বিশেষ প্রতিনিধি : এস আলম গ্রুপ নিয়ন্ত্রিত ৭ ব্যাংকের মাধ্যমে ১ লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা পাচারে সহায়তার অভিযোগে ৬ অডিট ফার্মকে লিগ্যাল নোটিশ দিয়েছে ইউনিয়ন ব্যাংকের স্বতন্ত্র পরিচালক শেখ জাহিদুল ইসলাম এফসিএ, সাবেক জেলা জজ এস এম সাইফুল ইসলাম, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক সদস্য আহমেদ আলী ও পুলিশের প্রাক্তন মহাপরিদর্শক খোদা বক্স চৌধুরী।
সম্প্রতি তাদের পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোহাম্মদ গোলাম কিবরিয়া এই লিগ্যাল নোটিশ পাঠান।
আইনী নোটিশ পাঠানো অডিট ফার্মগুলো হল- ১. হুদা ভাসী চৌধুরী এন্ড কোং ২. খান ওহাব শফিক রহমান এন্ড কোং ৩. শফিক বসাক এন্ড কোং ৪. একনাবিন ৫. কাজী জহির খান এন্ড কোং ৬. এম. এম. রহমান এন্ড কোং। উরোক্ত ৬ ফার্মের আট পার্টনার, ১. এসকে বসাক এফসিএ- পার্টনার, শফিক বসাক এন্ড কোং ২. এমডি মনিরুজ্জমান এফসিএ- পার্টনার, একনবিন ৩. ফারুক আহমেদ এফসিএ- পার্টনার, খান ওহাব শফিক রহমান এন্ড কোং ৪. মোহাম্মদ শাহেদ এফসিএ- পার্টনার, খান ওহাব শফিক রহমান এন্ড কোং ৫. এমডি নরুল হোসাইন খান এফসিএ- পার্টনার, কাজী জহির খান এন্ড কোং ৬. মোহাম্মদ ফরকান উদ্দিন এফসিএ- পার্টনার, এম. এম. রহমান এন্ড কোং ৭. সাব্বির আহমেদ এফসিএ- পার্টনার, হুদা ভাসী চৌধুরী এন্ড কোং ৮. শওকত হোসাইন এফসিএ- পার্টনার, হুদা ভাসী চৌধুরী এন্ড কোং।
উক্ত অডিট ফার্মগুলো আগের অর্থবছর অর্থাৎ ২০২৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর এস আলম গ্রুপ নিয়ন্ত্রিত ৭টি তফসিলি ব্যাংক যথাক্রমে- ১. আল আরাফা ইসলামি ব্যাংক পিএলসি. ২. বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক পিএলসি. ৩. ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামি ব্যাংক পিএলসি. ৪. গ্লোবাল ইসলামি ব্যাংক পিএলসি. ৫. ইসলামি ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি. ৬. ইউনিয়ন ব্যাংক পিএলসি. ৭. সোস্যাল ইসলামি ব্যাংক পিএলসি. এর অডিট করেন। ফলে অডিটরগণ আইন ও প্রচলিত বিধি অমান্য করে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোর আন-কোয়ালিফাইড অডিট রির্পোট প্রদান করেছেন।।
সংশ্লিষ্ট অডিট রিপোর্টগুলো পর্যালোচনা করে প্রতিয়মান হয় যে, অডিটরগণ আর্ন্তজাতিক নিরীক্ষামান (আইএসএ) এবং বিআরপিডি সার্কুলার অনুযায়ী গোয়িং কনসার্ন ইফেক্ট, দীর্ঘদিন ধরে চলা তারল্য সংকট, ক্যাশ রিজার্ভ রেশিও (সিআরআর), সংবিধিবদ্ধ লিক্যুইডিটি রিজার্ভ (এসএলআর) ঘাটতি, বেজল-৩ অনুযায়ী রিস্ক বেজড ক্যাপিটাল এডিকোয়েসি (আরবিসিএ) যথাযথ ঋণ শ্রেণী করণ না করা, প্রভিশন ঘাটতি বিষয়ে এড়িয়ে যাওয়া, নামে বেনামে ঋণ প্রদানের বিষয়ে মতামত না দিয়ে, রিলেটেড পার্টি ডিসক্লোজার ঠিকমত না করে, সিংঙ্গেল পার্টি এক্সপোজার লিমিট অতিক্রম করার বিষয়- ইত্যাদি কী পারফরমেন্স ইন্ডিকেটর (কেপিআই) বিষয়ে, ঝুকিপূর্ণ দূর্বল আর্থিক বিষয়ে উল্লেখ না করে আইন ও প্রচলিত বিধি অমান্য করে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোর আন-কোয়ালিফাইড অডিট রির্পোট দিয়েছেন। যার ভিত্তিতে এস আলম গ্রুপ এক লক্ষ ১৩ হাজার কোটি টাকা পৃথিবীর প্রায় ১০টি দেশে পাচার করেছে। যার ফলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলো প্রায় দেউলিয়া হয়ে পড়েছে।
সততা, স্বচ্ছতা, নীতিবোধ ইত্যাদি তোয়াক্কা না করে সমস্ত কী পারফরমেন্স ইন্ডিকেটর (কেপিআই) বিষয়ে নিরীক্ষা প্রতিবেদনে উল্লেখ না করার শর্তে সংশ্লিষ্ট নিরীক্ষা ফার্ম ও নিরীক্ষকগণ বিপুল অর্থের বিনিময়ে গোপন আতাঁতের মাধ্যমে আনকোয়ালিফাইড বা পরিচ্ছন্ন নিরীক্ষা প্রতিবেদন প্রদান করায় ঐ ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এস আলম গ্রুপ ১.১৩ লক্ষ কোটি টাকা পাচার, হরিলুট ও আত্মসাৎ করার সুযোগ পায়।ফলে ঐ সব ব্যাংকের আমানতকারীগণ তাদের আমানত ও জামানত হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে।
গত ৫ই আগস্টের পর বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ও দেশী গণমাধ্যমে বিষয়টি ফুটে উঠে। মাননীয় অর্থ উপদেষ্টা ডঃ সালেহ উদ্দিন আহমেদ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বিভিন্ন গণমাধ্যমে অডিটর ও অডিট ফার্মের অর্থ পাচারের দায়বদ্ধতা থাকায় তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার বিষয় উল্লেখ করেন।
এই বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোহাম্মদ গোলাম কিবরিয়া এফসিএস অর্থ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক, দুদক, এফআরসি, আইসিএবি, বিএসইসি, ৭টি ব্যাংক, ৬টি অডিট ফার্ম ও ৮ জন অডিটরসহ মোট ৩১ জনকে এ বিষয়ে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হবে না জানতে চেয়ে লিগ্যাল নোটিশ প্রদান করেন।
এ বিষয়ে কর্পোরেট সংবাদকে আইনজীবী মোহাম্মদ গোলাম কিবরিয়া বলেন, “অডিটরের দুনীর্তি বহু বছর ধরে চলে আসছে, তাঁরা মালিকদের কথা অনুসারে অডিট রিপোর্ট তৈরী করে আসছে, যা সংস্কার হওয়া দরকার। এই অডিটরগণের আন-কোয়ালিফাইড রিপোর্টের কারণে গত বেশ কয়েক বছর ধরে এস আলম গ্রুপ বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার করলেও অডিট ফার্ম ও অডিটরের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ব্যাংক, দুদক, এফআরসি, আইসিএবি, বিএসইসি কোন প্রকার শাস্তিমূলক ও ডিলিস্টিং করে নাই বলে উল্লেখ করেন।”
আইনী নোটিশের বিষয়ে জানতে চাইলে এম এম রহমান অ্যান্ড কোম্পানীর পার্টনার মোহাম্মদ ফোরকান উদ্দিন কর্পোরেট সংবাদকে বলেন, এস আলমের টাকা পাচারের সাথে আমাদের অডিটের কোনো সম্পর্ক নেই। এর বাইরে আমি আর কোনো মন্তব্য করতে পারবোনা।
ফিনান্সিয়াল রিপোটিং কাউন্সিল (এফআরসি) এর নির্বাহী পরিচালক সাঈদ আহমেদের কাছে আইনী নোটিশ এবং অডিটরদের আনকোয়ালিফাইড রিপোর্ট সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি কর্পোরেট সংবাদকে বলেন, আমি এ বিষয়ে কোনো কথা বলতে চাই না। আমাদের আইনজীবী আছে তিনি জবাব দিবেন।