কর্পোরেট সংবাদ ডেস্ক : গত ২২ এপ্রিল বাসের ধাক্কায় চুয়েটের দুই শিক্ষার্থী সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর প্রতিবাদে শিক্ষার্থীদের চলা অবরোধ ও বিক্ষোভের চার দিনের মাথায় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট)।
বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) বিকেল ৪টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিলের জরুরি বৈঠকে এই ঘোষণা দেওয়া হয়।
জানা গেছে, বিকেল ৫টার মধ্যে ছাত্রদের আর শুক্রবার (২৬ এপ্রিল) সকাল ৯টার মধ্যে ছাত্রীদের হল ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তবে এ সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ হয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের কার্যালয়ে তালা এবং জব্দ থাকা ২টি বাসের একটিতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছেন।
চুয়েটের ছাত্রকল্যাণ দপ্তরের পরিচালক রেজাউল বলেন, বৃহস্পতিবার সকাল থেকে রাস্তা অবরোধ করে আন্দোলন করে আসছিল শিক্ষার্থীরা। প্রশাসন তাদের শান্ত করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছে। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের জরুরি একাডেমিক সভায় চুয়েট বন্ধ ঘোষণা করেছেন উপাচার্য।
তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের বাসে আগুন দেওয়ার পর ক্যাম্পাসে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছি।
উল্লেখ্য, গত সোমবার (২২ এপ্রিল) বিকাল ৩টার দিকে মোটরসাইকেল নিয়ে ঘুরতে বের হয়ে শাহ আমানত পরিবহনের বাসের ধাক্কায় নিহত হন চুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী শান্ত সাহা (২২) ও দ্বিতীয় বর্ষের তৌফিক হোসাইন (২১)। এ সময় জাকারিয়া হিমু (২১) নামে আরও এক শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হন। দুর্ঘটনার বিষয়টি জানার পর থেকেই আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা।
সোমবার (২২ এপ্রিল) বিকেলে বেপরোয়া গতির বাসের ধাক্কায় চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) দুই শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় বাস চালকের বিচারসহ সাত দফা দাবিতে আন্দোলন করছেন শিক্ষার্থীরা।
মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) সকাল ১০টার দিকে চুয়েট ক্যাম্পাসের সামনে গাছ ফেলে চট্টগ্রাম-কাপ্তাই মহাসড়ক অবরোধ করেন তারা। এতে ওই সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এসময় টায়ার পুড়িয়ে বিক্ষোভ করেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
বিক্ষোভ চলাকালে শিক্ষার্থীরা সাত দফা দাবি তুলে ধরেন। এসব দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত তারা আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণাও দেন। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে ফুয়াদ ইকবাল সংবাদ সম্মেলনে সাত দফা দাবি উত্থাপন করেন।
দাবিগুলো হলো: পলাতক আসামি খুনি ড্রাইভারকে দ্রুত গ্রেফতার করতে হবে। শাহ আমানত বাস কর্তৃপক্ষের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। ভুক্তভোগী পরিবারকে যথাযথ ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করতে হবে। আহত শিক্ষার্থীর সব চিকিৎসার দায়িত্ব শাহ আমানত বাস কর্তৃপক্ষকে নিতে হবে। চট্টগ্রাম-কাপ্তাই মহাসড়কে দ্রুত প্রশস্তকরণ কার্যক্রম শুরু এবং দূরপাল্লার বাস ছাড়া সব লোকাল বাস চলাচল নিষিদ্ধ করতে হবে। সেই সঙ্গে চুয়েট মেডিকেল সেন্টারের সব প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষা, এক্সরে, ইসিজি আধুনিক যন্ত্রপাতি নিশ্চিতের দাবি জানানো হয়। অ্যাম্বুলেন্স সংখ্যা শিক্ষার্থীর সংখ্যা অনুপাতে অপ্রতুল হওয়ায় অতি দ্রুত শিক্ষার্থীদের জন্য ৪ টি অ্যাম্বুলেন্স নিশ্চিত করাসহ বিভিন্ন দাবি তুলে ধরা হয়।
এ সব দাবি লিখিতভাবে আদায় না হওয়া পর্যন্ত সব প্রকার শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ থাকবে এবং আন্দোলন চলবে বলে জানান শিক্ষার্থীরা।