প্রথমবারের মতো আফগানিস্তানে সবচেয়ে বড় বোমার ব্যবহার করলো যুক্তরাষ্ট্র। এটিকেই বিশ্বের সবচেয়ে বড় বোমা বলা হচ্ছে । কিন্তু কেন এ বোমাকে সামরিক পরিভাষায় মাদার অফ অল বোম্বস বলা হচ্ছে? এর বিশেষত্বই বা কি? যুক্তরাষ্ট্রের দাবি অনুযায়ি টার্গেট ছিলো আফগানিস্তানের ইসলামিক স্টেট জঙ্গিদের একটি ঘাঁটি। বোমাটি যত ধরনের বোমা (পরমাণু বোমা ছাড়া) এ যাবতকাল ব্যবহার করা হয়েছে তার মধ্যে এটি সবচেয়ে বড়ো, যা লম্বায় ৩০ ফুট বা ৯ মিটার। বিস্ফোরকে ঠাসা ৯ হাজার ৮০০ কেজি ওজনের এ বোমাটি আসলে তৈরির উদ্যোগ নেয়া হয়েছিলো ইরাক যুদ্ধকে সামনে রেখে, যদিও সে যুদ্ধে এ বোমা ব্যবহারের প্রয়োজন হয়নি যুক্তরাষ্ট্রের।
ভয়াবহতার দিক থেকেও এ বোমাটি ভয়ংকর। কারণ এক মাইল এলাকার মধ্যে যে কোন লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানার পর এটি ১৮ হাজার পাউন্ড টিএনটি ক্ষমতাসম্পন্ন বিস্ফোরণ ঘটাতে পারে। অনেকটা কলম আকৃতির বোমাটির সামনের দিকটি ধারালো আর দুটো পাখাও রয়েছে এর শরীরে। আর বাইরের দিকটা অ্যালুমিনিয়ামে মোড়ানো যা বিস্ফোরণের মাত্রাকে ছড়িয়ে দিতে সহায়তা করে। ভূমিতে সবকিছু ধ্বংস করে দিতে সক্ষম এ বোমাটি, এমনটি ভূগর্ভস্থ বাঙ্কার বা টানেলকেও ধ্বংসস্তুপে পরিণত করে দিতে পারে মূহুর্তের মধ্যেই। একেকটি এ ধরনের বোমা তৈরির জন্য ব্যয় হয় প্রায় ১৬ মিলিয়ন ডলার।
বোমাটির উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হলো বিস্ফোরণের ভয়াবহতা এক ধরণের আতঙ্ক তৈরি করতে সক্ষম। আলবামাভিত্তিক অ্যারোনটিকস কোম্পানি ডায়নেটিকসর তৈরি করা বোমাটির প্রথম পরীক্ষামূলক বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছিলো ২০০৩ সালে ফ্লোরিডায়। তবে পারমানবিক উপাদান না থাকায় প্রেসিডেন্টের অনুমোদন ছাড়াই এ বোমা ব্যবহার করতে পারে সামরিক কর্তৃপক্ষ।
আর এই মাদার অফ অল বোম্বস এর বিপরীতে রাশিয়া বানিয়েছে ফাদার অফ অল বোম্বস, প্রযুক্তির ভাষায় যাকে থার্মোবারিক অস্ত্র বলা হচ্ছে যা দু পর্যায়ে বিস্ফোরণ ঘটায়।
আমেরিকা বলছে, গত সপ্তাহে নাঙ্গারহার প্রদেশে আইএস যোদ্ধাদের সঙ্গে লড়াইয়ে যুক্তরাষ্ট্রের স্পেশাল ফোর্সের একজন সদস্য নিহত হবার জবাবেই এই বোমা হামলা চালানো হল। যদিও কয়েকদিন আগে সিরিয়ায় এক মার্কিন বিমান হামলায় ভুলক্রমে ১৮জন মানুষ নিহত হবার ঘটনা স্বীকার করে নেয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই আফগানিস্তানে এই হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র।
এদিকে, আফগানিস্তানের সাবেক রাষ্ট্রপতি হামিদ কারজাই এই হামলার নিন্দা জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তানকে অস্ত্র পরীক্ষার ক্ষেত্র হিসেবে ব্যবহার করতে চাইছে।
প্রশ্ন হল, হঠাৎ করেই কেন এটি ব্যবহার করলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র? তাও আবার জঙ্গিদমনের নামে। তবে নিরাপত্তা বিশ্লেষকেরা ট্রাম্পের যুদ্ধংদেহী মনোভাব হিসেবে অভিহিত করছেন। জঙ্গিদমন এখন সময়ের দাবি হলেও নিরাপরাধ মানুষ যাতে না মরে সেদিকে লক্ষ্য রাখার নৈতিক দায়িত্বটুকু আমেরিকাকে মনে রাখতে হবে। এছাড়া, জঙ্গিদমনের জন্য যে বৃহদাকার বোমা ব্যবহার করা হচ্ছে তাতে নিরহ জনসাধারণ আতঙ্কিত হচ্ছে। বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্রের নজরে রাখতে হবে।