অর্থ-বাণিজ্য ডেস্ক : সরকার সম্প্রতি সঞ্চয়পত্রের সুদহার বৃদ্ধির ঘোষণা দিয়েছে। মূল্যস্ফীতির চাপে থাকা সাধারণ জনগণকে কিছুটা স্বস্তি দিতে পাশাপাশি বিনিয়োগকারী ও অবসরপ্রাপ্তদের জন্য বড় সুখবর হিসেবেই এ সুদহার বাড়ানো হয়েছে।
সম্প্রতি অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সচিব ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আব্দুর রহমান খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক সভায় সব ধরনের সঞ্চয়পত্রের সুদহার বৃদ্ধির এ সিদ্ধান্ত হয়।
ব্যাংকগুলো সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে ব্যাংকগুলো স্থায়ী আমানতে ৯ থেকে ১১ শতাংশ সুদ দিচ্ছে। তবে কোনো কোনো ব্যাংক ১৩ শতাংশ পর্যন্ত স্থায়ী আমানতে সুদ দিচ্ছে।
এছাড়া বর্তমানে ৩ মাস মেয়াদি সঞ্চয়পত্রের মুনাফা দেওয়া হচ্ছে ১১.০৪ শতাংশ, পূর্ণ মেয়াদে পারিবারিক সঞ্চয়পত্রের মুনাফা ১১.৫২ শতাংশ, ৫ বছর মেয়াদি সঞ্চয়পত্রের মুনাফা ১১.২৮ শতাংশ, পেনশন সঞ্চয়পত্রের মুনাফা ১১.৭৬ শতাংশ।
কয়েক বছর আগেও ব্যাংক আমানতের চেয়ে সঞ্চয়পত্রে অনেক বেশি মুনাফা দেওয়া হতো। বাজেটের ঘাটতি মেটাতে বাড়তি অর্থায়নে উৎসাহ দিতে ব্যাংক আমানতের সঙ্গে সঞ্চয়পত্রের সুদ হারে সামঞ্জস্য আনতেই সুদহার বাড়ানো হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরাও বলছেন, এই উদ্যোগ সাধারণ জনগণের সঞ্চয়ে আগ্রহ বাড়াবে। এছাড়াও দীর্ঘমেয়াদে দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
বর্তমানে মেয়াদ শেষে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগকারীদের অর্থ সুদাসলে তাদের অ্যাকাউন্টে ফেরত দেয় সরকার। আইএমএফের চাপ ও অধিক সুদ ব্যয়ের কারণে গত কয়েক বছর ধরে সরকার জনগণের জন্য সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত করছিল। কিন্তু রাজস্ব আহরণ কমে যাওয়ায় এবং ব্যাংক খাত থেকে ঋণ নেওয়া কমাতে আবারও সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নিতে যাচ্ছে সরকার।
গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে সরকার সঞ্চয়পত্র থেকে নিট ঋণ কমিয়েছে। এ বছর সঞ্চয়পত্র থেকে নেওয়া নিট ঋণের পরিমাণ ছিল ঋণাত্মক ৩ হাজার ৩৪৭ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের বাজেটে সঞ্চয়পত্র থেকে নিট ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ১৮ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু সংশোধিত বাজেটে লক্ষ্যমাত্রা ঋণাত্মক ৭ হাজার ৩১০ কোটি নির্ধারণ করা হয়।
একইভাবে ওয়েজ আর্নার্স ডেভেলপমেন্ট বন্ড, ইউএস ডলার প্রিমিয়াম বন্ড, ইউএস ডলার ইনভেস্টমেন্ট বন্ডের অর্থও সুদাসলে ফেরত দেওয়া হয়। ডলার সংকটের কারণে কোনো কোনো ব্যাংক এসব বন্ডে বিনিয়োগকারীদের সুদাসল বৈদেশিক মুদ্রায় পরিশোধ করতে হিমশিম খাচ্ছে বলে জানা গেছে।
জানা গেছে, বর্তমানে সঞ্চয় অধিদপ্তর ১১টি সঞ্চয় স্কিম পরিচালনা করছে। এসব স্কিমে বিনিয়োগকারীদের অর্থ মেয়াদ শেষে ফেরত দেওয়া হয়। যারা আবারও বিনিয়োগ করতে চান, তাদের নতুন করে আবার বিনিয়োগ করতে হচ্ছে।