জে. জাহেদ, চট্টগ্রাম প্রতিনিধি: চট্টগ্রাম কর্ণফুলী উপজেলা ছাত্রলীগের ৩ মাসের আহ্বায়ক কমিটি প্রায় সাড়ে ৩ বছরেও পূর্ণাঙ্গ হয়নি। প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে তখন আহ্বায়ক কমিটি অনুমোদন দেন দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগ। ফলে, দীর্ঘদিন ধরে পূর্ণাঙ্গ কমিটি না হওয়ায় উপজেলা ছাত্রলীগে নেতৃত্বে আসতে পারছে না নবীনরা।
বঞ্চিতরা বলছেন, এতে যেমন সংগঠনের এই শাখা গতি হারিয়ে ফেলেছে, তেমনি দীর্ঘদিন ধরে সম্মেলন ও ইউনিয়ন কমিটি না হওয়ায় নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ছেন অনেক নেতাকর্মী। অন্যদিকে, এর আগে একাধিকবার কমিটি গঠন হচ্ছে এমন গুঞ্জন উঠলেও শেষ পর্যন্ত তা আলোর মুখ দেখেনি। ফলে আহ্বায়ক কমিটি দিয়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে কর্ণফুলী ছাত্রলীগ।
জানা যায়, গত ২০২০ সালের ১২ মার্চ চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি এস এম বোরহান উদ্দীন ও সম্পাদক মোঃ আবু তাহের স্বাক্ষরিত ৪১ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটির অনুমোদন দেয়। এতে সাজ্জাদ হোসেন সাজিদ কে আহ্বায়ক, ১০ জনকে যুগ্ম আহ্বায়ক ও ৩০ জনকে সদস্য করা হয়। এই ৩ মাসের কমিটির মেয়াদ প্রায় তিন বছর পার হলেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি না হওয়ায় ছাত্রলীগের সাংগঠনিক কার্যক্রমে নেতাকর্মীদের মাঝে ফাটল ধরেছে।
এছাড়াও গত ৩ জানুয়ারি কর্ণফুলীতে ৫ ইউনিয়ন ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়। ওই সময় কর্ণফুলী উপজেলা ছাত্রলীগ জানিয়েছিলেন, ছাত্রলীগের কার্যক্রমকে গতিশীল করতে কমিটিগুলো বিলুপ্ত করা হয়েছে এবং শিগগিরই নতুন কমিটি দেবেন। কিন্তু এখনো ইউনিয়ন কমিটিগুলো দিতে না পারার অভিযোগ রয়েছে বর্তমান আহ্বায়ক কমিটির বিরুদ্ধে।
অনুসন্ধানে খোদ উপজেলা ছাত্রলীগের নেতারাই তথ্য দিলেন ঘোষিত ৪১ সদস্যদের আহ্বায়ক কমিটির ভেতরে ৯ জনেই বিবাহিত। এরা হলেন-যুগ্ম আহ্বায়ক মোঃ সাইফুদ্দীন, মোহাম্মদ মহসিন, সাঈদ হোসেন রিমন, সাইদুল ইসলাম টুটুল, মোঃ কামাল উদ্দিন ও কফিল উদ্দিন। সদস্য খোরশেদুল আলম টিপু, তৌহিদুল ইসলাম, তাসকিন শাকিব ও মোঃ আবুল বশর ছোটনসহ অনেকেই।
এছাড়াও কমিটির অনেকেই মামলার আসামি, কেউ কেউ এইচএম ষ্টীল মিলস, বেসরকারি ব্যাংক, কেইপিজেড, সিমেন্ট কোম্পানী ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরিজীবী। নেই কারো ছাত্রত্ব। রয়েছে অনেকের পিঠে আবার বিএনপি পরিবারের তকমাও।
উপজেলা ছাত্রলীগের একাধিক নেতারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, ‘নেতাদের স্বেচ্ছাচারিতা, অগণতান্ত্রিক ও নেতিবাচক কর্মকাণ্ডে তারা ক্ষুব্ধ। আহ্বায়ক কমিটি দিয়ে জেলা নেতারা নীরব। ফলে, নেতৃত্ব বিকাশ এবং সংগঠনে গতিশীলতা তৈরি হচ্ছে না।
আবার বর্তমান আহ্বায়ক কমিটি এ যাবত কোন পরিচিতি সভা ডাকতে পারেননি। কমিটির আহ্বায়ক ও যুগ্ম আহ্বায়কদের সাথে কোন সমন্বয় নেই। একেক জন একেক নেতারা অনুসারি। একেক গ্রুপে বিভক্ত। অনেকটা ফেসবুক নির্ভর কার্যক্রম।
ইউনিয়নের ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সম্পাদকরা বলেন, নতুন কমিটি দেবেন বলে আমাদের কমিটিগুলো ভেঙ্গে দেওয়া হয়েছে অনেক আগেই। কিন্তু কোন খবর নাই। কমিটি না হওয়ায় অনেক ছাত্রলীগ কর্মী হারিয়ে গেছে। ইউনিয়নে দলীয় কোনো প্রোগ্রাম নাই। আমরা দ্রুত উপজেলা ছাত্রলীগের এই মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি বিলুপ্ত করে নতুন কমিটি দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি। কেননা সামনে জাতীয় নির্বাচন।
এ বিষয়ে কর্ণফুলী উপজেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘আমাদের কোনো অবহেলা নেই। আমরা চেষ্টা করছি কমিটি দিতে। কেন পারছি না। সেটাও বলাও যায় না। আশা করি আগামী সেপ্টেম্বরের দিকে কমিটি দিতে পারব। এরচেয়ে বেশি কিছু জানা নেই।’
দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি এস এম বোরহান উদ্দীনের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করেও মন্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ আবু তাহের বলেন, খুব শিগগিরই সম্মেলন করে নতুন কমিটি দেওয়ার চিন্তা করছি।’ কিন্তু এই শিগগিরই সহজেই শেষ হচ্ছে না বলে তৃণমূল নেতাদের দাবি। কারণ ছাত্রলীগের কার্যক্রমকে গতিশীল করার ঘোষণায় গত ৯ মাস আগে কর্ণফুলীর পাঁচ ইউনিয়ন কমিটিগুলো বিলুপ্ত করা হলেও নতুন কমিটি দিতে পারেনি বর্তমান আহ্বায়ক কমিটি। নিজেদের ও পূর্ণাঙ্গ কমিটি নেই।
কর্পোরেট সংবাদ/এএইচ