কর্পোরেট সংবাদ ডেস্ক : আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করা হয়েছে। ট্রাইব্যুনালের নতুন চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন বিচারপতি গোলাম মর্তূজা মজুমদার। এর আগে হাইকোর্টে অতিরিক্ত বিচারক হিসেবে নিয়োগ পেয়ে ৯ অক্টোবর শপথ গ্রহণ করেন বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদার।
সোমবার (১৪ অক্টোবর) সন্ধ্যায় সচিবালয়ে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে এই তথ্য জানান, আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল।
তিনি জানান, ট্রাইব্যুনালে সদস্য হিসেবে আছেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ এবং অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ৯ অক্টোবর হাইকোর্টের অতিরিক্ত বিচারক হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন।
আইন উপদেষ্টা বলেন, সুপ্রিম কোর্টের সাথে পরামর্শক্রমে হাইকোর্টের দুজন বিচারপতি এবং একজন অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজকে নিয়ে ট্রাইব্যুনাল গঠনের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এর মাধ্যমে আমাদের আইন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে যা করার ছিল এই বিচারকাজ শুরু করার ব্যাপারে, এটার একটা বড় ধাপ সম্পন্ন হয়েছে। আমরা আশা করবো খুব শিগগির, অচিরেই বিচার কাজ শুরু হয়ে যাবে।
আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘বিচারকাজের প্রাথমিক যে প্রি-ট্রায়াল স্টেজ যেখানে ইনভেস্টিগেশন করতে হয়, আলামত সংগ্রহ করতে হয়, সেটার কাজ আমাদের অত্যন্ত দক্ষ প্রসিকিউশন এবং ইনভেস্টিগেশন টিম শুরু করেছে। আমি যতটুকু অবগত হয়েছি ওনারা খুব ক্রেডিবল (নির্ভরযোগ্য) অনেক তথ্য সংগ্রহ করেছেন। এখন বিচারিক কাজ অচিরেই শুরু হবে।’
১৯৭৩ সালের আমাদের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনের সঙ্গে আন্তর্জাতিক আইনের সমন্বয়টা কীভাবে করবেন- জানতে চাইলে ড. আসিফ নজরুল বলেন, ‘আওয়ামী লীগের আমলে যে আইনটা ছিল, সেটা আমরা অনেকটা উন্নয়নের চেষ্টা করছি। এটা নিয়ে আমরা অংশীজনদের সঙ্গে মিটিং করেছি। আমরা এটার কিছু কিছু উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এনেছি।’
তিনি আরো বলেন, ‘আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনের যে কেউ এখানে পর্যবেক্ষক হিসেবে থাকতে পারবেন। আসামি পক্ষে যারা আছেন, তারা যে কোনো দেশের আইনজীবী নিয়োগ করতে পারবেন। এ মাসের মধ্যে আইনের সংশোধন চূড়ান্ত হয়ে যাবে। আইন সংশোধনের জন্য কিন্তু বিচার আটকে থাকবে না।’
বিচারে যারা অপরাধী হিসেবে বিবেচিত হবেন, তাদের বিদেশ থেকে ফিরিয়ে আনা হবে কিভাবে- এ বিষয়ে আসিফ নজরুল বলেন, পলাতকদের বিচার করার বিধান এই আইনে রয়েছে। উনারা যদি দোষী সাব্যস্ত হন, তবে যেসব দেশের সঙ্গে আমাদের বন্দি প্রত্যর্পণ চুক্তি রয়েছে, চুক্তি অনুযায়ী তাদের বাংলাদেশে আনার ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। তাদের সঙ্গে চুক্তি নেই তাদের ক্ষেত্রে আমরা আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী যতটুক চেষ্টা করা যায় আমরা আনব।
অধস্তন আদালতের বিচার কাজের স্থবিরতা দূরীকরণে আগামী বৃহস্পতিবারের মধ্যে সারাদেশের অধস্তন আদালতগুলোতে জিপি-পিপি নিয়োগের কাজ শেষ করার চেষ্টা করবেন বলে জানান তিনি।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এডভোকেট তাজুল ইসলামকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর হিসেবে ৭ সেপ্টেম্বর নিয়োগ প্রদান করা হয়েছে। এডভোকেট তাজুল ইসলাম ছাড়াও ট্রাইব্যুনালে আরও ৫ আইনজীবীকে প্রসিকিউটর পদে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
গত ১৮ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা পুনর্গঠন করা হয়েছে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) এ্যাক্ট-১৯৭৩ এর সেকশন ৮ (১) প্রদত্ত ক্ষমতাবলে এ এ্যাক্টের সেকশন ৩-এর অপরাধসমূহের তদন্ত পরিচালনায় তদন্ত সংস্থা পুনর্গঠন করা হয়।
তদন্ত সংস্থার কর্মকর্তাগণ হলেন- পুলিশের অবসরপ্রাপ্ত এডিশনাল ডিআইজি মোঃ মাজহারুল হক, অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার মুহম্মদ শহিদুল্যাহ চৌধুরী, এন্টি টেরোরিজম ইউনিট ঢাকার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ আলমগীর, পিবিআই হেডকোয়ার্টার্স ঢাকার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাঃ মনিরুল ইসলাম, পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চ ঢাকার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ জানে আলম খান, পুলিশের ট্রাফিক এন্ড ড্রাইভিং স্কুল ঢাকার সহকারী পুলিশ সুপার সৈয়দ আব্দুর রউফ, সিআইডি ঢাকা মেট্রোর পুলিশ পরিদর্শক মোঃ ইউনুস, চারঘাট মডেল থানা রাজশাহীর পুলিশ পরিদর্শক মোঃ মাসুদ পারভেজ, আরআরএফ ঢাকার পুলিশ পরিদর্শক মুহাম্মদ আলমগীর সরকার, সিআইডি ঢাকা মেট্রো (উত্তর) পুলিশ পরিদর্শক মোঃ মশিউর রহমান।
এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, তদন্ত কর্মকর্তাগন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এ্যাক্টের অধীনে পরিচালিত বিচার অনুষ্টানের লক্ষ্যে তদন্তকার্য সম্পাদন ও ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশনকে সহায়তা করবেন।
বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন হত্যা গণহত্যা ও গুলিতে আহতদের পক্ষে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দাখিল হচ্ছে। এসব অভিযোগে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে পদত্যাগ করে পালিয়ে যাওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তার সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তিবর্গ এবং আন্দোলনকারীদের ওপর হামলায় জড়িত আওয়ামী লীগ নেতা ও ক্যাডারদেরকে আসামি করা হচ্ছে।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছাত্র-জনতার বিপ্লবের মাধ্যমে সংঘটিত অভ্যুত্থানে পদত্যাগ করে গত ৫ আগস্ট দেশ থেকে পালিয়ে যান সাবেক প্রধানমন্ত্রী আওয়ামীলীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। এরপর নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার শপথ গ্রহণ করে।
বৈষম্য বিরোধী টানা ৩৬ দিনের আন্দোলন নির্মূলে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, তৎকালীন আওয়ামী লীগ দলীয় ক্যাডারদের হামলায় দেড় হাজারের বেশি ছাত্র-জনতা শহিদ হয়েছে। গুলিতে আহত হয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করেছে ৫ শতাধিক। আহত হয়েছেন ২৩ হাজার ছাত্র জনতা। তাদের অনেকে এখনো চিকিৎসাধীন। সূত্র-বাসস।