নিজস্ব প্রতিবেদক: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ৫ আগস্টের বিজয়ের উল্লাসে অংশ নিতে গিয়ে এখনো শরীরে দুই টুকরো গুলি বয়ে বেড়াচ্ছে আহত কলেজ ছাত্র মাকসুদুর রহমান মুন্না (১৭)। চিকিৎসকেরা তাঁর শরীর থেকে গুলির বড় একটি অংশ বের করলেও এখনো তাঁর শরীরে রয়ে গেছে ২ টুকরো গুলি। বয়ে বেড়াচ্ছে অসহনীয় যন্ত্রণা। চিকিৎসা খরচ চালাতে গিয়ে অর্থাভাবে পরেছে তার পরিবার।
মাকসুদুর রহমান মুন্না মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার ঝিটকা বাজারের ব্যবসায়ী ও বাসুদেপুর (ঝিটকা) গ্রামের নাজমুল হোসাইনের ছেলে। সে ঝিটকা খাজা রহমত আলী কলেজের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র। তিন ভাইয়ের মধ্যে সবার ছোট মুন্না।
জানা যায়, মুন্না পড়াশোনার পাশাপাশি কোচিং করতে ঢাকা যান। চলতি বছরের এপ্রিল থেকে তিনি পুরান ঢাকার গেন্ডারিয়া থানার ধুপখোলা এলাকায় তার বড় ভাইয়ের কাছে থাকতেন। এদিকে গত ৫ আগস্ট বিকেল ৪ টার দিকে রাজধানীর পুরান ঢাকার ধুপখোলা থেকে বের হওয়া একটি আনন্দ মিছিলে অংশগ্রহণ করে মুন্না। বিকাল সাড়ে চারটার দিকে বংশাল থানার সামনে যেতেই থানা পুলিশসহ কিছু সন্ত্রাসী এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণ শুরু করে। হঠাৎ একটা গুলি মুন্নার পিঠে লাগে। সাথে সাথে মাটিতে লুটিয়ে পরে মুন্না। তাৎক্ষণিকভাবে মুন্নাকে নিয়ে যাওয়া হয় মিটফোর্ড হাসপাতালে। মিটফোর্ড থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে এক্সরে করার পর ডাক্তার দেখেন গুলি অনেকটা ফুসফুসের কাছে এবং গুলিটা মোট তিনটা টুকরো হয়েছে। ডাক্তার তখন সাথে সাথে মহাখালী বক্ষব্যাধী হাসপাতালে রেফার করে। কোনোমতে হাসপাতালে ভর্তি কারার পর ডাক্তার বললেন ইমার্জেন্সি ৭ ব্যাগ রক্ত রেডি করতে। বহু চেষ্টায় রক্ত দেওয়ার পরে তার ট্রিটমেন্ট শুরু হয়। দীর্ঘ ১৯ দিন ট্রিটমেন্টের পরে অপারেশন করে তিন টুকরো হওয়া গুলির বড় এক টুকরো বের করা হয়। এখনো গুলির বাকি ছোট ২ অংশ রয়ে গেছে তার শরীরে।
মাকসুদুর রহমান মুন্না বলেন, শরীরের ভেতরে থাকা গুলির কারণে অসুবিধা হয়। মাঝে মাঝেই যন্ত্রণায় খুব কষ্ট হয়। এ পর্যন্ত চিকিৎসার পিছনে প্রায় ২ লাখ টাকা খরচ হয়ে গেছে। তেমন কোথাও থেকে কোন আর্থিক সহযোগিতা পায়নি। আব্বুর ব্যবসার ভিতর থেকে প্রায় ২ লাখ টাকা আমার চিকিৎসার পিছনে খরচ করেছে। অপারেশনের সময় হাসপাতাল থেকে শুধু অপারেশন বিলটা রাখেনি। তাছাড়া ঔষধ পত্র নিজেদেরই কিনতে হয়ছে।
মুন্নার বাবা নাজমুল হোসাইন জানান, আমার সামান্য ব্যবসা কোনোমতে সংসার চলে। ছেলের চিকিৎসার পেছনে এ পর্যন্ত প্রায় দুই লাখ টাকার মত খরচ হয়েছে। ছোট ব্যবসা সেখান থেকে টাকা নিয়ে খরচ করে এখন ব্যবসায় অনেকটা ঘাটতি হয়েছে। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, বাকি ২ টুকরো গুলির কারণে মারাত্মক কোন সমস্যা হলে যে কোন সময় অপারেশন করতে হবে। ছেলের চিকিৎসা ব্যয় করে এখন ব্যবসা নিয়ে বিপাকে আছি। ছেলের চিকিৎসার জন্য আর্থিক সহায়তা চেয়ে জেলা প্রশাসকের কাছেও গিয়েছিলাম। কিন্তু কোন কাজ হয়নি।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মানিকগঞ্জ জেলার প্রধান সমন্বয়ক ওমর ফারুক জানান, সরকারিভাবে জেলায় আহতদের তালিকা তৈরি হলেও এখনো কার্যকরী কোন কার্যক্রম দেখা যায়নি। আমরা নিজস্ব উদ্যোগে ভুক্তভোগী পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করবো।
জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের ভেরিফিকেশন হেড মো. সাফায়েত ইসলাম সাগর বলেন, আন্দোলনে যারা আহত বা শহীদ হয়েছে তারা বা তাদের পরিবারের যদি সহযোগিতার দরকার হয় তাহলে তারা জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের হটলাইন নাম্বারে (১৬০০০) যোগাযোগ করবে। সেখানে কল করলে তারা সর্বাত্মক সহযোগীত করবে। তারা এটা শতভাগ ফেরিফাই শেষ করে টাকা পাঠানোর জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
এ বিষয়ে মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসক ড. মনোয়ার হোসেন মোল্লা বলেন, এব্যাপারে আমাদের সরকার থেকে বরাদ্দ দেওয়া হলে আমরা তার সাথে যোগাযোগ করে সহযোগিতার ব্যবস্থা করবো।