নিজস্ব প্রতিবেদক: ট্রেনের টিকিট কালোবাজারির মূল চক্র উত্তম-সেলিম সিন্ডিকেটের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে অনলাইনভিত্তিক টিকিট বিক্রির কোম্পানি সহজ ডটকম। রেলের বেশকিছু কর্মকর্তারা, কর্মচারী, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে এই সিন্ডিকেট টিকিট কালোবাজারির বিশাল সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছিলো বলে র্যাবের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
বিভিন্নস্থানে অভিযান চালিয়ে বৃহস্পতিবার কালোবাজারির মূলহোতা উত্তম-সেলিমসহ ১৪ জন সক্রিয় সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় এক হাজার ২৪৪টি টিকিট, ১৪টি মোবাইল ফোন এবং টিকিট বিক্রির নগদ ২০ হাজার টাকা। এর পর আজ শুক্রবার সংবাদ সম্মেলনে আসেন র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। গ্রেপ্তারদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরেন তিনি।
মঈন বলেন, প্রতিদিনই কালোবাজারির মাধ্যমে এই সিন্ডিকেট ট্রেনের ৫০০ টিকিট বিক্রি করতো। আর স্ট্যান্ডিং টিকিটের সব টাকাই আত্মসাৎ করতো চক্রটি।
তিনি বলেন, রেলওয়ের স্টেশন মাস্টার, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন সদস্য, বিভিন্ন পর্যায়ের নিরাপত্তা রক্ষী, কাউন্টারমেন এবং টিকিট বিক্রির সাথে জড়িত সহজ ডটকমের সহযোগিতায় ওই টিকিট কালোবাজারি চালাচ্ছিল উত্তম-সেলিম সিন্ডিকেট।
এদের সঙ্গে রেলের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও জড়িত আছেন বলে জানান র্যাবের এই কর্মকর্তা।
কালোবাজারির তথ্য পেয়ে কমলাপুর ও বিমানবন্দর এলাকায় অভিযান চালায় র্যাব- ৩। কালোবাজারি উত্তমের বাসায় পাওয়া যায় সাড়ে ৮০০ টিকিট। তাদের দেওয়া তথ্যে একে একে গ্রেপ্তার করা হয় সেলিমসহ আরও ১২জনকে।
খন্দকার আল মঈন বলেন, কখনো কুলি, কখনো নিরাপত্তা কর্মীদের লাইনে দাড় করিয়ে টিকিট কাটাতো চক্রটি। মাঝে মাঝে স্টেশন মাস্টার ও সহজ ডটকমের সদস্যদের মাধ্যমেও টিকিট নিতো চক্রটি।
‘গ্রেপ্তার ১৪ জনের প্রত্যেকে একেকটা রুট নিয়ন্ত্রণ করতো। টিকিটের টাকার অর্ধেক চক্রের সদস্যরা নিতো। আর বাকি টাকা কাউন্টারমেন, স্টেশন মাস্টার ও রেলওয়ে সংশ্লিষ্টদের দেয়া লাগতো,’ প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের তারা এসব তথ্য দিয়েছে বলে জানানা র্যাবের মুখপাত্র।
তিনি বলেন, এই চক্রটি বিভিন্ন কারসাজি করে ট্রেনের টিকিট সংগ্রহ করে স্বাভাবিক সময়ে দেড় থেকে দ্বিগুণ দামে যাত্রীদের কাছে বিক্রি করে। আর ঈদের ছুটিসহ বিভিন্ন ছুটিকে কেন্দ্র করে টিকিট প্রতি দাম বেড়ে যায় তিন থেকে চার গুণ পর্যন্ত।
মঈন বলেন, বাড়তি লাভের ৫০ শতাংশ পায় সরাসরি সিন্ডিকেটে জড়িত সদস্যরা। আর বাকি ৫০ শতাংশ চলে যায় কাউন্টারে থাকা বুকিং কর্মচারী ও তাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, সহজ ডটকমের কর্মচারী-কর্মকর্তা ও আইটি বিশেষজ্ঞদের হাতে।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- সেলিম (৫০), আনোয়ার হোসেন ওরফে কাশেম (৬২), অবনী সরকার সুমন (৩৫), হারুন মিয়া (৬০), মান্নান (৫০), আনোয়ার হোসেন ওরফে ডাবলু (৫০), ফারুক (৬২), শহীদুল ইসলাম বাবু (২২), জুয়েল (২৩), আব্দুর রহিম (৩২), উত্তম চন্দ্র দাস (৩০), মুর্শিদ মিয়া ওরফে জাকির (৪৫), আব্দুল আলী (২২) ও জোবায়ের (২৫)।