নিজস্ব প্রতিবেদক : অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম ৩ মাসে প্রায় ৩০০ কোটি টাকার শুল্ক-কর ফাঁকি উদঘাটন করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এছাড়া ছোট-বড় সব ধরনের করদাতার কর ফাঁকির তদন্ত কাজও করছে সংস্থাটি। আবার এনবিআরের আয়কর, মূল্য সংযোজন কর (মূসক) ও শুল্ক বিভাগের সংস্কার প্রক্রিয়াও চলমান আছে।
সম্প্রতি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) নিজেদের ৯০ দিনের কার্যক্রম ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে অবহিত করে প্রতিবেদন পাঠিয়েছে। পাশাপাশি রাজস্ব খাতে কী ধরনের সংস্কার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে, তা–ও জানানো হয়েছে এই প্রতিবেদনে।
এনবিআরের প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, গত ৩ মাসে আয়কর, ভ্যাট ও শুল্ক বিভাগ ২৮৬ কোটি টাকার কর ফাঁকির ঘটনা খুঁজে পেয়েছে। সবচেয়ে বেশি কর ফাঁকির তথ্য পেয়েছে ভ্যাট বিভাগ। এ খাতে সব মিলিয়ে ১৬৭ কোটি টাকার ভ্যাট ফাঁকির তথ্য মিলেছে। এজন্য ১০৩টি ভ্যাট ফাঁকির মামলা হয়েছে। গত তিন মাসে এসব মামলার বিপরীতে ৬৮ কোটি টাকা আদায় হয়েছে।
অন্যদিকে শুল্ক বিভাগে ৩৯ কোটি টাকার শুল্ক ফাঁকির তথ্য পাওয়া গেছে। ৫৭টি মামলার বিপরীতে সাড়ে ৬ কোটি টাকার মতো আদায় হয়েছেও গত তিন মাসে। এনবিআরের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সেল (সিআইসি) সব মিলিয়ে গত তিন মাসে ৭৪ কোটি টাকা আদায় করেছে। তবে প্রতিবেদনে কার কাছ থেকে কত শুল্ক-কর ফাঁকি পাওয়া গেছে তা উল্লেখ করেনি।
গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশের শীর্ষ ৬ ব্যবসায়ী ও তাদের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের কর ফাঁকির বিষয়ে তদন্তে নামে এনবিআর।
ওই ছয় শীর্ষ ব্যবসায়ী সবাই শেখ হাসিনা সরকারের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত ছিলেন। এ ছাড়া বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী, আমলাসহ সন্দেহভাজন করদাতাদের কর ফাঁকির তদন্ত করা হচ্ছে।
এছাড়া সৎ করদাতারা যাতে নিরুৎসাহিত না হন সেজন্য কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়ার ২ মাসের মাথায় পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সেই সুবিধা বাতিল করে দেয় এনবিআর। এ ধরনের ঘটনা আগে ঘটেনি।
উচ্চ মূল্যস্ফীতি বর্তমান সরকারের অন্যতম চ্যালেঞ্জ। বাজারে নিত্যপণ্যের দাম যাতে স্থিতিশীল থাকে সেজন্য চাল, চিনি, পেঁয়াজ, ডিম ও ভোজ্যতেলের আমদানি ও সরবরাহ পর্যায়ে আমদানি শুল্ক, ভ্যাট, নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক, অগ্রিম আয়কর কমানো হয়েছে।
এনবিআরের প্রতিবেদনে আরো উল্লেখ করা হয়েছে, দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন শুল্ক স্টেশনে প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকার পণ্য পড়ে ছিল। সেগুলোর দ্রুত খালাসের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এতে ১৬০ কোটি টাকার শুল্ক-কর আদায় করা হয়েছে।
এ ছাড়া গত ৩ মাসে প্রায় ৩৫ কেজি সোনা আটক করা হয়েছে। বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা, মোবাইল ফোন, সিগারেট ও মাদকদ্রব্য জব্দ করা হয়েছে। পাশাপাশি ১৫৩ কোটি টাকার ব্যান্ডরোল ও স্ট্যাম্প জব্দ করা হয়েছে।