সাব্বির মির্জা, তাড়াশ (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি: দেড় বছর আগে বিএডিসির বিদ্যুৎচালিত সেচ যন্ত্রের লাইসেন্স পেতে আবেদন করেন ৪৩২ জন কৃষক। সেচ কমিটি দেড় বছর ধরে সভা না করায় আবেদনগুলো ঝুলে আছে। তবে কর্তৃপক্ষ বলছে, আবেদনে ত্রুটির কারণে লাইসেন্স দেওয়া যায়নি কৃষকদের।
এদিকে লাইসেন্স না পাওয়ায় সাশ্রয়ী মূল্যে বিদ্যুৎচালিত সেচযন্ত্রের সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন কৃষকরা। চলতি বোরো মৌসুমে তাদের উচ্চমূল্যে ডিজেল কিনে বোরো জমিতে সেচ দিতে হবে। এতে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন তারা।
জানা গেছে, নিয়ম অনুয়ায়ী বিএডিসি কর্তৃপক্ষ লাইসেন্সের আবেদনের সম্ভাব্যতা যাচাই-বাছাই করবে। পরে ১০ সদস্যের সেচ কমিটির সভায় তা পাঠিয়ে দেওয়া হয়। কমিটি লাইসেন্সের অনুমোদন দেয়। লাইসেন্স পাওয়ার পর কৃষকরা বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য আবেদন করেন। একটি বিদ্যুৎচালিত অগভীর সেচযন্ত্রে ৬০ থেকে ৭০ বিঘা জমিতে সেচ দেওয়া যায়। এতে খরচ পড়ে ৫৫ থেকে ৫৬ হাজার টাকা। এই ৫৬ হাজার
টাকার ওপর ২০ শতাংশ ভর্তুকি দেয় সরকার। একই পরিমাণ জমিতে ডিজেলচালিত সেচযন্ত্রে পুরো মৌসুমে খরচ হয় গড়ে ১ লাখ ২৫ থেকে ৩৫ হাজার টাকা। এভাবে ২৮ হাজার বিঘা জমিতে ডিজেলে খরচ পড়ে ৬ কোটি ৮০ লাখের মতো। বিদ্যুৎচালিত সেচে খরচ হয় ৪ কোটি ১৫ লাখের মতো।
ডিজেলের চেয়ে বিদ্যুতে ৪০ থেকে ৪৫ শতাংশ কম খরচ পড়ে। কমিটির কারণে লাইসেন্স না পাওয়ায় আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে হবে বলে জানিয়েছেন কৃষকরা।
নাদোসৈয়দপুর গ্রামের কৃষক মো. খলিলুর রহমান বলেন, দেড় বছর আগে লাইসেন্সের জন্য আবেদন করেছি। কবে পাব জানি না। ঘরগ্রাম হরিরামপুর পাড়ার কৃষক মো. রেজাউল বলেন, লাইসেন্স পাওয়ার পরও বিদ্যুৎ সংযোগ পেতে আবেদন করতে হয়। সেখানেও ২০ থেকে ২৫ দিন সময় লেগে যায়। অথচ এখনও লাইসেন্সের বিষয়টির রফা হলো না।
ঘরগ্রামের আরেক কৃষক বিশা জানান, দেড় বছর ধরে সেচ কমিটির সভা হবে-হচ্ছে বলছেন বিএডিসি অফিসের লোকজন, কিন্তু কাজ হচ্ছে না। এরই মধ্যে আগাম জাতের বোরো ধান লাগানো শুরু হয়ে গেছে। সেচ লাইসেন্স না পেলে সেচের সুবিধাও পাব না। এতে বোরো আবাদে সব কৃষকের উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাবে।
বিএডিসির তাড়াশ অফিসের উপসহকারী প্রকৌশলী মোহাম্মদ মমিনুল ইসলাম বলেন, কতদিন পরপর সেচ কমিটির সভা হবে তার ধরাবাঁধা নিয়ম নেই। আবেদনের চাহিদার ওপর এটি নির্ভর করে। আবেদন বেশি হলে বোরো মৌসুমের আগেই কমিটি একাধিক সভা করে লাইসেন্সের বিষয়টি সমাধান করে।
চার শতাধিক আবেদন জমা পড়লেও কেন লাইসেসন্স দেওয়া হচ্ছে না– এ বিষয়ে ওই কর্মকর্তা বলেন, গত এক বছরে তিনবার উপজেলা সেচ কমিটির সভাপতি (ইউএনও) বদলি হয়েছেন।
বর্তমান সভাপতি যোগদানের পরপরই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দাপ্তরিক কাজে ব্যস্ত ছিলেন। এসব কারণে সভা করা সম্ভব হয়নি। ২০২৩ সালের ২৬ জানুয়ারি উপজেলা সেচ কমিটির সভা হয়। এরপর আর কোনো সভা হয়নি। যে কারণে বিদ্যুৎচালিত সেচের লাইসেন্স পেতে কৃষকদের করা প্রায় ৪৩২টি আবেদনের সুরাহাও হয়নি। এতে চলতি বোরো মৌসুমে সাশ্রয়ী মূল্যের সেচ সুবিধা না পাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
বিএডিসির রায়গঞ্জ জোনের উপসহকারী প্রকৌশলী আনন্দ চন্দ্র বর্মণ বলেন, আবেদনে ত্রুটি ছিল। যাচাই-বাছাই করতে সময় লেগেছে। এ ছাড়া নির্বাচনের কারণে সেচ কমিটির সভাপতি ব্যস্ত ছিলেন। তাই সভা করা সম্ভব হয়নি।
উপজেলা সেচ কমিটির সভাপতি (উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা) মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, শিগগির সেচ কমিটির সভা করে কৃষকদের বিদ্যুৎচালিত সেচযন্ত্রের লাইসেন্স দেওয়া হবে।