স্পোর্টস ডেস্ক : রোববার (১৪ জুলাই) বার্লিনের অলিম্পিয়াস্টেডিওনে বাংলাদেশ সময় রাত ১ টায় ইউরো চ্যাম্পিয়নশীপের ফাইনালে মুখোমুখি হচ্ছে স্পেন ও ইংল্যান্ড। উড়ন্ত স্পেনের বিরুদ্ধে মাঠে নামার আগে নক আউট পর্বের উজ্জীবিত ইংল্যান্ড নিজেদের যথাযথ প্রস্তুত করতে একটুও ছাড় দেয়নি।
উয়েফা ইউরোপীয়ান চ্যাম্পিয়নশীপের হেনরি ডিলানে ট্রফি হাতে তুলে নেবার অভিজ্ঞতা স্পেনের ইতোমধ্যেই হলেও ১৯৬৬ বিশ্বকাপ জয়ী ইংল্যান্ড বড় শিরোপা জয়ে মুখিয়ে আছে। তিন বছর আগে ইতালির কাছে ফাইনালে পেনাল্টিতে পরাজিত হয়ে ট্রফির কাছে গিয়েও তা বাড়ি নিয়ে যেতে না পারা ইংল্যান্ড এবার সেই ভুল করতে চায়না। কোচ লুইস ডি লা ফুয়েন্তের তারকা নির্ভর স্পেন দল ও গ্যারেথ সাউথগেটের প্রতিভাবান ইংল্যান্ড কেউ কারো থেকে কম যায়না। সেমিফাইনাল দুই দলই কঠিন লড়াইয়ের পর ফাইনালের টিকেট নিশ্চিত করেছে। বিশ্বকাপের ফাইনালিস্ট ফ্রান্সকে হারিয়ে স্পেন ও নেদারল্যান্ডসের বিরুদ্ধে পিছিয়ে পড়েও শেষ পর্যন্ত টানা দ্বিতীয় ইউরোর ফাইনালে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছে ইংল্যান্ড।
গত বছর এই দুই দলের জুনিয়র ও নারীরা বড় দুই আসরের ফাইনালে একে অপরকে পরাজিত করেছে। ইংল্যান্ডের অনুর্ধ্ব-২১ দল স্পেনকে পরাজিত করে ছোটদের ইউরোপীয়ান চ্যাম্পিয়নশীপ জয় করেছিল। অন্যদিকে নারী বিশ্বকাপের ফাইনালে স্পেন ১-০ গোলে ইংল্যান্ডকে পরাজিত করে বৈশ্বিক সর্বোচ্চ শিরোপা জয় করে। দুই বিভাগের দুটি দল পারলে সিনিয়র দলটিও তাদের থেকে অনুপ্রেরণা পেতেই পারে।
স্বাগতিক জার্মানির মত কিলিয়ান এমবাপ্পের নেতৃত্বাধীন ফ্রান্স ও গতবারের রানার্স-আপ ইংল্যান্ড এবারের আসরে আগে হট ফেবারিট ছিল। সেদিক থেকে কিছুটা হলেও পিছিয়ে ছিল ডি লা ফুয়েন্তের স্পেন। বিশেষ করে সাম্প্রতিক সময়ে বড় আসরের ব্যর্থতাই তাদেরকে পিছিয়ে দিয়েছিল।
তার উপর লা রোজারা গ্রুপ পর্বে তথাকথিত ‘গ্রুপ অব ডেথ’এ পড়ার পর থেকেই সামনে এগিয়ে যাবার ব্যপারে অনিশ্চয়তায় পড়ে। ২০১৮ বিশ্বকাপ রানার্স আপ ক্রোয়েশিয়া, বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ইতালি ও অপরিচিত আলবেনিয়ার বিরুদ্ধে স্পেন কতটা নিজেদের প্রমান করতে পারবে তা নিয়ে শুরু থেকেই শঙ্কা ছিল। কিন্তু দূরন্ত সূচনা করে গ্রুপ পর্বে শতভাগ রেকর্ড নিয়েই নক আউট পর্বের টিকেট পায় স্পেন। এমনকি শেষ ষোলতে টুর্ণামেন্টের সারপ্রাইজ প্যাকেজ জর্জিয়া যখন এগিয়ে গিয়েছিল তখনো স্পেন প্রতিপক্ষ কোন খেলোয়াড়ের গোল হজম করেনি। রবিন লি নরমান্ডের আত্মঘাতি গোলে স্পেন পিছিয়ে পড়ে। কিন্তু সেই ম্যাচে ঠিকই জয়লাভ করে কোয়ার্টার ফাইনালে স্বাগতিক জার্মানির মুখোমুখি হয়। স্টুটগার্টের ম্যাচটিতে মিকেল মেরিনোর শেষ মুহূর্তের গোলে জার্মানির বিদায় নিশ্চিত হয়। গত বছর নেশন্স লিগের শিরোপার জয় বাদে এ নিয়ে ষষ্ঠবার বড় কোন টুর্নামেন্টের ফাইনালে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছে স্পেন।
১৯৮৪ সালের ফাইনালে ফ্রান্সের কাছে ২-০ গোলে পরাজিত হয়ে স্পেনকে রানার্স-আপ শিরোপা নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছিল। ১৯৬৪, ২০০৮ ও ২০১২ ইউরোপীয়ান চ্যাম্পিয়ন স্পেন রেকর্ড চতুর্থ শিরোপা জয়ের নিজেদের প্রমানে এবার আর কোন কার্পন্য করতে চায়না। ইংলিশদের কাঁদিয়ে সেই রেকর্ড গড়তে পুরো স্পেন দল আত্মবিশ্বাস নিয়েই মাঠে নামবে।
এবারের শিরোপা জিততে পারলেই ইউরোর ইতিহাসে স্পেনই সবচেয়ে সফল দল হিসেবে নাম লিখাবে। এক্ষেত্রে তারা জার্মানিকে পিছনে ফেলে এগিয়ে যাবে।
অন্যদিকে ডটমুন্ডের সিগন্যাল ইডুনা পার্কে রোনাল্ড কোম্যানের নেদারল্যান্ডসের বিরুদ্ধে পুরো ৯০ মিনিটের পর কঠিন লড়াইয়ের মাধ্যমে ইংল্যান্ডকে জিততে হয়েছে। সার্বিয়ার বিরুদ্ধে প্রথম ম্যাচটি ছাড়া নক আউট পর্বে তিন ম্যাচেই ইনজুরি টাইম, অতিরিক্ত টাইম ও পেনাল্টিতে ইংল্যান্ডকে জয় আদায় করতে হয়েছে। গ্রুপ পর্বে ডেনমার্ক ও স্লোভেনিয়ার সাথে ড্র সমর্থকরাও খুব একটা ভাল চোখে দেখেনি। এজন্য কোচ গ্যারেথ সাউথগেটকে তোপের মুখে পড়তে হয়েছে। স্লোভাকিয়ার বিপক্ষে শেষ ষোলতে জুড বেলিংহাম ইংল্যান্ডকে বাইসাইকেল কিকের গোলে রক্ষা করেছেন। এরপর কোয়ার্টার ফাইনালে আরেক তারকা বুকায়ো সাকা দলকে খাদের কিনারা থেকে টেনে তুলেছেন। সেমিফাইনালে ডাচদের বিপক্ষে লড়াইটা হয়ে উঠেছিল আরো কঠিন। প্রতিপক্ষ জাভি সিমন্সের গোলে পিছিয়ে পড়ার পর ইংল্যান্ড সম্ভবত এবারের আসরের সবচেয়ে ভাল পারফরমেন্স দেখিয়ে ফাইনালের পথে এগিয়ে যায়। হ্যারি কেনের পেনাল্টির গোলে প্রথমে সমতায় ফিরে ইংল্যান্ড। এই গোলের পর কেন গোল্ডেন বুটের অন্যতম দাবীদার হয়ে উঠেছেন। কিন্তু কোম্যানের চতুরতায় ইংল্যান্ড কোনভাবেই ম্যাচে লিড নিতে পারছিল না। ৯০ মিনিট শেষে যোগ হওয়া সময়ে বদলী খেলোয়াড় কোল পালমারের এ্যাসিস্টে আরেক পরিবর্তিত খেলোয়াড় ওলি ওয়াটকিন্স কোনাকুনি শটে ইংল্যান্ডকে জয়ের পথ দেখান। প্রথম দল হিসেবে কোয়ার্টার ও সেমিফাইনালে পিছিয়ে পড়েও ইউরোর ফাইনালে ওঠার নতুন রেকর্ড গড়েছে ইংল্যান্ড। একইসাথে নক আউট পর্বে ইউরোর ইতিহাসে সবচেয়ে বেশী গোলের রেকর্ড গড়েছেন কেন।
বিদেশের মাটিতে ইংল্যান্ডের সিনিয়র দলটি কখনই বড় কোন টুর্নামেন্টের ফাইনালে খেলেনি। যে কারনে সাউথগেটের ভবিষ্যতও এই ম্যাচের ওপর অনেকটাই নির্ভর করছে। ৫৩ বছর বয়সী সাউথগেট যদিও খেলোয়াড় ও কোচ হিসেবে স্পেনকে হারানোর অভিজ্ঞতা ইতোমধ্যেই সঞ্চয় করেছেন। ১৯৯৬ ইউরোর কোয়ার্টার ফাইনালে পেনাল্টিতে ইংল্যান্ডের জয়ী দলটির সদস্য ছিলেন সাউথগেট। ২০১৮ সালে নেশন্স লিগে তার অধীনে ইংল্যান্ড ৩-২ গোলে জয়ী হয়েছিল।
জার্মানি বিরুদ্ধে শেষ আটের উত্তেজনাকর ম্যাচটিতে স্পেনের রক্ষনভাগের দুই কান্ডারি ডানি কারভাহাল ও রবিন লি নরমান্ড হলুদ কার্ড পেয়ে নিষেধাজ্ঞার কারনে সেমিতে খেলতে পারেননি। কিন্তু এই দুজনই ফাইনালে মূল দলে ফিরছেন। গত এক বছর কারভাহালের পারফরমেন্স নি:সন্দেহে ক্যারিয়ার সেরা হিসেবেই সবাই বিবেচনা করবে। রিয়াল মাদ্রিদের সাবেক অধিনায়ক নাচোকে পিছনে ফেলে মূল দলে জায়গা ধরে রেখেছেন লি নরমান্ড। তবে পেড্রিকে নিয়ে হতাশা যেন কাটছেই না। টনি ক্রুসের সাথে সংঘর্ষে বাম হাঁটুতে আঘাত পেয়ে ইউরো থেকে ছিটকে গেছেন তরুণ পেড্রি। লিস্টার সিটির সাবেক খেলোয়াড় আয়োজে পেরেজও ইনজুরির কারনে সাইডলাইনে চলে গেছেন। লামিন ইয়ামাল, নিকো উইলিয়াম ও ডানি ওলমোকে নিয়ে ইংল্যান্ডকে বাড়তি চিন্তা করতেই হচ্ছে। এই তিন তরুণ তুর্কিই এখন স্পেনের প্রাণ।
সম্ভাব্য একাদশ :
স্পেন : উনাই সাইমন, ডানি কারভাজাল, লি নরমান্ড, অমারিক লাপোর্তে, মার্ক কুকুরেলা, ফাবিয়ান রুইজ, রড্রি, ডানি ওলমো, লামিন ইয়ামাল, আলভারো মোরাতা, নিকো উইলিয়ামস।
ইংল্যান্ড : জর্ডান পিকফোর্ড, কাইল ওয়াকার, জন স্টোনস, মার্ক গুয়েহি, বুকায়ো সাকা, কোবি মেইনু, ডিক্লান রাইস, লুক শ, জুড বেলিংহাম, ফিল ফোডেন, হ্যারি কেন।