স্পোর্টস ডেস্ক : রাওয়ালপিন্ডিতে ইতিহাস গড়ল বাংলাদেশ। টেস্টে প্রথমবার পাকিস্তানকে হোয়াইটওয়াশ করলো টিম টাইগার্স। পঞ্চম দিনে জয়ের জন্য ১৪৩ রান প্রয়োজন ছিল সফরকারিদের। শেষ পর্যন্ত মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) রাওয়ালপিন্ডি ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টে পাকিস্তানকে ৬ উইকেটে হারালো বাংলাদেশ। ইংল্যান্ডকে টপকে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের চার নম্বরে এখন নাজমুল হোসেন শান্ত’র দল।
বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশীপের অধীনে দুই ম্যাচ টেস্ট সিরিজের দুটিতেই পাকিস্তানকে হারিয়ে ২-০ ব্যবধানে সিরিজ জিতল বাংলাদেশ। নিজেদের ২৪ বছরের টেস্ট ইতিহাসে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও জিম্বাবুয়েকেই কেবল হোয়াইটওয়াশ করেছিল বাংলাদেশ। এবার সেই তালিকায় যোগ হলো পাকিস্তানের নাম।
টেস্ট ইতিহাসে দ্বিতীয়বারের মতো ঘরের মাঠে হোয়াইটওয়াশ হল পাকিস্তান। এর আগে ২০২২ সালে ইংল্যান্ডের কাছে ৩-০ ব্যবধানে হেরেছিল ম্যান ইন ব্লুরা।
২০০৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে প্রথমবারের মতো অ্যাওয়ে সিরিজ জিতেছিল বাংলাদেশ। সেই সিরিজে খর্বশক্তির ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ২-০ ব্যবধানে হোয়াইটওয়াশ করে টাইগাররা। ২০২১ সালে জিম্বাবুয়ের মাটিতে দ্বিতীয়বারের মতো টেস্ট সিরিজ জেতে বাংলাদেশ। এবার পাকিস্তানের মাটিতে তাদেরকে হোয়াইটওয়াশ করে তৃতীয়বারের মতো এই কীর্তি গড়ল টাইগাররা।
শেষ দিনে জয়ের জন্য বাংলাদেশের প্রয়োজন ছিল ১৪৩ রান। দিনের প্রথম সেশনে ৮০ রান যোগ করা বাংলাদেশ দ্বিতীয় সেশনেই পৌঁছে যায় কাঙ্খিত লক্ষ্যে।
গতকাল চতুর্থ দিনের শেষ সেশন ভেসে যায় বৃষ্টিতে। পঞ্চম দিন অবশ্য তা হয়নি। মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) ঝলমলে আবাহওয়ার দিনে শুরুটা ভালোর আভাস দেন দুই ওপেনার জাকির হাসান ও সাদমান ইসলাম। জুটিটা থিতু হতে দেননি মির হামজা। স্কোরবোর্ডে ১৫ রান যোগ করতেই ভাঙেন এই জুটি। জাকিরকে বোল্ড করে ৪০ রানে থামান হামজা। ৫৮ রানে প্রথম উইকেট হারায় বাংলাদেশ। আর ৩৯ বলে তিন বাউন্ডারি আর দুই ছক্কায় সাজানো ছিল জাকিরের ইনিংস।
জাকির ফেরার কিছুক্ষণ পরে থামেন সাদমান। খুরাম শেহজাদের করা হাফভলিতে ড্রাইভ করতে গিয়ে ক্যাচ তুলে দেন তিনি। মিড অনে ক্যাচ লুফে নিয়ে ২৪ রানে তাকে সাজঘরে পাঠান শান মাসুদ।
৭০ রানে জোড়া উইকেট হারানোর পর রান তোলায় আর তাড়াহুড়ো করেনি বাংলাদেশ। উইকেটে এসে থিতু হওয়ার চেষ্টা করেন নাজমুল হোসেন শান্ত ও মুমিনুল হক। দুজনেই পাকিস্তানি ব্যাটারদের খেলেন দেখেশুনে। উইকেটে নির্ভার থাকা এই জুটিতে ভর করেই প্রথম সেশন শেষ করে বাংলাদেশ।
এই সেশনে ২৭ ওভারে দলীয় স্কোরটা ১২২ রানে নিয়ে যান শান্ত ও মুমিনুল। মধ্যাহ্ন বিরতির পর খেই হারান শান্ত। সালমান আলি আঘার সাদামাটা এক ডেলিভারিতে শর্ট লেগে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান বাংলাদেশ অধিনায়ক। ৫ চারে ৮২ বলে ৩৮ রান করে থামে তার ইনিংস। ৫৭ রানে ভাঙে তৃতীয় উইকেট জুটি। অধিনায়কের বিদায়ের পর টিকলেন না মুমিনুলও। ৭১ বলে ৩৪ রান করে আবরারের বলে থামেন তিনি। দুই সেট ব্যাটার ফিরলে মুশফিককে সঙ্গে করে বাকি পথ পাড়ি দেন সাকিব আল হাসান। শেষ দিকে নেমে সাকিব করেন ২১ রান। তার সঙ্গে থাকা মুশফিকের ব্যাট থেকে আসে ২২ রান।
এর আগে এই টেস্টের প্রথম ইনিংসে আগে ব্যাট করতে নেমে ২৭৪ রান করে পাকিস্তান। বিপরীতে প্রথম ইনিংসে লিটন দাসের সেঞ্চুরি আর মেহেদী মিরাজের দৃঢ়তায় বাংলাদেশ করে ২৬২ রান। ১২ রানের লিড পেয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে নেমে পাকিস্তান করে ১৭২ রান। হাসানের ফাইফার আর নাহিদ রানার গতির ঝলকে বাংলাদেশকে ১৮৫ রানের বেশি লক্ষ্য দিতে পারেনি শান মাসুদের দল। যার জবাব দিতে নেমে পঞ্চম দিনের দুই সেশেনেই বাজিমাত বাংলাদেশের। জিতে নেয় পাকিস্তানের মাটিতে প্রথম সিরিজ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর :
প্রথম ইনিংস (পাকিস্তান) : ৮৫.১ ওভারে ২৭৪/১০
প্রথম ইনিংস (বাংলাদেশ) : ৭৮.৪ ওভারে ২৬২/১০
দ্বিতীয় ইনিংস (পাকিস্তান) : ৪৬.৪ ওভারে ১৭২/১০ (শফিক ৩, আইয়ুব ২০, খুররাম ০, মাসুদ ২৮, বাবর ১১, শাকিল ২, রিজওয়ান ৪৩, সালমান ৪৭, আলী ০, আবরার ২, হামজা ৪; তাসকিন ১০-১-৪০-১, হাসান ১০-১-৪৩-৫, মিরাজ ৮-০-২৪-০, রানা ১১-১-৪৪-৪, সাকিব ৭-২-১৪-০)।
দ্বিতীয় ইনিংস (বাংলাদেশ) : ৫৬ ওভারে ১৮৫/৪ (জাকির ৪০, সাদমান ২৪, শান্ত ৩৮, মুশফিক ২২, মুমিনুল ৩৪; সাকিব ২১ হামজা ১৪-৪-৪৬-১, খুররাম ৭-০-৪০-১, আবরার ১৪-৩-৪০-১, আলী ১৭-৩-৩৭-০, সালমান ৪-১-১৭-১)।
ফল : বাংলাদেশ ৭ উইকেটে জয়ী।
সিরিজ : বাংলাদেশ ২-০ ব্যবধানে জয়ী।