কর্পোরেট সংবাদ ডেস্ক : ব্যবসা ও বিনিয়োগের সম্ভাবনা অন্বেষণ করতে জাপানের ব্যবসায়ী নেতাদের বাংলাদেশে বিনিয়োগ নিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘আমরা ব্যবসার পরিবেশের উন্নতি অব্যাহত রাখব এবং বাংলাদেশে ব্যবসা করতে আপনাদের সবার জন্য একটি লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করব।’ জাপানসহ বিশ্বের বিনিয়োগকারীদের জন্য বাংলাদেশ এখন উপযুক্ত স্থান।
বৃহস্পতিবার (২৭ এপ্রিল) টোকিওতে হোটেল ওয়েস্টিনে জাপানি ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘কোভিড-১৯ মহামারির মধ্যেও বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে এবং ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রথমবারের মতো চার বিলিয়ন মার্কিন ডলারের মাইলফলক অতিক্রম করেছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘গত কয়েক বছরে বাংলাদেশে কাজ করা জাপানি কোম্পানির সংখ্যা ক্রমাগত বৃদ্ধি পেয়েছে, বিশেষ করে ২০১৪ সাল থেকে যখন আমরা আমাদের বিস্তৃত অংশীদারিত্বে প্রবেশ করি।’
সরকারপ্রধান আরও বলেন, তিনি নিশ্চিত—জাপানি ব্যবসায়ীরাও এই ক্রমবর্ধমান প্রবণতা অনুসরণ করছে এবং বিদ্যমান ব্যবসা সম্প্রসারণ বা বাংলাদেশে নতুন ব্যবসা খোলার দিকে ইতিবাচকভাবে আগ্রহী হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি আপনাদেরকে আশ্বস্ত করতে চাই, আমার সরকার এবং সমস্ত প্রাসঙ্গিক সংস্থাগুলো আপনাদেরসহ জাপানে আমাদের অন্যান্য বন্ধুদের বাংলাদেশে ব্যবসায়িক প্রচেষ্টায় সহায়তা করতে আগ্রহী।’
তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ ১৭০ মিলিয়ন জনসংখ্যার দেশ। এটি নিজেই একটি ক্রমবর্ধমান বাজার এবং প্রায় তিন বিলিয়ন ভোক্তাদের একটি বৃহৎ বাজারের কেন্দ্রস্থল। ২০৩০ সালের মধ্যে যুক্তরাজ্য ও জার্মানিকে ছাড়িয়ে বিশ্বব্যাপী নবম বৃহত্তম ভোক্তা বাজার হয়ে উঠবে বাংলাদেশ। আইসিটি, ইলেকট্রনিক্স, অবকাঠামো, চামড়া, টেক্সটাইল, আতিথেয়তা ও পর্যটন, ভারী শিল্প, রাসায়নিক ও সার এবং এসএমইর মতো বিভিন্ন খাতে সুযোগ অনেক বেড়েছে। আমাদের সরকার ব্যবসা করার মসৃণ, সহজ ও কার্যকর উপায়গুলো সহজতর করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিগত পাঁচ দশকে দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের দৃষ্টান্তমূলক ফলাফল দেখে আমাদের প্রত্যাশা আগামী বছরগুলোতে বাংলাদেশে জাপানের আরও বড় পদচিহ্ন থাকবে। আমরা ইতোমধ্যে বাংলাদেশে জাপানি সংস্থাগুলোর উত্থাপিত বেশ কয়েকটি নিয়ন্ত্রক এবং নীতিগত সমস্যার সমাধান করেছি।’
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, তিনি নিজেই বাংলাদেশ-জাপান যৌথ পাবলিক-প্রাইভেট ইকোনমিক ডায়ালগ (পিপিইডি) গঠনের উদ্যোগ নিয়েছেন এবং জাপানে পৌঁছানোর ঠিক আগে ১১ এপ্রিল পিপিইডির পঞ্চম রাউন্ডের আয়োজন করা হয়।
দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশে সবচেয়ে উদার বৈদেশিক বিনিয়োগ ব্যবস্থা রয়েছে উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, ‘প্রতিযোগিতামূলক ব্যয়, প্রচুর মানবসম্পদ, উচ্চ ক্রয়ক্ষমতাসম্পন্ন দেশীয় ভোক্তা বাজার এবং ক্রমবর্ধমান মধ্যবিত্ত শ্রেণির দিক থেকে বাংলাদেশ বিনিয়োগের জন্য অত্যন্ত লাভজনক স্থান হিসেবে দ্রুত আবির্ভূত হচ্ছে।’
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশাধিকার বৃদ্ধির মাধ্যমে বাংলাদেশ এ অঞ্চলের অর্থনৈতিক কেন্দ্র হতে সচেষ্ট রয়েছে। আমরা সারা দেশে অর্থনৈতিক অঞ্চল, হাই-টেক/সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক প্রতিষ্ঠা করছি। বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়া এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মধ্যে যোগাযোগের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য একটি পরিকল্পিত অবকাঠামো নির্মাণ করছে। টোকিওতে আমাদের দূতাবাস বাংলাদেশে আপনাদের উদ্যোগকে সহযোগিতা ও সহজতর করতে প্রস্তুত।’
জাপানের শীর্ষ ব্যবসায়ী নেতারা এ সময় বাংলাদেশে বিনিয়োগের বিষয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করেন।
বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এবং বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (বিডা) যৌথভাবে ‘বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগের সুযোগ’ শীর্ষক এ সম্মেলনের আয়োজন করে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে জেসিসিআই এবং এফবিসিসিআই অন্তর্ভুক্ত বাংলাদেশ ও জাপানের বেসরকারি কোম্পানির মধ্যে ১১টি সমঝোতা স্মারক সই হয়।
আরও পড়ুন:
এ কে ফজলুল হকের মমত্ববোধ নতুন প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করবে: প্রধানমন্ত্রী
বাংলাদেশ-জাপান সম্পর্ক ‘কৌশলগত অংশীদারিত্বে’ পৌঁছেছে : প্রধানমন্ত্রী
জাপানের সঙ্গে বাংলাদেশের ৮ চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই
জাপানের সম্রাট নারুহিতোর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাক্ষাৎ