অর্থ-বাণিজ্য ডেস্ক : পেঁয়াজ রপ্তানির ওপর বিধিনিষেধ আরও শিথিল করেছে ভারত। প্রায় দশ মাস ধরে চলা পেঁয়াজ রপ্তানি নিষেধাজ্ঞার পর সম্প্রতি ভারত পেঁয়াজ রপ্তানির ওপর আরোপিত ৪০ শতাংশ শুল্ক কমিয়ে ২০ শতাংশ করেছে।
শনিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) থেকে নতুন এই শুল্ক কার্যকর হয়েছে বলে ভারতীয় অর্থ মন্ত্রণালয়ের একটি পরিপত্রে জানানো হয়েছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় পেঁয়াজের ন্যূনতম রপ্তানি মূল্যের শর্ত প্রত্যাহারের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই অর্থ মন্ত্রণালয় শুল্ক কমানোর নির্দেশ জারি করে। এর ফলে পেঁয়াজ রপ্তানির ক্ষেত্রে প্রতি টনের সর্বনিম্ন ৫৫০ ডলার মূল্যের শর্তও তুলে নেওয়া হয়েছে।
টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতীয় কর্তৃপক্ষ এখন ব্যবসায়ীদের পেঁয়াজ রপ্তানির ক্ষেত্রে যেকোনো মূল্যে বিক্রি করার অনুমতি দিয়েছে। মহারাষ্ট্র রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের আগে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, যার ফলে পেঁয়াজ রপ্তানি বাড়বে এবং স্থানীয় কৃষকরা লাভবান হবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
অনাবৃষ্টির কারণে পেঁয়াজের অভ্যন্তরীণ সংকটের আশঙ্কায় গত ডিসেম্বরে ভারত রপ্তানি নিষিদ্ধ করেছিল। পরবর্তীতে কূটনৈতিক অনুরোধে কিছু চালান অনুমোদন দেওয়া হয়। তবে উচ্চমূল্য থাকা সত্ত্বেও রপ্তানি বন্ধ থাকায় কৃষকরা অসন্তুষ্ট ছিলেন।
এখন সর্বনিম্ন রপ্তানিমূল্য তুলে দেওয়ার ফলে ভারতীয় কৃষকরা তাদের পণ্য বিশ্ববাজারে বেশি দামে বিক্রি করতে পারবেন। দিল্লি যখন রপ্তানি শর্ত কঠোর করেছিল, তখন মহারাষ্ট্রের কৃষকরা বিক্ষোভ করেছিলেন, কিন্তু সরকার সেই সময়ে রপ্তানি শর্ত শিথিল করতে চায়নি।
হিলি স্থলবন্দরের পেঁয়াজ আমদানিকারক শহিদুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশের বাজারের তুলনায় ভারতে বাড়তি দামের কারণে পেঁয়াজ আমদানি করে লোকসান গুনতে হয়েছে। এ কারণে ভারত থেকে অনিয়মিতভাবে পেঁয়াজ আমদানি করা হচ্ছিল। পরবর্তী সময়ে দেশের বাজারে দাম কিছুটা বাড়লে ৪০ শতাংশ শুল্ক পরিশোধ করে আমদানির কারণে দেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম ঊর্ধ্বমুখী ছিল।
এমন পরিস্থিতিতে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানিতে মুখ ফিরিয়ে নিতে শুরু করেন দেশের ব্যবসায়ীরা। অনেকে তখন তুলনামূলক কম দামের কারণে মিসর, পাকিস্তানসহ অন্যান্য দেশ থেকে আমদানি শুরু করেন। এ অবস্থায় শুক্রবার সন্ধ্যায় এক নোটিশের মাধ্যমে পেঁয়াজ রপ্তানিতে আরোপিত ৪০ ভাগ শুল্ক প্রত্যাহার করে নেয় ভারত। বিষয়টি বাংলাদেশের আমদানিকারকদের নিশ্চিত করেছেন দেশটির ব্যবসায়ীরা, যা আগামী রোববার থেকেই কার্যকর হবে বলেও জানিয়েছেন তারা।
এদিকে ইকোনমিক টাইমসের খবরে বলা হয়েছে, কেবল জুন মাসেই ভারতের পেঁয়াজ রপ্তানি ৫০ শতাংশেরর বেশি পড়ে গেছে। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের ৩১ জুলাই পর্যন্ত ভারত থেকে ২ লাখ ৬০ হাজার টন পেঁয়াজ রপ্তানি করা হয়েছে। এর আগের অর্থবছরে রপ্তানির পরিমাণ ছিল ১৭ লাখ ১৭ হাজার টন। ভারতে এপ্রিল থেকে অর্থবছর শুরু হয়।
বিশ্বের অন্যতম প্রধান পেঁয়াজ রপ্তানিকারক দেশ ভারত। বাংলাদেশসহ অনেক দেশ ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি করে। বাংলাদেশের আমদানিকারকেরা ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানিতে আগ্রহী থাকেন। কারণ, প্রতিবেশী দেশটি থেকে দ্রুত পণ্য আনা যায় এবং বাজারে ভারতীয় পেঁয়াজের চাহিদা অন্যান্য দেশ থেকে আমদানি করা পেঁয়াজের চেয়ে বেশি।
টাইমস অব ইন্ডিয়া আরও বলেছে, মহারাষ্ট্রে গুরুত্বপূর্ণ বিধানসভা নির্বাচনের আগে পেঁয়াজ চাষিদের এই সুবিধা দেওয়া হলো। মহারাষ্ট্র ভারতের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পেঁয়াজ উৎপাদন এলাকা। পেঁয়াজ রপ্তানি কমে যাওয়ার কারণে এই রাজ্যের চাষিরাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছিলেন।