স্পোর্টস ডেস্ক: আর্জেন্টিনাকে ১-০ গোলে পরাজিত করে অলিম্পিক ফুটবলের সেমিফাইনাল নিশ্চিত করেছে স্বাগতিক ফ্রান্স। বর্দুতে অনুষ্ঠিত ম্যাচটিকে ঘিড়ে আগেই সমর্থকদের উত্তেজনার একটি আভাস ছিল, হয়েছেও তাই। ম্যাচের শেষ বাঁশি বাজার সাথে সাথে দুই দলের সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে, যা দেখা গেছে ফ্রান্স ও আর্জেন্টিনার খেলোয়াড় ও কর্মকর্তাদের মধ্যেও। এদিকে দিনের অন্য ম্যাচগুলোতে জয়ী হয়ে সেমিফাইনালে টিকেট কেটেছে স্পেন, মরক্কো ও মিশর।
ক্রিস্টাল প্যালেস স্ট্রাইকার জিন ফিলিপ মাতেতার পাঁচ মিনিটের গোলে ফ্রান্সের জয় নিশ্চিত হয়। মাইকেল ওলিসের কর্ণারে পোস্টের খুব কাছে থেকে দারুন এক হেডে মাতেতা জয়সূচক গোলটি করেন। শেষ চারে থিয়েরি অঁরির দলের প্রতিপক্ষ মিশর।
গত মাসের মাঝামাঝি কোপা আমেরিকা জয়ের পর ফ্রান্সের খেলোয়াড়দের উদ্দেশ্য করে বর্ণবাদী গান গেয়ে সমালোচনার জন্ম দিয়েছিলেন আর্জেন্টাইন মিডফিল্ডার এনজো ফার্নান্দেজ। ঐ ঘটনার পর কালই প্রথমাবারের মত এই দুই দেশ মুখোমুখি হয়েছিল। ফিফা ইতোমধ্যেই এই ঘটনার তদন্তের ঘোষনা দিয়েছে। ফরাসি তারকা কিলিয়ান এমবাপ্পেসহ অনেককেই এর মাধ্যমে অপমান করা হয়েছে। যে কারনে আর্জেন্টাইন দল ফ্রান্সে পা রাখার সাথে সাথে ফরাসিদের তোপের মুখে পড়ে। গতকাল আর্জেন্টিনার জাতীয় সঙ্গীত বাজার সময় ফরাসি সমর্থকরা চিৎকার করতে থাকে।
উত্তেজনার ম্যাচের একেবারে শেষভাগে ফ্রান্সের মিডফিল্ডার এনজো মিলোট লাল কার্ড দেখেন। এ সম্পর্কে ফরাসি কোচ অঁরি বলেছেন, ‘সে মাঠে ছিলনা। মাঠে থেকে প্রতিপক্ষকে গোলে বাঁধা দিতে গিয়ে দ্বিতীয় হলুদ কার্ডের কারনে কেউ হয়তো মাঠ ছাড়তে পারে। কিন্তু যে বেঞ্চে বসে আছে তাকে লাল কার্ড দেখানো অর্থ কি। আমি সত্যিই এই সিদ্ধান্তে মোটেই সন্তুষ্ট নই।’
হেভিয়ের মাচেরানোর দলের হয়ে সুযোগ হাতছাড়া করেছেন গুইলিয়ানো সিমিওনে ও জুলিয়ান আলভারেজ। দুইবারের স্বর্ণ জয়ী আর্জেন্টিনার বিদারের সাথে সাথে ২০০০ সিডনি গেমসে ক্যামেরুনের শিরোপা জয়ের পর প্রথমবারের মত অলিম্পিকের স্বর্ণ লাতিন আমেরিকার বাইরে চলে যাচ্ছে।
ওলিসের গোল ফাউলের কারনে বাতিল হয়ে গেলে ফ্রান্সের জয়ের ব্যবধান বাড়েনি। আগামী সোমবার মিশরের বিপক্ষে সেমিফাইনালে এখন ফ্রান্স সুষ্পষ্ট ফেবারিট হিসেবে মাঠে নামবে। মার্সেইতে আরেক কোয়ার্টার ফাইনালে প্যারাগুয়েকে পেনাল্টিতে ৫-৪ গোলে পরাজিত করেছে মিশর। নির্ধারিত ও অতিরিক্ত সময়ের ম্যাচটি ১-১ গোলে ড্র ছিল।
ইব্রাহিম আদেল মিশরের হয়ে কাল অনবদ্য অবদান রেখেছেন। নিয়মিত সময়ের শেষ ভাগে তার গোলে সমতায় ফিরে মিশর। এরপর পেনাল্টি শুট আউটেও গোল করেছেন আদেল। প্যারাগুয়েল মার্সেলো পেরেজ একমাত্র খেলোয়াড় হিসেবে পেনাল্টিতে গোল করতে ব্যর্থ হয়েছেন।
এর আগে বার্সেলোনার ফারমিন লোপেজের দুর্দান্ত জোড়া গোলে এশিয়ান পরাশক্তি জাপানকে ৩-০ গোলে উড়িয়ে দিয়েছেন স্পেন। ২০২৪ ইউরো জয়ী দলের সদস্য লোপেজ ১১ মিনিটে গোল করে স্পেনকে এগিয়ে দেন। বার্সেলোনা মিডফিল্ডার এরপর ৭৩ মিনিটে সার্জিও গোমেজের কর্ণার থেকে দুর্দান্ত ভলিতে ব্যবধান দ্বিগুন করেন। অধিনায়ক আবেল রুইজ ম্যাচ শেষের চার মিনিট আগে তৃতীয় গোল করলে বড় জয় নিশ্চিত হয় স্পেনের। ১৯৯২ অলিম্পিক চ্যাম্পিয়ন ও তিন বছর আগে রৌপ্য জয়ী স্পেনের সামনে এখন আরো একটি ফাইনালের হাতছানি। মার্সেইতে শেষ চারে তাদের প্রতিপক্ষ মরক্কো।
প্যারিসে যুক্তরাষ্ট্রকে ৪-০ গোলে বিধ্বস্ত করে অলিম্পিক সেমিফাইনালের টিকেট নিশ্চিত করেছে মরক্কো। পেনাল্টি স্পট থেকে ২৯ মিনিটে মরক্কোকে এগিয়ে দেন সোফানে রাহিমি। এনিয়ে চার ম্যাচে পঞ্চম গোল করে এখন পর্যন্ত অলিম্পিকের সর্বোচ্চ গোলদাতা হিসেবে নিজেকে ধরে রেখেছেন রাহিমি। ৬৩ মিনিটে আবদে এজালজুলির এ্যাসিস্টে ইলিয়ান আকোমাখ ব্যবধান দ্বিগুন করেন। পিএসজির পরিচিত হোম গ্রাউন্ডে খেলা অধিনায়ক আচরাফ হাকিমি ৭০ মিনিটে ব্যবধান ৩-০’তে নিয়ে যান। ইনজুরি টাইমে আরো একটি পেনাল্টি থেকে মেহদি মাহুব দলের হয়ে চতুর্থ গোলটি করেছেন।