গত শুক্রবার রাজধানীর অদূরে নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জে দুদিন অভিযান চালিয়ে রকেটলঞ্চারসহ, এসএমজি, পিস্তল, গ্রেনেড ও বিপুল পরিমাণ গোলাবারুদ উদ্ধার করেছে পুলিশ। ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দলের সহায়তায় পুলিশ এগুলো উদ্ধার করে । প্লাস্টিকের ব্যাগে বিশেষভাবে মুড়িয়ে এগুলো লেকের একটি গাছের সঙ্গে দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছিল। রাজধানী কিংবা দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে অস্ত্র, বিস্ফোরক ও গোলাবারুদ উদ্ধারের ঘটনা নতুন না হলেও রূপগঞ্জের লেক এবং ওই এলাকার মাটি খনন করে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধারের ঘটনা ইতোমধ্যে নানা রহস্যের জন্ম দিয়েছে। দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এমনিতেই নানা কারণে নাজুক। এমন পরিস্থিতির ভেতর বহুল আলোচিত নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের ৫ নাম্বার সেক্টরের ওই লেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গোলাবারুদ কীভাবে আসতে পারে, এমন জিজ্ঞাসা অযৌক্তিক নয়। ঘটনাটি একদিকে যেমন আতঙ্কের তেমনিভাবে রহস্যাবৃত।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যে জানা যায়, পুলিশের অভিযানে রূপগঞ্জের লেক এবং মাটি খনন করে উদ্ধারকৃত অস্ত্র ও গোলাবারুদের মধ্যে রয়েছে, ৬২টি এসএমজি, ৫১টি ম্যাগাজিন, ৫টি পিস্তল, ২টি ওয়াকিটকি, ২টি রকেটলঞ্চার, ৫৪টি গ্রেনেড, বিপুল পরিমাণ গোলাবারুদ, বোমা তৈরির সরঞ্জাম, ডেটোনেটর ও গুলি। তথ্যানুযায়ী, মঙ্গলবার রাতে রূপগঞ্জ উপজেলার দাউদপুরের বগলা গ্রামে শরিফুল ইসলামের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে একটি এম সিক্সটিন রাইফেল উদ্ধার করে পুলিশ। পরদিন বৃহস্পতিবার শরিফুলকে গ্রেপ্তার এবং তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী রূপগঞ্জ উপশহরের ৩ নাম্বার সেক্টরের বস্নু সিটি এলাকায় মাটি খনন করে দুটি এসএমজি এবং পরে উপশহরের ৫ নাম্বার সেক্টরের লেকে তল্লাশি চালিয়ে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গোলাবারুদের সন্ধান পায় পুলিশ। পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ধারণা করছেন, অস্ত্রগুলো আনার পেছনে আন্তর্জাতিক ও দেশীয় চক্রান্ত থাকতে পারে। রূপগঞ্জের এ ঘটনার সঙ্গে গতবছর উত্তরার একটি খাল থেকে বিপুল অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনার যোগসূত্র থাকতে পারে বলেও মনে করছেন তারা। দেশে পুলিশ বাহিনীসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং গোয়েন্দাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে দেশের আনাচে-কানাচে, জঙ্গি সংগঠন গড়ে ওঠা, বিভিন্ন এলাকায় অস্ত্র মজুদের এসব ঘটনা স্বাভাবিকভাবেই দেশের মানুষকে আতঙ্কিত করে তোলে। বর্তমান অবস্থার আলোকে দেশে আরও অবৈধ অস্ত্রের মজুদ রয়েছে কিনাথ সাধারণ মানুষের এমন আশঙ্কারও যৌক্তিকতা অস্বীকার করা যাবে না। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় নিয়মিত অভিযানে প্রায়ই অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধারের ঘটনার কথা জানা যায়। অস্ত্র, গোলাবারুদ উদ্ধার পুলিশের সাফল্য বলে বিবেচিত হলেও রূপগঞ্জের এ ঘটনা উদ্বেগেরও অন্যতম কারণ।
অপরাধ দমনে দেশের আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা বারবার তাদের কঠোরতার কথা বলে আসছে। এর প্রমাণও মেলে জঙ্গিবিরোধী অভিযানের সফলতা এবং অস্ত্র উদ্ধারের বিভিন্ন ঘটনা থেকে। এরপরও প্রশ্ন ওঠা অমূলক নয় যে, পুলিশ যেহেতু তাদের কঠোর অবস্থানের কথা বারবার বলে আসছে সেখানে তাদের চোখ এড়িয়ে দুর্বৃত্তচক্র কীভাবে অস্ত্রগুলো জড়ো করল? আর এর দায়ই বা কার? আমরা মনে করি, পুলিশেরই কর্তব্য হওয়া উচিত অস্ত্র মজুদের প্রকৃত রহস্য দ্রুত উদ্ঘাটন করা। কীভাবে কারা এসব অস্ত্র ও গুলি সেখানে মজুদ করেছেথ তার রহস্যভেদের পাশাপাশি জড়িতদের আইনের আওতায় আনাও জরুরি।
সর্বোপরি বলতে চাই, দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এখনো নাজুক। জননিরাপত্তা এখনো নিশ্চিত করা যায়নি। জঙ্গি তৎপরতার কারণে সাধারণ মানুষ বর্তমানে চরম উদ্বেগ-আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে। দেশে যে অবৈধ অস্ত্রের মজুদ রয়েছে তাও বহুবার আলোচনায় এসেছে। পুলিশের অভিযানে মাঝেমধ্যে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার হলেও সংশ্লিষ্টরা যে অবৈধ অস্ত্রের আমদানি বন্ধে ভূমিকা রাখতে ব্যর্থ, সাম্প্রতিক রূপগঞ্জের ঘটনাও এর একটি দৃষ্টান্ত হতে পারে বলে ধারণা জন্মে। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, এক বছর হলেও উত্তরা খালে অস্ত্র মজুদের রহস্য এখনো উদ্ঘাটন করতে পারেনি পুলিশ। এটা কি তাদের ব্যর্থতা নয়? অথচ অপরাধ দমনে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর ভূমিকা ও দায়িত্ব হওয়া উচিত অপরিসীম এবং যথাযথ। আমাদের প্রত্যাশা, রূপগঞ্জের অস্ত্ররহস্য উন্মোচন এবং জড়িতদের গ্রেপ্তারের মধ্যদিয়ে সংশ্লিষ্টরা তাদের সক্ষমতার স্বাক্ষর রাখবেন।