কর্পোরেট ডেস্ক : বাংলাদেশে টেক্সটাইল ভ্যালু চেইনে পদ্ধতিগত এবং ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স কর্পোরেশনের ( আইএফসি) পার্টনারশিপ ফর ক্লিনার টেক্সটাইল (প্যাক্ট) কর্মসূচি ১০ বছরের বেশি সময় ধরে রূপান্তরমূলক পরিবর্তনের অনুঘটক হিসেবে কাজ করেছে।
২০১৩ সালে ‘প্যাক্ট’ কর্মসূচি শুরুর পর এ পর্যন্ত আইএফসি বাংলাদেশে ৪৫০ টির বেশি টেক্সটাইল কারখানার সাথে কাজ করেছে, যার মাধ্যমে তাদেরকে জলবায়ু–বান্ধব চর্চায় উৎসাহিত করেছে। এই উদ্যোগ উল্লেখযোগ্য পরিমাণের মিঠা পানির ব্যবহার কমিয়েছে । এর পরিমাণ ৩৫ বিলিয়ন লিটার যা ১৯ লাখের বেশি মানুষের বার্ষিক পানির চাহিদা পূরণে সক্ষম। এই কর্মসূচি বছরে ৭ লাখ ২৩ হাজার ৬১৭ টন কার্বন নির্গমনও কমিয়েছে, যা বার্ষিক প্রায় ১ লাখ ৬০ হাজার গাড়ি সড়ক থেকে তুলে নেওয়ার সমপরিমাণ।
ডেনমার্ক এবং নেদারল্যান্ড সরকারের সহায়তায় আইএফসির অ্যাডভাইজরি প্রোগ্রাম ‘প্যাক্ট’ আইএফসির নেতৃত্বে বাংলাদেশ তৈরি পোশাক উৎপাদক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সঙ্গে যৌথভাবে পরিচালিত হচ্ছে। ‘প্যাক্ট’ বছরের পর বছর ধরে ভিএফ কর্পোরেশন, পুমা, লেভিষ্ট্রস অ্যান্ড কোম্পানি এবং টেসকোসহ নেতৃত্বস্থানীয় অংশীদারদের সঙ্গে কাজ করছে।
বাংলাদেশে নিযুক্ত ডেনমার্ক দুতাবাসের রাষ্ট্রদূত ক্রিশ্চিয়ান ব্রিকস্ মোলার বলেন, আমরা এটি দেখে আনন্দিত যে, আকার এবং ব্যাপকতা উভয় দিক থেকে বিশেষত জ্বালানি সাশ্রয় ও নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে পরামর্শ সহায়তা দেওয়ার ক্ষেত্রে ‘প্যাক্ট’ কর্মসূচি মার্কেট লিডারে পরিণত হয়েছে।
তৈরি পোশাকে দ্বিতীয় বৃহত্তম রপ্তানিকারক হিসেবে বাংলাদেশের টেক্সটাইল শিল্প দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং টেকসই পরিস্থিতির জন্য মূল অবদান রাখছে। এ শিল্পে ৪০ লাখের বেশি মানুষের কর্মসংস্থান রয়েছে , যার ৫৪ শতাংশ নারী।
বিজিএমইএর সহ সভাপতি মিরান আলি বলেন, ‘‘ আমরা গত এক দশকের বেশি সময় ধরে চলমান আইএফসির ‘প্যাক্ট’ কর্মসূচির প্রশংসা করছি। আমরা আশা করি, এর প্রভাব আগামী দশকগুলোতে থাকবে এবং আমাদের শিল্প টেকসই এবং নিরাপদ থেকে দ্রুত হারে প্রবৃদ্ধি অর্জন করবে’’।
ডেনমার্ক এবং নেদারল্যান্ড সরকার টেক্সটাইল টেক্সটাইল ও অ্যাপারেল খাতকে অধিকতর টেকসই করার এই যাত্রায় বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের সহযোগী। ‘প্যাক্ট’ কর্মসূচি এক দশক ধরে বাংলাদেশের টেক্সটাইল শিল্পে ইতিবাচক মনোবৃত্তি তৈরিতে সহায়তা করেছে। এর মধ্যে অন্যতম প্রধান অর্জন হলো টেক্সটাইল টেকনোলজি বিজনেস সেন্টারের উদ্বোধন, যা টেক্সটাইল শিল্পে শীর্ষস্থানীয় ‘নলেজ হাব’ হওয়ার জন্য প্রস্তুত।
প্যাক্ট কর্মসূচির পরবর্তী পর্যায়ে টেক্সটাইল শিল্পের কার্বন নির্গমন কমাতে সার্কুলার চর্চা এবং শুন্য কার্বন উদ্যোগ এগিয়ে নেবে। শিল্পের সক্ষমতা বজায় রাখার পাশাপাশি এই কৌশলগত পরিবর্তন উচ্চ মূল্যের পণ্য উৎপাদনে উৎসাহ দেবে, বাজার বহুমুখীকরণে সহায়তা করবে এবং পরিবেশ, সামাজিক ও করপোরেট সুশাসনের ঝুঁকি প্রশমন করবে।
বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটানে নিযুক্ত আইএফসির কান্ট্রি ম্যানেজার মার্টিন হল্টম্যান বলেন, ‘‘ আমাদের প্যাক্ট কর্মসূচির মাধ্যমে আইএফসি এক দশকের প্রভাব বিস্তারকারী সহযোগিতার বিষয়টি স্মরণ করছে এবং আমরা বাংলাদেশের টেক্সটাইল শিল্পে টেকসই প্রবৃদ্ধি এগিয়ে নিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আইএফসি বৈশ্বিক সরবরাহ চেইনে এগিয়ে নিতে এবং অধিকতর আধুনিক ও সবুজ বাজারের চাহিদা মেটাতে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পকে সহায়তা অব্যাহত রাখতে হবে। বাংলাদেশের রপ্তানি বাড়াতে এবং বাজার বৈচিত্রকরণ সহায়তা করতে এই খাত টেকসই রাখা মূল কথা।
আইএফসির ম্যানেজার, এমএএস এশিয়া আপষ্ট্রিম অ্যান্ড অ্যাডভাইজরি, হেনরি এসফেইর বলেন, ‘‘ টেক্সটাইল খাতে আমাদের সম্পৃক্ততার ক্ষেত্রে আমরা ’প্যাক্ ‘ এর মতো উদ্যোগগুলোকে অগ্রাধিকার দিয়ে থাকি। বাংলাদেশ যেহেতু মধ্য আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার পথে এগিয়ে আছে, সেহেতু টেকসই উন্নয়নের জন্য অর্থনৈতিক জটিলতাগুলো সহজ করা খুব গুরুত্বপূর্ণ। উদ্ভাবন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিকে এগিয়ে নেওয়ার মাধ্যমে অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে এই শিল্পের বৈশ্বিক সংযোগ এবং বৈচিত্রপূর্ণ পরিচালনা বিশেষ গুরুত্ব বহন করে।’’
আইএফসি সম্পর্কে
বিশ্বব্যাংক গ্রুপের সদস্য আইএফসি উদীয়মান বাজারে বেসরকারি খাতের ওপর বিশেষ মনোযোগী বিশ্বের সর্ববৃহৎ উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান। আমরা উন্নয়নশীল দেশগুলোতে বাজার এবং সুযোগ সৃষ্টিতে আমাদের পূজি, বিশেষজ্ঞ জ্ঞান এবং প্রভাব কাজে লাগানোর মাধ্যমে ১০০ টির বেশি দেশে আমরা কাজ করি। ২০২৩ অর্থবছরে আইএফসি উন্নয়নশীল দেশগুলোর বেসরকারি কোম্পানি এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য রেকর্ড ৪৩ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার অর্থায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, যার লক্ষ্য চরম দারিদ্র্য নির্মুলে বেসরকারি খাতের ক্ষমতা বাড়ানো এবং অংশীদারিত্বের সমৃদ্ধিকে এগিয়ে নেওয়া, কেননা এসব দেশের বৈশ্বিক নানা সংকটের প্রভাব মোকাবিলার জন্য সংগ্রাম করছে। আরো জানতে ভিজিট করুন www.ifc.org