মনির হোসেন, বেনাপোল প্রতিনিধি : আগের সময়েই পাসপোর্ট কার্যক্রম ফের শুরু হয়েছে বেনাপোল ইমিগ্রেশনে। ভোর সাড়ে ৬টার পরিবর্তে সকাল ৭টার পর এ কার্যক্রম শুরু করায় এ বন্দরটি দিয়ে ভারত-বাংলাদেশ যাতায়াতে হয়রানি ও দুর্ভোগের শিকার হচ্ছিলেন পাসপোর্টধারীরা। এ নিয়ে সংবাদ প্রকাশের পরেই পূর্বের নিয়ম চালু করে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। গত এক সপ্তাহে বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে ৩৩ হাজার ৮৯৬ জন দেশি বিদেশী পাসপোর্টযাত্রী যাতায়াত করেছেন দুই দেশের মধ্যে। বর্তমানে মেডিকেল ও স্টুডেন্ট ভিসা ছাড়া অন্য কোন ভিসা দিচ্ছে না ভারতীয় হাইকমিশন। সে কারণে যাত্রী চলাচলও কমে গেছে।
শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) বেনাপোল স্থলবন্দর আন্তর্জাতিক প্যাসেঞ্জার টার্মিনালের ইনচার্জ আব্দুল হাফিজ তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন।
আব্দুল হাফিজ জানান, ভোর সাড়ে ৬টার পরিবর্তে ৭টার পরে ইমিগ্রেশন কার্যক্রম শুরু হওয়াতে পাসপোর্টধারীদের ভোগান্তি বেড়েছিল। অনেক দুরপাল্লার পরিবহন রাত ৪টা-৫টার মধ্যে চেকপোস্টে চলে আসে। তখন থেকে যাত্রীরা লাইনে দাঁড়িয়ে যান। দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে থাকায় অনেক বৃদ্ধ-নারী পুরুষসহ শিশুদের কস্টের সীমা থাকে না। এতে নানান সমস্যারও সম্মুখীন এর মধ্যে যাত্রীরা ভারতে যাচ্ছিলেন। এর পর থেকে আবার ভোর সাড়ে ৬টা থেকে ইমিগ্রেশন কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এতে যাত্রীদের মনে স্বস্তি ফিরেছে।
সংশ্লিস্ট সূত্রে জানা যায়, গত এক সপ্তাহে (১৩-১৯ সেপ্টেম্বর) ৩৩ হাজার ৮৯৬ জন দেশি বিদেশী পাসপোর্টযাত্রী বেনাপোল-পেট্রাপোল চেকপোস্ট দিয়ে যাতায়াত করেছেন। এর মধ্যে ভারতে গেছেন ১৬ হাজার ৮৫৭ জন। যার মধ্যে বাংলাদেশি ১৩ হাজার ৮৫৯ জন, ভারতীয় দুই হাজার ৯৮৯ জন ও অন্যান্য দেশের ৯ জন, একই সময়ে ভারত থেকে এসেছেন ১৭ হাজার ৩৯ জন। এদের মধ্যে বাংলাদেশী ১৪ হাজার ৪৪৫ জন, ভারতীয় দুই হাজার ৫৮৭ জন ও অন্যান্য দেশের ৭ জন। যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়ায় সবচেয়ে বেশি পাসপোর্টধারী যাত্রী যাতায়াত করে বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে। বর্তমানে ভিসা ব্যবস্থায় নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতায় যাত্রীসংখ্যা কমে দিনে ৪ থেকে ৫ হাজারের ঘরে থাকলেও স্বাভাবিক সময়ে এর পরিমাণ ছিল ১০ থেকে ১২ হাজার। পাসপোর্টধারী যাত্রী বেনাপোল পৌঁছানোর পর প্রথমে তাকে ১০৫৫ টাকা দিয়ে সোনালী ব্যাংক থেকে ভ্রমণ ও পোর্ট ট্যাক্স স্লিপ কাটতে হয়। পরে কাস্টমসে যাত্রীর সঙ্গে থাকা ল্যাগেজ চেকিং করিয়ে ইমিগ্রেশন কার্যক্রম শেষে ভারতে প্রবেশ করতে হয়। বছরে বেনাপোল বন্দর ব্যবহারকারী পাসপোর্টধারীদের কাছ থেকে ভ্রমণ কর বাবদ বাংলাদেশ সরকার প্রায় ১৫০ কোটি টাকা ও ভিসা ফি বাবদ ভারত সরকার ১০০ কোটি টাকার কাছাকাছি আয় করে থাকে ।
বেনাপোল ইমিগ্রেশনের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আযহারুল ইসলাম জানান, কোনো অপরাধী যাতে ভারতে পালাতে না পারে সে লক্ষ্যে সতর্কতা বাড়ানো হয় ইমিগ্রেশনে। নিরাপত্তা নিশ্চিতে ইমিগ্রেশন পুলিশের পাশাপাশি বিজিবি ও সরকারের গোয়েন্দা সংস্থা পাসপোর্টধারীদের জিজ্ঞাসাবাদ করছিল। কিন্তু সাড়ে ৬টার মধ্যে সবার উপস্থিতিতে কিছুটা বিলম্ব হওয়ায় কার্যক্রম চালু করতে একটু দেরি হচ্ছিল। তবে এখন নির্দিষ্ট সময়ে কার্যক্রম শুরু হয়েছে। যাত্রীরা যাতে স্বাচ্ছন্দ্যে যাতায়াত করতে পারেন সে বিষয়ে সবাই আন্তরিক হয়ে কাজ করছেন।
মিজানুর রহমান নামে ভারতগামী এক পাসপোর্টধারী জানান, চেকপোস্টে যাত্রী পারাপারে এক মাস ধরে সকাল ৭টার পর শুরু হতো। তবে এখন ভোর সাড়ে ৬টায় কাজ শুরু হচ্ছে। এতে তাদের ভোগান্তি ও হয়রানি কমেছে।
আনিছুর রহমান নামে অপর এক যাত্রী জানান, বন্দর কর্তৃপক্ষ সার্ভিস চার্জ হিসেবে প্রতিটি পাসপোর্টযাত্রীর কাছ থেকে ৫৫ টাকা করে আদায় করছে। কিন্তুু তারা কোন সেবাই দিচ্ছে না। টার্মিনালের দ্বিতীয় তলায় বড় একটি হল রুম তালাবদ্ধ থাকলে রোদবৃষ্টিতে ঘন্টার পর ঘন্টা যাত্রীদের লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। এ সময়টা যাত্রীরা ওই হলরুমে আশ্রয় নিলে অনেকটা কস্ট লাঘব হয়।
এর আগে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ৫ আগস্টের পর অন্তবর্তীকালীন সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর মামলা হয় বিভিন্ন অপরাধীর বিরুদ্ধে। এতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয় ইমিগ্রেশনে। পুলিশ-বিজিবির পাশাপাশি সরকারি গোয়েন্দা সংস্থাগুলো সন্দেহভাজন পাসপোর্টধারীকে জিজ্ঞাসাবাদের পর ভারতে প্রবেশের অনুমতি দিচ্ছে। এতে এমনিতেই দীর্ঘ সময় লাগছে যাতায়াতে। এর মধ্যে আবার নানান অজুহাত দেখিয়ে পাসপোর্ট-কার্যক্রম ভোর সাড়ে ৬টার পরিবর্তে সকাল ৭টার পরে শুরু করায় যাত্রী ভোগান্তি বেড়েছিল।