জাহাঙ্গীর কবীর: পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত বাংলাদেশের কয়েকটি লিজিং কোম্পানির শীর্ষ ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তারা অন্যান্য কর্মচারীদের তুলনায় অনেক বেশি হারে বেতন নিচ্ছেন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে দেখা গেছে, লিজিং কোম্পানির এমডিদের বেতন অস্বাভাবিক হারে বাড়লেও সেই তুলনায় ডিভিডেন্ড বাড়েনি।
৩১ ডিসেম্বর ২০২৩ সমাপ্ত হিসাব বছরে এই রিপোর্ট লেখা পযর্ন্ত ৪ টি লিজিং কোম্পানির এজিএম ঘোষণা করা হয়েছে,ফলে এই ৪টি লিজিং কোম্পানির বার্ষিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে প্রতিবেদনটি তৈরী করা হয়েছে। বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে লিজিং কোম্পানির এমডি ও প্রধান নির্বাহীদের প্রতিমাসে তারা যে পরিমাণ সুযোগ সুবিধা নিচ্ছেন তা কতটুকু যুক্তিযুক্ত সে বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে এই রিপোর্টে।
আইপিডিসি ফাইন্যান্স
আইপিডিসি ফাইন্যান্স এর এমডি মমিনুল ইসলাম ২০২৩ সমাপ্ত অর্থবছরে মূল বেতন পেয়েছেন ৯০ লাখ টাকা, বাড়ি ভাড়া ভাতা পেয়েছেন ১২ লাখ টাকা, চিকিৎসা ভাতা পেয়েছেন ৬ লাখ টাকা, উৎসব ভাতা পেয়েছেন ১৫ লাখ টাকা, ছুটি ভাতা ১৫ লাখ টাকা, প্রভিডেন্ট ফান্ড কন্ট্রিবিউশন নিয়েছেন ৯ লাখ টাকা এবং পরিষেবা ভাতা ৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা। তিনি ২০২৩ সালে সর্বমোট ১ কোটি ৫৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা সার্ভিস বেনিফিট নিয়েছেন যা ২০২২ সালে ছিল ১ কোটি ৬৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা।
লভ্যাংশ সংক্রান্ত তথ্য পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, বিগত ৫ বছরে কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের জন্য ২০২৩ সালে ৫ শতাংশ নগদ ও ৫ শতাংশ স্টক, ২০২২ সালে ১০ শতাংশ নগদ, ২০২১ সালে ১২ শতাংশ নগদ, ২০২০ সালে ১২ শতাংশ নগদ ও ২০১৯ সালে ১০ শতাংশ নগদ ও ৫ শতাংশ স্টক ডিভিডেন্ড দিয়েছে।
ডিবিএইচ ফাইন্যান্স
ডিবিএইচ ফাইন্যান্সের এর এমডি নাসিমুল বাতেন ২০২৩ সালে সর্বসাকুল্যে ১ কোটি ৩০ লাখ টাকা বেতন ও সম্মানি নিয়েছেন যা ২০২২ সালে ছিল ১ কোটি ৩০ লাখ টাকা। ২০২৩ সালে বার্ষিক নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনে এমডির বেতন ভাতা সংক্রান্ত বিস্তারিত কোন তথ্য দেওয়া নেই।
লভ্যাংশ সংক্রান্ত তথ্য পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, বিগত ৫ বছরে কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের জন্য ২০২৩ সালে ১৫ শতাংশ নগদ, ২০২২ সালে ১৫ শতাংশ নগদ ও ২ শতাংশ স্টক, ২০২১ সালে ১৫ শতাংশ নগদ ও ১০ শতাংশ স্টক, ২০২০ সালে ১৫ শতাংশ নগদ ও ১৫ শতাংশ স্টক ২০১৯ সালে ২০ শতাংশ নগদ ও ১৫ শতাংশ স্টক ডিভিডেন্ড দিয়েছে।
আইডিএলসি ফাইন্যান্স
আইডিএলসি ফাইন্যান্স এর এমডি এম জামাল উদ্দিন ২০২৩ সমাপ্ত অর্থবছরে মূল বেতন পেয়েছেন ৬০ লাখ টাকা, ভাতা পেয়েছেন ৩০ লাখ টাকা, বোনাস ভাতা পেয়েছেন ২৫ লাখ টাকা, প্রভিডেন্ট ফান্ড কন্ট্রিবিউশন এবং পরিষেবা ভাতা পেয়েছেন ১ লাখ ১০ হাজার ৪ টাকা।তিনি ২০২৩ সালে সর্বমোট ১ কোটি ২৬ লাখ ৪ টাকা সার্ভিস বেনিফিট নিয়েছেন যা ২০২২ সালে ছিল ১ কোটি ২৬ লাখ ৪ টাকা।
লভ্যাংশ সংক্রান্ত তথ্য পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, বিগত ৫ বছরে কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের জন্য ২০২৩ সালে ১৫ শতাংশ নগদ, ২০২২ সালে ১৫ শতাংশ নগদ, ২০২১ সালে ১৫ শতাংশ নগদ ও ৫ শতাংশ স্টক, ২০২০ সালে ১৫ শতাংশ নগদ ও ৫ শতাংশ স্টক, ২০১৯ সালে ৩৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে।
ইউনাইটেড ফাইন্যান্স
ইউনাইটেড ফাইন্যান্স এর নতুন এমডি মোহাম্মদ রফিকুল ইসলামকে ২ নভেম্বর ২০২৩ সালে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে । তিনি ওই বছরে পারিশ্রমিক নিয়েছেন ১০ লাখ টাকা, অন্যান্য ভাতা পেয়েছেন ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা। তিনি ২০২৩ সালে সর্বমোট ১২ লাখ ৫০ হাজার টাকা সার্ভিস বেনিফিট নিয়েছেন যা আগের এমডি মোহাম্মদ আবুল আহসান ২০২২ সালে ৮৭ লাখ ৮৬ হাজার ২৫০ টাকা নিয়েছিলেন।
লভ্যাংশ সংক্রান্ত তথ্য পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, বিগত ৫ বছরে কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের জন্য ২০২৩ সালে ৬ শতাংশ নগদ, ২০২২ সালে ৫ শতাংশ নগদ, ২০২১ সালে ১০ শতাংশ নগদ, ২০২০ সালে ১০ শতাংশ নগদ এবং ২০১৯ সালে ১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে।
উল্লেখ্য, আইপিডিসি ফাইন্যান্স, ডিবিএইচ ফাইন্যান্স, আইডিএলসি ফাইন্যান্স এবং ইউনাইটেড ফাইন্যান্স ৪ টি কোম্পানি ছাড়া বাকি গুলো খুবই করুণ অবস্থায় টিকে আছে। ৪ টি লিজিং কোম্পানিগুলোর মধ্যে আইপডিসি ফাইন্যান্স, ডিবিএইচ ফাইন্যান্স, আইডিএলসি ফাইন্যান্স তিনটি কোম্পানির ডিভিডেন্ড বাড়েনি, শুধুমাত্র ইউনাইটেড ফাইন্যান্স ১ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ বাড়িয়েছে। বর্তমানে বাকি লিজিং কোম্পানিগুলো লভ্যাংশ ঘোষণা না করেই ওই কোম্পানির এমডিরা প্রতিবছর মোটা অংকের বেতন ভাতা ঠিকই পেয়ে যাচ্ছেন। বিনিয়োগকারীদের স্বার্থরক্ষায়, এ খাতের সকল প্রতিষ্ঠানসমূহকে বাংলাদেশ ব্যাংক ও বাংলাদেশ সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশনের আরো নজরদারী প্রয়োজন।