মার্কেন্টাইল ব্যাংক লিমিটেড চালু করেছে ‘উদয়ন’ নামে একটি প্রকল্প। ব্যাংকটি এ প্রকল্পের আওতায় দেশের শিক্ষিত মেধাবী তরুণদের উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তোলার নিমিত্তে ব্যবসা শুরুর জন্য অর্থ সহায়তা দিচ্ছে। মার্কেন্টাইল ব্যাংক লিমিটেড এরই মধ্যে নতুন কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে সিড ক্যাপিটাল হিসেবে অর্থ বিনিয়োগ করেছে। ২০১৫ সালে প্রতিষ্ঠিত স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠান ল্যান্ডনক লিমিটেড ব্যাংকটির বিনিয়োগ পেয়েছে। সম্প্রতি সঙ্গে এক সাক্ষাত্কারে ল্যান্ডনক লিমিটেডের কার্যক্রম সম্পর্কে বিস্তারিত জানান প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইরাম রহমান।
প্রশ্ন: ল্যান্ডনক ট্র্যাক কী ধরনের সেবা দিচ্ছে?
ইরাম রহমান: ল্যান্ডনক লিমিটেডের একটি প্রডাক্ট হলো ল্যান্ডনক ট্র্যাক। কোম্পানির নামের শেষে আমরা ট্র্যাক শব্দটি যোগ করেছি। কারণ হলো, কেউ যখন কোনো একটি পথ দিয়ে হেঁটে যায়, তখন সে ওই পথে তার পদচিহ্ন রেখে যায়। বাংলাদেশে প্রচুর কোম্পানি আছে, যাদের কর্মীরা অফিসের বাইরে কাজ করেন। এ ধরনের কোম্পানিগুলোর কর্মী ব্যবস্থাপনা; অর্থাৎ বিক্রয় বা বিপণন প্রতিনিধিরা কখন কোথায় আছেন, তার খোঁজখবর রাখা প্রধান কার্যালয়ের একটি বড় ধরনের মাথাব্যথা। কোম্পানি যে ধরনেরই হোক, কর্মীরা কখন কোথায় আছেন, কী করছেন, তার সমাধান দিতেই ল্যান্ডনক ট্র্যাক। বিভিন্ন খাতের প্রতিষ্ঠানকে তাদের কর্মীদের লাইভ টাইম অবস্থান জানানো ও পর্যবেক্ষণের সুবিধা দিচ্ছি।
প্রশ্ন: ল্যান্ডনক লিমিটেডের মতো একটি উদ্যোগ নিয়ে আগ্রহী হলেন কেন?
ইরাম রহমান: প্রযুক্তির কল্যাণে কিছু বিষয় এখন আর ম্যাজিক নয়, বাস্তবতা। গুগল ম্যাপ সম্পর্কে আমরা জানি। এখানে স্ক্রল করে আপনি আপনার কাঙ্ক্ষিত স্থানে চলে যেতে পারেন। ল্যান্ডনক ট্র্যাকের ধারণাটা সেখান থেকেই পাওয়া। ছাত্রাবস্থায় আমি ও আমার কয়েকজন বন্ধু মিলে অনলাইনে দেশের বাইরের গ্রাহকদের কিছু কাজ করে দিতাম। সেখান থেকে ভালো একটা অভিজ্ঞতা ছিল। সে অভিজ্ঞতা এবং গুগল ম্যাপ কাজে লাগিয়ে আমরা একটি নিজস্ব পণ্য আনার উদ্যোগ নিই। গুগল ম্যাপে সবসময় জড়বস্তু দেখানো হয়। ধরুন আপনি যে রাস্তা দিয়ে যাচ্ছেন, তার আশপাশের বিল্ডিং বা অন্যান্য অবকাঠামো দেখতে পাচ্ছেন। কিন্তু আমরা গুগল ম্যাপ কাজে লাগিয়ে মানুষের চলাচল দেখানোর চেষ্টা করতে শুরু করি।
প্রশ্ন: ল্যান্ডনক লিমিটেডের গ্রাহক কারা? গ্রাহক হওয়ার প্রক্রিয়া সম্পর্কে বলুন।
ইরাম রহমান: ই-কমার্স বা বিক্রয় ও বিপণনের কাজ করছে এমন ছোট, মাঝারি বা বড় কোম্পানিগুলো আমাদের টার্গেট গ্রাহক। বর্তমানে দুটি পণ্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানকে পরীক্ষামূলক সেবা সরবরাহ করছি। শিগগিরই এ দুই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে পূর্ণাঙ্গ কার্যক্রম শুরুর আশা করছি। ল্যান্ডনক ট্র্যাক সেবাটি অ্যাপভিত্তিক। কাজেই গ্রাহক হওয়ার জন্য আমাদের ওয়েবসাইটে গিয়ে নিবন্ধন করতে হয়। অথবা আমাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগের মাধ্যমেও গ্রাহক হওয়া যাবে। ল্যান্ডনক ট্র্যাক নিয়ে ভালো সাড়া পাচ্ছি।
প্রশ্ন: ল্যান্ডনক ট্র্যাক সফটওয়্যারের মাধ্যমে কর্মী ব্যবস্থাপনা ও মনিটরিং ছাড়া আর কী সেবা দিচ্ছে?
ইরাম রহমান: কর্মী ব্যবস্থাপনা ও মনিটরিংয়ের পাশাপাশি একজন বিক্রয় প্রতিনিধি বা বিপণন কর্মকর্তা প্রতিদিন কী পরিমাণ অর্থ সংগ্রহ করছেন, সে সম্পর্কে জানা যাবে আমাদের সফটওয়্যারে। এছাড়া সফটওয়্যারটির মাধ্যমে অ্যাসাইনমেন্ট দেয়া যাবে, যা বিভিন্ন পণ্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের ব্যয় সংকোচনে ভূমিকা রাখবে। ল্যান্ডনক ট্র্যাকের কোন সেবাটি গ্রাহক চাচ্ছেন, তার ওপর ভিত্তি করেই আমরা সেবা সরবরাহ করছি। কেউ শুধু ট্র্যাকিং সুবিধা নিতে চাইলে আমরা সে ব্যবস্থা করি। যদি কোনো গ্রাহক ট্র্যাকিং ও মনিটরিংয়ের পাশাপাশি অর্থ পরিশোধ ও অ্যাসাইনমেন্ট ফিচার চান, সে ব্যবস্থাও করা হয়।
প্রশ্ন: ল্যান্ডনক ট্র্যাক সফটওয়্যারটি কোন প্লাটফর্মে পাওয়া যাচ্ছে?
ইরাম রহমান: আইওএস প্লাটফর্মের জন্য আমাদের সফটওয়্যারটি এখনো উন্মোচন করা হয়নি। বর্তমানে ল্যান্ডনক ট্র্যাকিং সফটওয়্যারের ওয়েব ও অ্যান্ড্রয়েড সংস্করণ চালু আছে। অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপটি শুধু কর্মীদের জন্য আর ওয়েব সংস্করণ থেকে যেকোনো কোম্পানির প্রধান কার্যালয় কর্মীদের অবস্থান জানতে পারবে।
প্রশ্ন: অনলাইন সেবাদানের ক্ষেত্রে গ্রাহকতথ্যের নিরাপত্তা গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। বিষয়টি কীভাবে দেখেন?
ইরাম রহমান: ল্যান্ডনক লিমিটেড কার্যক্রম সম্প্রসারণে তিনটি বিষয়ের ওপর সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়। এগুলো হলো— গ্রাহকতথ্য, সেবার মান ও ডিজাইন বা নকশা। অর্থাৎ আমাদের কাছে প্রথম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হলো গ্রাহকতথ্য। নিরাপত্তার স্বার্থে ল্যান্ডনক লিমিটেডের হোস্টিং সার্ভিস ক্লাউড সার্ভিসে নেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। শিগগিরই আমরা আমাদের হোস্টিং সার্ভিস বিশ্বের সবচেয়ে নিরাপদ অ্যামাজন ক্লাউড সার্ভিসে নেয়ার আশা করছি। এছাড়া নিরাপত্তার স্বার্থে ওয়েবসাইটে টু-ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন প্রযুক্তি যোগ করা হবে।
প্রশ্ন: ল্যান্ডনক লিমিটেডের আর কোনো পণ্য আছে কি?
ইরাম রহমান: হ্যাঁ, ল্যান্ডনক লিমিটেডের পুরনো একটি পণ্য আছে। যেটা দিয়ে আমাদের কার্যক্রম শুরু হয়েছিল। সেটাও ট্র্যাকিংসংশ্লিষ্ট সেবা ছিল। তবে সেবাটি ভোক্তাদের লক্ষ্য করে আনা হয়েছিল। যেমন বন্ধু তার কাছের বন্ধুর অবস্থান দেখতে পারবে। মা-বাবা তাদের পরিবারের সদস্যদের অবস্থান দেখতে পারবে। অ্যাপটির কার্যক্রম কিছুদিনের জন্য বন্ধ আছে। শিগগিরই কিছু হালনাগাদ ফিচার দিয়ে আবারো প্লে স্টোরে চালু করা হবে।
প্রশ্ন: সেবাদানে কোনো বাধার সম্মুখীন হতে হয় কি?
ইরাম রহমান: বাধা তো কিছু রয়েছেই। কারণ ল্যান্ডনক ট্র্যাকিং সেবা পেতে কর্মীদের স্মার্টফোন ডিভাইস থাকতে হবে। এখন সব কোম্পানি তো তার প্রত্যেক কর্মীকে স্মার্টফোন দেয়ার আগে দশবার ভাববে। কারণ একজন বিক্রয় প্রতিনিধি নিয়োগ করে তার হাতে স্মার্টফোন দেয়া হলো, দুই মাস পর সে কর্মী চাকরি ছেড়ে যাবেন না, তার তো কোনো গ্যারান্টি নেই। রয়েছে ইন্টারনেট বাবদ ব্যয়। এর বাইরে অর্থ পরিশোধের মাধ্যমে আমাদের সেবা ব্যবহারের ক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মধ্যে খুব বেশি বাধা দেখা যায় না।
প্রশ্ন: ল্যান্ডনক ট্র্যাক নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
ইরাম রহমান: গুগল ম্যাপে আমরা সব স্থির বস্তু দেখতে পাই। ল্যান্ডনক ট্র্যাক গুগল ম্যাপ ও জিপিএস প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে চলমান বস্তু প্রদর্শন করে। আমরা বিশ্বাস করি, গুগল ম্যাপের স্থির বস্তু এবং ল্যান্ডনক ট্র্যাকের চলমান বস্তু একটি স্ট্যান্ড অ্যালোন অ্যাপের মাধ্যমে আপনার চারপাশে কী ঘটছে তা দেখাতে পারবে। বর্তমানে আমরা শুধু ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোয় সেবা দিলেও ভবিষ্যতে আমরা ভোক্তাদের জন্য অ্যাপ আনব, যেখানে তারা প্রয়োজনীয় চলমান বস্তুর অবস্থান দেখতে পারবেন। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো, আপনার হাতের ডিভাইস স্ক্রিনে অবস্থানসংক্রান্ত সঠিক তথ্য প্রদর্শন করা।
প্রশ্ন: মার্কেন্টাইল ব্যাংকের ‘উদয়ন’ প্রকল্প আপনার স্বপ্ন বাস্তবায়নে কতটুকু সহায়তা দিতে পেরেছে?
ইরাম রহমান: অবশ্যই মার্কেন্টাইল ব্যাংক লিমিটেডের ‘উদয়ন’ প্রকল্পটি আমাদের মতো তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ। ২০১৫ সালে কার্যক্রম শুরুর পর একটা দীর্ঘ সময় বিনিয়োগ খুঁজছিলাম। কিন্তু রাজস্বশূন্য একটি স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠানের জন্য বিনিয়োগ পাওয়া বা বাইরের সহায়তা পাওয়া সত্যিই কঠিন ছিল। মার্কেন্টাইল ব্যাংক লিমিটেড এ গুরুত্বপূর্ণ কাজটি করেছে। বাংলাদেশে একটি স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠানের ধারণা সম্পর্কে জেনে এবং সামান্য কিছু ডকুমেন্ট পর্যালোচনা করে অর্থলগ্নির এটাই প্রথম ঘটনা। মার্কেন্টাইল ব্যাংক লিমিটেডের উদয়ন প্রকল্পের সহায়তায় অনেক শিক্ষিত তরুণ চাকরির জন্য বসে না থেকে নিজে উদ্যোক্তা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করার সাহস পাবেন।
সৌজন্যে: বণিক বার্তা