জাহাঙ্গীর কবীর: উত্তরা ফাইন্যান্স এর এমডি এস এম শামসুল আরেফিন ২০১৯ সমাপ্ত অর্থবছরে মূল বেতন পেয়েছেন ৭৮ লাখ টাকা, ভাতা পেয়েছেন ৪২ লাখ টাকা, বোনাস পেয়েছেন ২৩ লাখ টাকা। তিনি ২০১৯ সালে সর্বমোট ১ কোটি ৪৩ লাখ টাকা সার্ভিস বেনিফিট নিয়েছেন যা ২০১৮ সালে ছিল ১ কোটি ৪৩ লাখ টাকা।
লভ্যাংশ সংক্রান্ত তথ্য পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, বিগত ৫ বছরে কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের জন্য ২০২৩, ২০২২, ২০২১, ২০২০ সালে কোনো লভ্যাংশ দেয় নাই কিন্তু ২০১৯ সালে ১৫ শতাংশ নগদ ও ৫ শতাংশ স্টক ডিভিডেন্ড দিয়েছে । উল্লেখ্য ২০১৯ সালের পরে কোম্পানিটি কোন বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেনি।
অনিয়মের দায়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠানটির ব্যাবস্থাপনা পরিচালক এস এম শামসুল আরেফিনকে অপসারণ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। অনুমোদন ছাড়াই ঋণ নিয়েছে পরিচালকরা। নামে বেনামে করেছে অর্থ আত্মসাৎ। ঋণ-আমানতের তথ্যে রয়েছে গরমিল।
আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইন ১৯৯৩ এর ২০(৩) ধারা অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানটির বিশেষ নিরীক্ষা সম্পাদনের জন্য নিযুক্ত সিএ ফার্ম রহমান হক (কেপিএমজি) করা বিশেষ নিরীক্ষা প্রতিবেদনে উল্লিখিত প্রতিষ্ঠানটিতে সংঘটিত ব্যাপক আর্থিক অনিয়মের সঙ্গে জড়িত থাকায় ২৩ জুন ২০২২ সালে ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহীর পদ থেকে অপসারণ করা হয়েছিল এস এম শামসুল আরেফিনকে। বর্তমানে উত্তরা ফাইনান্সের নতুন এমডি সৈয়দ মিনহাজ আহমেদ। ২০১৯ সালের পর আপনারা কেন বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেননি এই বিষয়ে কোম্পানির সেক্রেটারির কাছে জানতে চাইলে তিনি সাথে সাথে কল কেটে দেন এবং পরবর্তীতে বারবার কল দিলে তার নাম্বার বন্ধ পাওয়া যায়।
২০১৮ সালেও তথ্য ব্যুরোতে (সিআইবি) তিন গ্রাহকের ঋণের ভুল তথ্য পাঠিয়েছিল উত্তরা ফাইন্যান্স। পরে ভুল তথ্য দেয়ায় অপরাধে উত্তরা ফাইন্যান্সকে পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এবং পরবর্তীতে জরিমানা মওকুফ চেয়ে আবেদন করলেও তা নাকচ করে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ সূত্রে জানা যায় , ২০১৯ এর সমাপ্ত বছরে কোম্পানির শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ৯.৪৫ টাকা, ২০১৮ সালে ছিল ৮.২৭ টাকা, ২০১৭ সালে ছিল ৭.২৫ টাকা, ২০১৬ সালে ছিল ৬.৬২ টাকা, ২০১৫ সালে ছিল ৪.৪১ টাকা।
কোম্পানিটির গত ৫ বছরের শেয়ার প্রতি নিট সম্পদ (এনএভি) হয়েছে ২০১৯ সালে ৬২ টাকা ৪৫ পয়সা, ২০১৮ সালে ৫৫ টাকা, ২০১৭ সালে ৪৯ টাকা ৭৪ পয়সা, ২০১৬ সালে ৪৫ টাকা ৪৯ পয়সা, ২০১৫ সালে ৪১ টাকা ৮৭ পয়সা।
লভ্যাংশ সংক্রান্ত তথ্য পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, বিগত ৫ বছরে কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের জন্য ২০১৯ সালে ১৫ শতাংশ নগদ ও ৫ শতাংশ স্টক, ২০১৮ সালে ২০ শতাংশ নগদ, ২০১৭ সালে ৩০ শতাংশ নগদ, ২০১৬ সালে ৩০ শতাংশ নগদ এবং ২০১৫ সালে ৩০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে।
পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, কোম্পানিটি ৫০০ কোটি টাকা মূলধন নিয়ে দেশের প্রধান শেয়ার বাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে ১৯৯৭ সালে তালিকভূক্ত হয়। কোম্পানির বর্তমান পরিশোধিত মূলধনের পরিমাণ ১৩১ কোটি ৪৮ লাখ ২০ হাজার টাকা। কোম্পানিটির মোট শেয়ার ১৩ কোটি ১৪ লাখ ৮১ হাজার ৫০৪ টি।
ডিএসই‘র তথ্য অনুযায়ী, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৯ ইং তারিখে উদ্যোক্তা-পরিচালকের হাতে রয়েছে ৪৮.৩৪ শতাংশ শেয়ার, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে রয়েছে ৩৪.৯৬ শতাংশ শেয়ার, বিদেশীদের হাতে রয়েছে ৩.৯১ শতাংশ শেয়ার এবং পাবলিক শেয়ার হোল্ডারদের কাছে আছে ১২.৭৯ শতাংশ।
৩০ডিসেম্বর, ২০২৯ সমাপ্ত বছরে কোম্পানির শট টার্ম লোন ৮১ কোটি ৮৮ লাখ ৩০ হাজার টাকা এবং লং টার্ম লোন রয়েছে ৬৮৫ কোটি ১৬ লাখ ৮০ হাজার টাকা। একই সময়ে রিজার্ভ অ্যান্ড সারপ্লাসে ছিল ৫৯৭ কোটি ৭৬ লাখ টাকা।
গত বছরে কোম্পানিটির শেয়ার দর উঠানামা হয়েছে ১৬.৬০ টাকা থেকে ৩৩.৯০ টাকার মধ্যে। গতকাল সমাপনী দর ছিল ১৮.৩০ টাকা। আজকের ওপেনিং ছিল ১৭.৯০ টাকা এবং সর্বশেষ কোম্পানিটির সমাপনী দর ছিল ১৭.৯০ টাকা। ১৯৯৭ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভূক্ত হয়ে কোম্পানিটি বর্তমানে জেড ক্যাটাগরিতে অবস্থান করছে।