জে. জাহেদ, চট্টগ্রাম প্রতিনিধি: চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলা আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ সাংগঠনিকভাবে অনেকটাই নিষ্ক্রিয়। এখানে ইউনিয়ন কিংবা ওয়ার্ডের—কোথাও দলটির কমিটি নেই।
দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এখানে কোন সাংগঠনিক কার্যক্রম নেই। উপজেলা সভাপতির কথাই শেষ কথা। কেন্দ্রীয় দলের নানা কর্মসূচিও ঠিকঠাক ভাবে পালনের কোনো কার্যক্রম নেই। আবার কানাঘুষাও রয়েছে উপজেলা সভাপতি অন্য দলের দায়িত্ব পাচ্ছেন।
জানা যায়, ২০১৯ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর সর্বশেষ কর্ণফুলী উপজেলা আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি (৭১ সদস্যবিশিষ্ট) গঠন করা হয়। এতে শাহেদুর রহমান শাহেদকে সভাপতি ও আমজাদ হোসেনকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে সহ-সভাপতি পদে আজিম উদ্দিন সাগর, আবদুল জলিল লিটন, মো. আবদুল করিম, লোকমান আলম রোকন, জসিম উদ্দিন, মো. নুরুচ্ছফা, মোহাম্মদ সেলিম, মো. হারুনুর রশিদ, মুজিবুর রহমান সুমন ও সাইফুর রহমান; যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে মো. সাঈদ খান আরজু, মনিরুল ইসলাম বাবর, আবু তাহের, শাহ নেওয়াজ কবির মামুন ও সোহেল চৌধুরী; সাংগঠনিক সম্পাদক পদে আবদুল মাবুদ বাবুল, ইমতিয়াজ উদ্দিন, মো. সালাহ উদ্দিন, ফরসাল ইমরান, মো. পারভেজ খানসহ ৭১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়।
তখন বলা হয়েছিল, উপজেলার সমস্ত ইউনিয়নে কমিটি ও ওয়ার্ড কমিটি গঠনে জোর দেবেন তাঁরা। কিন্তু গত ৩ বছর ১০ মাস ১২ দিন পার হলেও এখনো উপজেলায় কোন দলীয় অফিস করতে পারেননি। যেখানে নেতা-কর্মীদের পদচারণ পাওয়া যাবে। সূত্র জানায়, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মাঝেমধ্যে এলাকায় দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কর্মসূচি পালন করেন। এ সময় অল্পসংখ্যক কর্মীর উপস্থিতিতে কেক কাটা ও পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্যে ওই কর্মসূচি সীমাবদ্ধ থাকে।
কমিটির সহ-সভাপতি পদের একজন বলেন, ‘কর্ণফুলী উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়েছে ঠিকই। কিন্তু নানা কারণে নেতাদের মধ্যে নতুন নেতৃত্ব ও অনুসারী তৈরি হচ্ছে না। কিছু লোক দলে নাম লিখিয়ে চলে গেছে আর দেখা নেই। এমন কি দলের কিছু কর্মসূচি পালনেও যোগ দেন না তাঁরা। অনেক নেতাকর্মী নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ছেন। যদিও তা মানতে নারাজ সভাপতি শাহেদুর রহমান শাহেদ।
এর মধ্যে গত বছর সাধারণ সম্পাদক আমজাদ হোসেন দুরারোগ্য ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ায় পদটি শূন্য হয়ে পড়ে। দলীয় সূত্রগুলো বলছে, সাধারণ সম্পাদক আমজাদ হোসেন থাকাকালে উপজেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের রাজনীতিতে একটা গতিশীলতা তৈরি হয়েছিল। কিন্তু তাঁর আকস্মিক মৃত্যুতে তা স্থবিরতার মুখে পড়ে। একই সঙ্গে এক নেতার কমিটিতে পরিণত হয় স্বেচ্ছাসেবক লীগ।
পরে এ বছরের (৫ এপ্রিল) রাতে সংগঠনটির দপ্তর সম্পাদক উজ্জ্বল ধর স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে কর্ণফুলী উপজেলা আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে সাঈদ খান আরজুর নাম ঘোষণা করেন। ওই সময় ফেসবুক জুড়ে সমালোচনা হতে দেখা যায়, তিনি ছাত্রদল থেকে উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মনোনীত হন।
এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক সাঈদ খান আরজু বলেন, ‘আমাদের স্বেচ্ছাসেবক লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়েছিল ২০১৯ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর। তখন আমি যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে ছিলাম। তখনতো কেউ ছাত্রদল থেকে এসেছি বলে সমালোচনা করেনি। যখন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক হলাম তখন এসব অপ্রচার শুরু করেছে। কিন্তু কেউ প্রমাণ দেখাতে পারেনি। অন্যদিকে, ইউনিয়ন কমিটির বিষয়ে আমাদের সাংগঠনিক ও বর্ধিত সভা হয়েছে। সেপ্টেম্বর মাসে সব ইউনিয়নে কমিটি দেওয়া হবে।’
জানতে চাইলে কর্ণফুলী উপজেলা আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি শাহেদুর রহমান শাহেদ বলেন, ‘আমরা কাজে বিশ্বাসী প্রচারে বিশ্বাসী নই। কম প্রচার করি তা ঠিক। কিন্তু সাংগঠনিক কাজে আমরা বসে নেই। ইউনিয়নের কমিটির বিষয়ে আমাদের বৈঠক হয়েছে। আগষ্ট মাসের পরেই কমিটি দেওয়ার চিন্তা করছি। বর্তমান ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকের সমন্বয়ে আমাদের দলের সাংগঠনিক কাজ ভালোই চলছে। আশা করি সেপ্টেম্বরে সব ইউনিয়নে কমিটি দিতে পারব। কেননা, আমার রাজনৈতিক অভিভাবক বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ এমপি মহোদয়ের নির্দেশক্রমে সুনামের সঙ্গে সংগঠনকে গতিশীল করতে ঐক্যবদ্ধ ভাবে সবাইকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করব।’