিত গোলাম আজমের নামে গেইট নির্মাণ বন্ধ করতে এবং নির্মাণ হওয়ার পর তা ভেঙ্গে ফেলার জন্য আন্দোলন সংগ্রাম করেছি।তখনকার রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় আমাদের আন্দোলন সংগ্রাম কোন কাজে আসেনি।তৎকালীন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহসভাপতি কৃষক লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক কক্সবাজার কলেজের প্রাক্তন ছাত্র, জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতা রেজাউল করিম বলেন, শিবিরের সাবেক বর্তমান নেতাকর্মী যাদের বিরুদ্ধে রগকাটা,মানুষ হত্যা,নাশকতা মামলা, অগ্নিসংযোগ স্বাধীনতা বিরোধীচক্র ও সন্ত্রাসের অভিযোগ রয়েছে তারা হীরক জয়ন্তী উৎসবে সামিল হতে পারে না।সাবেক জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা যবলীগের সাধারণ এবং জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট রনজিৎ দাশ বলেন,আমি কক্সবাজার কলেজের ছাত্র ছিলাম।কলেজ ক্যাম্পাসে ছাত্র লীগসহ প্রগতিশীল ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করেছিল শিবির। আমরা কলেজ ক্যাম্পাসে এসে ছাত্র রাজনীতি করতাম।এতে ও তারা চরমভাবে ক্ষুব্ধ ছিল আমাদের উপর। ৮০ দশকে জেলা আওয়ামী লীগ অফিস ভাংচুর করে অসংখ্য নেতাকর্মীদের আহত করেছিল জামায়াত শিবির। শুধু তাই নয়, ১৯৯২ সালে পাবলিক হলে যুবলীগের সম্মেলনে সশস্ত্র হামলা চালিয়ে তৎকালীন জেলা যুবলীগ সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা কামাল হোসেন চৌধুরী প্রয়াত জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম চৌধুরীসহ অসংখ্য নেতাকর্মীদের আহত করেছিল জামায়াত শিবির। তাদের সাথে আর যাই হোক হীরক জয়ন্তী উদযাপন হতে পারেনা।

দীর্ঘ ৩২ বছর পর কক্সবাজার সরকারী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের মূল ফটকে থাকা যুদ্ধাপরাধী গোলাম আজমের নামের J এবং A সংযুক্ত করে নির্মিত গেইট অবশেষে অপসারিত হচ্ছে জেনে মুক্তি যুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত স্বাধীনতার পক্ষের শক্তির ছাত্র জনতা আনন্দ উচ্ছাসে মেতে উঠে।

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন
spot_img

সর্বশেষ সংবাদ