তিমির বনিক, ষ্টাফ রিপোর্টার: মৌলভীবাজারের সর্বজন শ্রদ্ধেয় স্বাধীন বাংলা বেতারের সঙ্গীতশিল্পী ছায়া রানী আর নেই।রোববার (১৯ ফেব্রুয়ারি) রাত সোয়া ৮টার সময় শহরের লাইফ লাইন হাসপাতালে তিনি চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিলো ৭৬ বছর।
ছায়া রায়ের জামাতা মৃন্ময় রায় রতন মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। মৃত্যুকালে তিনি স্বামী, এক ছেলে ও এক মেয়েসহ অসংখ্যা গুণগ্রাহী আত্মীয় স্বজন রেখে গেছেন।
পারিবারিক সূত্রের বরাত দিয়ে জানা গেছে, ছায়া রায় দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থতায় ভুগছিলেন। শহরের লাইফ লাইন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন।
ছায়া রায় স্বাধীন বাংলাবেতার কেন্দ্রের শিল্পী ছিলেন। তিনি নজরুল সঙ্গীত ও ক্ল্যাসিকাল গানের একজন গুণী শিল্পী ছিলেন।
তিনি মৌলভীবাজারে ওস্তাদ গজেন্দ্রলাল সঙ্গীত সদন প্রতিষ্ঠা করেন। এই প্রতিষ্ঠান থেকে অসংখ্য সঙ্গীতশিল্পী শিক্ষার্থী তাঁর কাছ থেকে সঙ্গীতে তালিম নেন। এ সংবাদ প্রকাশ করার সময় পর্যন্ত তাঁর মরদেহ শহরের ক্লাব রোডে নিজ বাসায় রাখা হয়। সেখানে সর্বস্তরের মানুষ শ্রদ্ধা জানান।
লন্ডন থেকে ছায়া রায়ের সঙ্গীতের ছাত্র শিবলু রহমান বলেন- দক্ষিণ সিলেট তথা মৌলভীবাজারের সাংস্কৃতিক পরিমন্ডল, বিশেষত শুদ্ধ সংগীতের চর্চা আর ছায়া রায় প্রায় সমার্থক একটি দীর্ঘ অধ্যায়। ১৯৬৭ সালে পুর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক সঙ্গীত প্রতিযোগীতায় তিনি উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতে প্রথম ও নজরুল সঙ্গীতে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেন। কণ্ঠের দ্যুতি, তাল লয়ের শিল্পের জাদুতে জেতেন স্বর্ণপদক।
মহান স্বাধীনতা সংগ্রামে স্বাধীন বাংলা বেতারের একজন শিল্পী হিসেবে দেশমাতৃকার জন্য অসামান্য ভূমিকা রাখেন। বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেতারের নিয়মিত শিল্পী ছিলেন।
স্বর্গীয় গজেন্দ্র লাল রায় ও আশলতা রায়ের কন্যা ছায়া রায়। ব্যক্তিগত জীবনে অ্যাডভোকেট মলয় ভূষণ রায়ের সহধর্মীনি ও দুই সন্তানের জনক। বড় মেয়ে অপরাজিতা রায় কেয়া মৌলভীবাজারের দি ফ্লাওয়ার্স কেজি হাই স্কুলের শিক্ষক। ছেলে মানবেন্দ্র রায় মাদল হাইকোর্টের আইনজীবী। ১৯৪৭ সালের ৩০ মার্চ জন্ম এই বরেণ্য শিল্পীর।
গত অর্ধ শতাব্দীর বেশি সময় এই নারী তার জীবন ব্যাপৃত রাখেন সুর আর সঙ্গীতের সাধনায়। শিবলু রহমান বলেন, পঞ্চাশ বছর আগে এই সুরের সাধক চাইলেই ঢাকায় স্থায়ী হয়ে সঙ্গীতে নিজের কণ্ঠের ইন্দ্রজাল, জাদু ছড়িয়ে গড়তে পারতেন নিজের ক্যারিয়ার। অর্জন করতে পারতেন দেশ বিদেশে খ্যাতি ও জনপ্রিয়তা।
কিন্তু সে পথে হাঁটেন নি তাল লয়কে কর্ণ কূহরে সাধন করা, সঙ্গীতের ভেতরে নিজের জীবনযাপন করা এই নারী। শিল্পী হিসেবে নিজের নাম, পরিচয়, খ্যাতি, বিত্ত কোনটাই চাননি তিনি। বরং এসব জলাঞ্জলি দিয়ে তিনি শুরু থেকে শুদ্ধ সুর আর সংগীতকে প্রজন্মের মাঝে ছড়িয়ে দেবার ব্রত নিয়েছিলেন। গত ৪৩ বছরে মৌলভীবাজার, সিলেটসহ দেশ-বিদেশে অসংখ্য শিল্পী গড়ে তুলেছেন তিনি। তার চলে যাওয়া সংগীত অঙ্গন থেকে এক রত্নকে বিদেয় জানাতে হলো।