বগুড়া প্রতিনিধি: আগামি ০৫জুন বগুড়ার শেরপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচন। ষষ্ঠ এই উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াতসহ তাদের সমমনা দল ও প্রার্থীরা অংশ না নিলেও ভোটের মাঠ বেশ জমে উঠেছে। বিশেষ করে শেষ মুহুর্তের প্রচার-প্রচারণায় ব্যস্ত প্রার্থী ও তাদের কর্মী-সমর্থকরা। শেষবারের মতো ছুটে যাচ্ছেন ভোটারদের কাছে। মিছিল-মিটিংয়ে সরগরম অলিগলি, হাট-বাজার ও রাস্তাঘাট। দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত গানে গানে মাইকেও চলছে প্রার্থীদের জমজমাট প্রচার-প্রচারণা।
শেরপুর উপজেলায় আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট দুই নেতাসহ পাঁচজন চেয়ারম্যান প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এরমধ্যে ওই দুই হেভিওয়েট প্রার্থীর মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস মিলেছে। এছাড়া ভাইস চেয়ারম্যান পদে ছয়জন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে চারজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তাঁরা সবাই আওয়ামীলীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী। বিশেষ করে ভাইস চেয়ারম্যান পদে কেউ কাউকে ছাড় দিচ্ছে না। স্ব-স্ব প্রার্থীরা তাদের পক্ষে ভোটার টানতে মরিয়া। তবে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে তেমন হেভিওয়েট প্রার্থী নেই। এরপরও শক্তিশালী লড়াই দেখার অপেক্ষায় এই উপজেলার ভোটাররা।
উপজেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, ভোটগ্রহণ শুরুর ৩২ঘন্টা আগ পর্যন্ত চলবে প্রচারণা। সে অনুযায়ী সোমবার দিনগত রাত বারোটায় শেষ হচ্ছে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা। নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থীরা হলেন- উপজেলা সাধারণ সম্পাদক সুলতান মাহমুদ প্রতীক (আনারস), সহ-সভাপতি শাহজামাল সিরাজী (মোটরসাইকেল), সাবেক যুবলীগ নেতা এমএ হান্নান (জোড়া ফুল), জাতীয় পার্টির নেতা রুবেল আহমেদ ( কাপ-পিরিচ) ও বঙ্গবন্ধু সৈনিক লীগের নেতা জাকারিয়া তারেক বিদ্যুৎ প্রতীক (ঘোড়া)।
ভাইস চেয়ারম্যান পদের প্রার্থীরা হলেন- উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি আলহাজ¦ মুনসী সাইফুল বারী ডাবলু প্রতীক (চশমা), উপজেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সাধারণ সম্পাদক নূরে আলম সানি (তালা), আ.লীগ নেতা তাজুল ইসলাম কিরণ (টিউবওয়েল), সাদ্দাম হোসেন (মাইক), ছাত্রলীগ নেতা রনি সরকার (উড়োজাহাজ) ও বিধান সরকার ঘোষ প্রতীক (টিয়া পাখি)। এছাড়া মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীরা হলেন- ফাতেমা খাতুন ময়না প্রতীক (কলস), মর্জিনা বিবি (ফুটবল), শিখা খাতুন (হাঁস) ও ফিরোজা খাতুন প্রতীক ( প্রজাপতি)। এই উপজেলায় মোট ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৯৩ হাজার ২৭৩ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার রয়েছে ১ লাখ ৪৩ হাজার ৭১৩ জন, মহিলা ১ লাখ ৪৯ হাজার ৫৫৯ জন ও হিজড়া ১ জন।
এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এবারের উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ব্যতীত অন্য কোনো দলের নেতা-কর্মীরা অংশ নেয়নি। ফলে পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে দলীয় নেতাকর্মীরা অবস্থান নেওয়ায় তৃণমূলে বাড়ছে বিভক্তি।
সরেজমিনে ঘুরে জানা যায়, উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে পাঁচজন প্রার্থী ভোটযুদ্ধে অংশ নিলেও আলোচনায় রয়েছেন উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক সুলতান মাহমুদ ও সহ-সভাপতি শাহজামাল সিরাজীর নাম। ফলে এই দুই হেভিওয়েট প্রার্থীর মধ্যেই লড়াইয়ের সম্ভাবনা দেখছেন ভোটাররা। কারণ তাদেরই নিজ নিজ এলাকায় রয়েছে নিজস্ব ভোটব্যাংক। তবে আওয়ামীলীগের বিভিন্ন পর্যায়ে পদ-পদবীতে থাকা নেতাকর্মীরা সুলতান মাহমুদের ওপরই আস্থা রেখে সবাই একাট্টা হয়েছেন। সবমিলিয়ে এই দুই প্রার্থী নিজেদের ভোট ব্যাংক সুরক্ষিত রেখে অন্যের ভোটব্যাংক থেকে ভোটার টানতে নানা কৌশলে প্রচার ও তৎপরতা চালাচ্ছেন প্রার্থী ও তাদের কর্মীরা। নানা প্রতিশ্রুতি নিয়ে ভোটারদের কাছে ছুটছেন।
এবারের ভোটের সীমকরণে একটি চমক আসতে পারে বলেও মনে করছেন দলীয় নেতাকর্মী ও ভোটাররা। সোলায়মান আলী, আবুল কাশেম, ওমর ফারুকসহ বেশ কয়েক ভোটার জানান, শেষ মুহুর্তে এই উপজেলায় ভোটের মাঠ জমে উঠেছে। চেয়ারম্যান পদে মূলত সুলতান মাহমুদ ও শাহ জামাল সিরাজীর মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে। এই দুই প্রার্থীর মধ্যেই তীব্র লড়াই হবে বলেও জানান সোহেল রানা, কামাল হোসেনসহ একাধিক আ.লীগ কর্মী। ভোটাদের ভাষ্য, একতরফা নির্বাচনের কারণে মানুষ ভোটের আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। আগের মতো জমজমাট নেই। তবে উপজেলা নির্বাচনে কিছুটা আমেজ দেখা যাচ্ছে।
জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদ ব্যক্ত করে আনারস মার্কার প্রার্থী উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক সুলতান মাহমুদ বলেন, ছাত্রজীবন থেকে রাজনীতির মাঠে থেকে এলাকার মানুষের সুখে-দুঃখে পাশে রয়েছি। বর্তমানে দলের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করে যাচ্ছি। তাই দলের নেতাকর্মীসহ সবাই তাঁকেই ভোট দেবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
অপরদিকে মোটরসাইকেল মার্কার প্রার্থী উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি শাহজামাল সিরাজীও জয়ের আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, বিগত নির্বাচনে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হই। বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পাই। এছাড়া আমার দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে দলমতের ঊর্ধ্বে থেকে এলাকার উন্নয়নে কাজ করেছি। তাই এবারের নির্বাচনে জনগণ তাঁকেই ভোট দেবেন বলে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
শান্তিপূর্ণ ভোটগ্রহণে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন বলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. সুমন জিহাদী। তিনি বলেন, ভোট শান্তিপূর্ণ করতে সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। প্রশাসন সুষ্ঠু ও অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে বদ্ধপরিকর।