November 22, 2024 - 12:10 pm
তথ‌্য অ‌ধিদপ্ত‌রের নিবন্ধন নম্বরঃ ৭৭
Homeজানা অজানা’হাউজ অব সাবাহ' কুয়েতের রাজপরিবারের কাহিনী

’হাউজ অব সাবাহ’ কুয়েতের রাজপরিবারের কাহিনী

spot_img

অনলাইন ডেস্ক: ‘সৌদি আরব ও ইরাক বেষ্টিত মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কুয়েতকে গত তিনশ বছর ধরে শাসন করে আসছে দেশটির আল সাবাহ পরিবার। কুয়েতের সংবিধান অনুযায়ী, আমির এবং ক্রাউন প্রিন্স পদের উত্তরাধিকার ঐতিহ্যগতভাবে শুধুমাত্র মুবারক আল-সাবাহ-এর বংশধরদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। আমরা আজ যে উন্নত কুয়েতকে চিনি তাকে একটি রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার সম্পূর্ণ যাত্রা জুড়ে ছিল এই পরিবারটি।

উপসাগরীয় যেকোনো নির্বাচিত সংস্থার চেয়ে বেশি ক্ষমতা রাখে এই আল সাবাহ পরিবার। যেকোনো সরকারী এবং নির্বাহী পদের উপর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ রয়েছে তাদের। দেশটিতে আমির পার্লামেন্ট ভেঙ্গে দেওয়া এবং নির্বাচন ডাক দেয়ার ক্ষমতাও রাখেন। এমনকি রাজনৈতিক বিষয়ে আমিরের কথাই শেষ কথা বলে স্বীকৃত। তবে পার্লামেন্টের বিরোধী দল প্রকাশ্যে সাবাহদের সমালোচনা করতে পারেন।শনিবার দেশটির আমির নওয়াফ আল-আহমদ আল-যাবের আল-সাবাহের মৃত্যুতে সোমবার বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয় শোক পালন করা হচ্ছে।

আল সাবাহ পরিবারের ইতিহাস: কুয়েত পিডিয়ার তথ্যানুযায়ী, আল সাবাহ মূলত পূর্ব ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল এবং আরব উপসাগরীয় অঞ্চলের সবচেয়ে বড় উপজাতি গোষ্ঠী ‘আনাজা’ থেকে এসেছে।
যারা ছিল আদনানি আরব উপজাতি। অর্থাৎ যারা আনজা বিন আসাদ বিন রাবিয়া বিন নিজর বিন মাদ বিন আদনান বংশধারার অন্তর্ভুক্ত। কুয়েতের ইতিহাস নিয়ে লেখা ‘দ্য অরিজিন অব কুয়েত’ বই অনুসারে, আল সাবাহ পরিবারের উদ্ভব হয়েছে বনি উতবাহ সংঘ থেকে। সেখানে বলা হয়, ১৭১০ খ্রিষ্টাব্দে মধ্য আরবে খরা দেখা দিলে সাবাহ পরিবার সেখান থেকে পালিয়ে প্রথমে দক্ষিণে যায়।

এরপর বিভিন্ন জায়গায় বসতি স্থাপনের চেষ্টা করলেও তারা পারেনি। পরে তারা উত্তর কুয়েতের পথে পা বাড়ান। সেখানে পানি উৎস খুঁজে পেলে অবশেষে তারা স্থায়ী বসতি স্থাপন করেন। যাত্রার এই শেষ পর্যায়কে অ্যারাবিক ভাষায় আতাবু-ইলা আল-শিমাল বা উত্তরে সরে যাওয়া বলা হয়। সেখান থেকে বনি উতুব বা বনি উতবাহ নামের উৎপত্তি। কুয়েতে বসতি স্থাপনের পরপরই সাবাহরা ওই অঞ্চল শাসন করতে শুরু করে। মুখে মুখে প্রচলিত আরেক ইতিহাস অনুযায়ী, আল সাবাহ পরিবার কুয়েতে বসবাসের আগে দক্ষিণ ইরান এবং ইরাকের বিভিন্ন অঞ্চল জুড়ে বসতি স্থাপন করেছিল। এরপর ১৭শ শতকের শুরুর দিকে আজকের কুয়েতে বসতি স্থাপন করে। সেখানে একজন সাবাহ নেতা হন, ১৭৬২ সালে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি কুয়েত শাসন করেছেন।

আল-সাবাহ পরিবারের গোড়াপত্তন করেছিলেন আমির সাবাহ প্রথম জাবের আল-সাবাহ। যিনি অষ্টাদশ শতাব্দীর মাঝামাঝি অর্থাৎ ১৭৫২ থেকে ১৭৭৬ সাল পর্যন্ত দেশটি শাসন করেছেন এখন তাদের ১৭ তম বংশধর দেশের শাসনভার গ্রহণ করলো। আজ কুয়েত বিশ্বের ষষ্ঠ বৃহত্তম তেল সমৃদ্ধ দেশ এবং দেশটির জনসংখ্যা ৪৮ লাখ, যার মধ্যে ৩৪ লাখই বিদেশী কর্মী। অটোমানদের হুমকির মুখে ১৮৯৯ সালে কুয়েতকে একটি ব্রিটিশ আশ্রিত দেশ বলে ঘোষণা করা হয়। সেই সময়ে সাবাহ পরিবার কুয়েতের আমির শাসন ক্ষমতায় থাকলেও ব্রিটিশ সংরক্ষণাধীন দেশ হিসাবেই বিবেচিত হতো। ১৯৬১ সালে ব্রিটিশদের কাছ থেকে পুরোপুরি স্বাধীনতা লাভ করে কুয়েত।

বহুদিন যুবরাজ ছিলেন শেখ নওয়াফ: শেখ নওয়াফ আল-আহমদ আল-জাবের আল-সাবাহ কুয়েতের ষোড়শ আমির এবং ১৯৬১ সালে দেশটি যুক্তরাজ্য থেকে স্বাধীনতা লাভের পর থেকে তিনি ষষ্ঠ আমির। সেই থেকে তিনি দেশটির অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছেন। শেখ নওয়াফ ১৯৩৭ সালের ২৫শে জুন কুয়েত সিটির ফারিজ আল-শুইউখে জন্মগ্রহণ করেন এবং বেড়ে ওঠেন কুয়েত সিটির দাসমান প্যালেসে।

তখন তার বাবা শেখ আহমদ আল-জাবের আল-সাবাহ কুয়েতের ক্ষমতায় ছিলেন। শেখ নওয়াফ ছিলেন তার পঞ্চম পুত্র। তিনি কুয়েতের প্রথম প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাকেন্দ্র আল মুবারকিয়াসহ বিভিন্ন স্কুলে পড়াশুনা করেছেন। তিনি ১৯৫০-এর দশকে শরিফা সুলাইমান আল-জাসেম আল-ঘানিমকে বিয়ে করেন। ওই সংসারে, তাদের চার ছেলে এবং এক মেয়ে সন্তান রয়েছে। শেখ নওয়াফ ১৯৬২ সালে হাওয়ালি রাজ্যের গভর্নর থেকে শুরু করে ১৬ বছর ধরে অনেক রাজনৈতিক পদে আসীন ছিলেন, তারপর তিনি ১৯৭৮ সালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হন।

ইরাক যখন ১৯৯০ সালে কুয়েত আক্রমণ করে এবং দখল করে, তখন তিনি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ছিলেন এবং পরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসাবেও দায়িত্ব পালন করেন। আনাদৌলু এজেন্সির খবরে বলা হচ্ছে, শেখ নওয়াফ ২০০৬ সালে ক্রাউন প্রিন্স মনোনীত হন এবং টানা ১৪ বছর এই পদে ছিল। তখন টানা দশ বছর আমির পদে ছিলেন তার সৎ ভাই শেখ সাবাহ আল-আহমাদ আল-সাবাহ।তিনি মারা যাওয়ার পর ২০২০ সালের ২৯শে সেপ্টেম্বর শেখ নওয়াফ আমির হন।এরপর তিন বছর ধরে তিনি তেল সমৃদ্ধ দেশটিকে নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন। তাকে কুয়েত এবং আরব অঞ্চলের “প্রধান কূটনীতিক” বলা হয়।

নতুন আমির শেখ মেশাল: শেখ নওয়াফের মৃত্যুর পর কুয়েতের নতুন আমির হিসেবে ৮৩ বছর বয়সী শেখ মেশাল আল-আহমদ আল-জাবের আল-সাবাহ-এর নাম ঘোষণা করা হয়েছে। তিনি শেখ নওয়াফের চাচাতো ভাই। আমির হওয়ার আগে তিনি ক্রাউন প্রিন্স পদে ছিলেন। রয়টার্সের খবরে বলা হয় যখন শেখ নওয়াফ অসুস্থ হয়ে পড়েন তখন আমিরের বেশিরভাগ দায়িত্ব তিনিই পালন করতেন।

কুয়েতের সংবিধান এবং সিংহাসনের উত্তরাধিকার আইন অনুসারে, আমির মেশাল হলেন দেশের সপ্তদশতম শাসক এবং দেশের ইতিহাসে পার্লামেন্টের সামনে সাংবিধানিক শপথ গ্রহণ করা পঞ্চম শাসক।
কুয়েতের ক্রাউন প্রিন্সের ওয়েবসাইট অনুসারে, শেখ মেশাল ১৯৪০ সালে জন্মগ্রহণ করেন এবং শাসক পরিবারে বেড়ে ওঠেন। তিনিও আল-মুবারাকিয়া স্কুলে পড়াশোনা করেন । এরপর যুক্তরাজ্যের হেন্ডন পুলিশ কলেজে পুলিশ সায়েন্স বিষয়ে পড়াশোনা করেন। ১৯৬০ সালে স্নাতক পাস করার পর তিনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যোগ দেন। এরপর তিনি বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেছেন।

নতুন এই আমির যিনি ইতিমধ্যে বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেছেন, তিনি তার জীবনের বেশিরভাগ সময় কাটিয়েছেন কুয়েতের নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা সংস্থার জন্য তথ্য সংগ্রহ করে। শেখ মেশাল কুয়েতের নিরাপত্তা ও সামরিক খাতের উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রেখেছেন। আনাদৌলু এজেন্সির তথ্যমতে, শেখ মেশাল ২০২০ সালের ৮ই অক্টোবর, ক্রাউন প্রিন্সের পদ গ্রহণ করেন। তার পূর্বসূরির মৃত্যুর আগে শেখ মেশালও ডেপুটি আমীরের পদে আসীন ছিলেন। তিনি তার এক বক্তৃতায় মন্ত্রিপরিষদ এবং পার্লামেন্টের মধ্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠার উপর জোর দিয়েছেন।

শেখ নওয়াফের মৃত্যু: কুয়েতের আমির শেখ নওয়াফ আল-আহমদ আল-জাবের আল-সাবাহ ৮৬ বছর বয়সে মারা গিয়েছেন বলে শনিবার কুয়েতের রাষ্ট্রীয় টিভি ঘোষণা করেছে। তার মৃত্যুর খবর ঘোষণার আগে দেশটির রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন তার নিয়মিত অনুষ্ঠানের সম্প্রচার বন্ধ করে দিয়ে কোরআন তেলাওয়াতে চলে যায়। তারপর এক বিবৃতিতে বলা হয়, “শেখ নওয়াফ আল-আহমাদ আল-সাবাহ-এর মৃত্যুতে আমরা গভীর দুঃখ ও শোক প্রকাশ করছি।

কুয়েতের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা জানিয়েছে, গত মাসের শেষের দিকে জরুরি স্বাস্থ্য সমস্যার কারণে আমিরকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তার অসুস্থতা বা মৃত্যুর কারণ জানা যায়নি। তার এই মৃত্যুর ঘটনায় কুয়েতে ৪০ দিনের শোক ঘোষণা করা হয়েছে এবং সরকারি অফিস তিনদিন বন্ধ রাখা হয়েছে। এদিকে বিশ্ব নেতারা শেখ নওয়াফের মৃত্যুতে শোক ও শ্রদ্ধা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে এবং তারা আল সাবাহ পরিবার এবং কুয়েতের জনগণের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন শেখ নওয়াফকে “যুক্তরাষ্ট্রের একজন গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার এবং সত্যিকারের বন্ধু” হিসাবে বর্ণনা করেছেন এবং তাদের মধ্যে “দীর্ঘদিনের সম্পর্ক জোরদার করার” প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

সূত্র: বিবিসি বাংলা।

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন
spot_img

সর্বশেষ সংবাদ

২ কোম্পানির বোর্ড সভার তারিখ ঘোষণা

নিজস্ব প্রতিবেদক : পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ২ কোম্পানির বোর্ড সভার তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। কোম্পানি ২টি হলো-গ্লোবাল...

জেড ক্যাটাগরিতে গ্লোবাল হেভি কেমিক্যালস

নিজস্ব প্রতিবেদক : পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি গ্লোবাল হেভি কেমিক্যালস লিমিটেডের ক্যাটাগরি পরিবর্তন করা হয়েছে। কোম্পানিটিকে ‘বি’ ক্যাটাগরি থেকে ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। ঢাকা স্টক...

পুঁজিবাজারের ২ কোম্পানির এজিএমের তারিখ পরিবর্তন

নিজস্ব প্রতিবেদক : পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি নাহি অ্যালুমিনিয়াম কম্পোজিট প্যানেল লিমিটেড ও বিবিএস কেবলস পিএলসির বার্ষিক সাধারণ সভার (এজিএম) তারিখ পরিবর্তন করেছে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ...

শরীয়াহ পরিপালনে ইউনিয়ন ব্যাংক বদ্ধপরিকর

কর্পোরেট ডেস্ক : ইসলামী ব্যাংকিং এমন এক ব্যাংক ব্যবস্থা যেখানে সকল লেনদেনে সুদ নিষিদ্ধ।ব্যাংকিং সংক্রান্ত সকল কার্যক্রম ইসলামী শরীয়ার আলোকে পরিচালিত হয়। ইউনিয়ন ব্যাংক পিএলসি....

সাউথইস্ট ব্যাংক, টাইনি টটস ও সামার ফিল্ড স্কুলের মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর

কর্পোরেট ডেস্ক : সাউথইস্ট ব্যাংক পিএলসি. টিউশন ফি কালেকশন সার্ভিস, পে-রোল ব্যাংকিং এবং অন্যান্য ব্যাংকিং পরিষেবা প্রদানের জন্য ব্যাংকের হেড অফিসে টাইনি টটস ও...

বরগুনায় প্রান্তিক মানুষের মাঝে এনআরবিসি ব্যাংকের ঋণ বিতরণ

কর্পোরেট ডেস্ক : বরগুনা জেলার বিভিন্ন শ্রেণি পেশার নিন্ম আয়ের প্রান্তিক মানুষদের মাঝে প্রকাশ্যে ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পুন:অর্থায়ন তহবিল কর্মসূচির আওতায়...