বাংলাদেশে আবার নতুন করে ৩টি বেসরকারি ব্যাংকের অনুমোদন দিতে যাচ্ছে সরকার। নতুন ৩টি ব্যাংক কার্যক্রম শুরু করলে বাংলাদেশ মোট ব্যাংক সংখ্যা দাঁড়াবে ৬০টিতে। যা প্রতিবেশি বিরাট অর্থনীতির দেশ ভারতের থেকে বেশি। অর্থনীতিবিদদের মতে বাংলাদেশের অর্থনীতির যে আকার তাতে ২০টা বাণিজ্যিক ব্যাংক যথেষ্ট। সেখানে ৫৭টি ব্যাংক কার্যক্রম পরিচালনা করছে সেখানে আরো ব্যাংক কেন। রাজনৈতিক বিবেচনায় ব্যাংকের লাইসেন্স দেয়া মোটেই সমিচীন নয়। গত ৪ বছর আগে দেয়া ৯টা নতুন ব্যাংকের অবস্থা ভাল না। ইতিমধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফারমার্স ব্যাংকের চেয়ারম্যানকে অপসারণ করেছে এবং এমডিকে অপসারণের নোটিশ দিয়েছে। কারণ ওই ব্যাংকটি ডুবতে বসেছে। ব্যাংকিং খাতের বিপর্যয় সার্বিক অর্থনীতির বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।
ব্যাংক একটা স্পর্শকাতর প্রতিষ্ঠান। ব্যাংকে উদ্যোক্তাদের থেকে বেশি টাকা থাকে সাধারণ অমানতকারীদের। কোন কারণে ব্যাংকে আমানতকারীদের আস্থা হারালে ওই ব্যাংকের পতন অনিবার্য হয়ে পড়ে। যা শেয়ার বাজার ও দেশের মূল অর্থনীতিতে আঘাত হানে। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে কোন ব্যাংকের পতট ঘটলে সে বিপর্যয় ঠেকানোর সামর্থ্য আমাদের নেই।
দেশের অর্থনীতির আকারের সাথে ব্যাংকের সংখ্যা নির্ভর করে। বেশি সংখ্যক ব্যাংকের থেকে কম সংখ্যক ব্যাংক কিন্তু শক্তিশালী ব্যাংক বেশি কার্যকর। বাংলাদেশের থেকে অনেক বড় অর্থনীতির দেশ তাইওয়ানে মাত্র ২০টা ব্যাংক কার্যক্রম পরিচালনা করছে। ভারতকে বলা হচ্ছে, আগামী দিনের অর্থনেতিক পরাশক্তি। ভারতের ১৯টি রাষ্ট্রীয় ব্যাংক ২৭টি বেসরকারি ব্যাংক মোট ৪৬টি ব্যাংক ওই বিশাল দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত সেবা প্রদান করছে। বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩৩ বিলিয়ন ডলার। আর তাইওয়ানের রিজার্ভ ৫০০ বিলিয়ন ডলার এবং ভারতের ৫১২ বিলিয়ন ডলার। ওই দুটি দেশের তুলনায় বাংলাদেশের অর্থনীতি নিতান্তই ছোট। অথচ বাংলাদেশে ৬০টা ব্যাংক কাজ করছে, এটা তো যৌক্তিক হলো না। সঙ্গত কারণে বাংলাদেশের অধিকাংশ ব্যাংকের ভিত্তি দুর্বল। খেলাপি ঋণ, প্রবিশন ঘাটতি, দুর্বল ব্যবস্থা, দুর্নীতি লুটপাট এদের ব্যাংকের নিত্যসঙ্গী। এ অবস্থায় আরো নতুন ব্যাংক, ‘মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘায়ে’র মত দেখা দিতে পারে।
ব্যাংক বাংলাদেশ একটা লাভজনক ব্যবসা। কারণ এখানে সস্তায় জনগণের কাছ থেকে টাকা নিয়ে অনেক বেশি মুনাফায় ব্যবসায়ীদের দেয়া যায়। এজন্য এখানে মন্ত্রী, এমপি, বড় ব্যবসায়ী, আনসার, বিজিবি, পুলিশ সকলেই ব্যাংক দরকার হয়। এ সকল ব্যাংকে যদি কোন কারণে বিপর্যয় দেখা দেয়, সেক্ষেত্রে যে ক্ষতিগ্রস্ত হবে দেশের সামগ্রিক অর্থনীতি তখা আপামর জনগণ, তা বলাই বাহুল্য।